ঢাকা শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
ফায়ার ফাইটার মিঠু ও নিপনের মৃত্যুতে দিশেহারা স্ত্রী সন্তানরা
  • পলাশ চাকমা, রাঙামাটি
  • ২০২২-০৬-০৬ ১৫:২৩:০৬
সমাপ্তি দেওয়ান। একজন গৃহিণী। স্বামী ও কলেজ পড়ুয়া এক মেয়ে নিয়ে ভালোই চলছিল তাঁর সংসার। কিন্তু ৪ জুন রাতের সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণে বদলে যায় তাঁর জীবন। সে দূর্ঘটনায় তাঁর স্বামী ফায়ার ফাইটার মিটু দেওয়ান নিহত হন। পরিবারের কর্তাকে হারিয়ে দিশেহারা তার স্ত্রী সমাপ্তি। শোকাক্রান্ত কন্যাকে নিয়ে দূঃচিন্তা তার। একমাত্র কন্যার উজ্বল ভবিষ্যতের জন্য সাহায্য চান সরকারের কাছে। সমাপ্তি দেওয়ান বলেন, আমার স্বামী ১৯৯৩ সালে চাকুরীতে যোগ দেন। দূর্ঘটনার দিনই তিনি ১২ দিনের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে যান। আমি আমার স্বামীর উপর নির্ভরশীল। আমার মেয়ে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। মেয়েকে তো মানুষ করতে হবে। মানুষ করার জন্য তো কিছু একটা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমার কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। আমার মেয়ের জন্য হলেই হবে। আমার মেয়ে উপযুক্ত হলে সে যাতে একটা চাকুরি পায় সরকারের কাছে এটি আমার অনুরোধ এবং দাবি। একই অবস্থা সেদিনে নিহত নিপন চাকমার পরিবারের। মৃত্যুর আগে দুই কন্যা সহ স্ত্রীকে রেখে যান নিপন চাকমা। তার দুই মেয়েই পড়াশুনা করছে। নিপনের স্ত্রী সুমনা দেওয়ান জানান, দূর্ঘটনার দিন রাতেও তার স্বামীর সাথে কথা হয়েছিল। অসুস্থ থাকায় ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলেন তার স্বামী, এটিই ছিলো তার সাথে শেষ কথা। নিপনের বড় মেয়ে অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর। তার স্বপ্ন ছিলো মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। তাই সরকার যেন তাদের স্বচ্ছলভাবে চলার জন্য সুযোগ সুবিধা দেয় সরকারের নিকট এই দাবি জানান তিনি। এর আগে নিহত দুই ফায়ার ফাইটারের মরদেহ সোমবার রাঙামাটি পৌছালে ফায়ার ষ্টেশনের কার্যালয়ের সামনে নিহত দুই ফায়ার ফাইটারকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন রাঙামাটি ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা। নিহতদের ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান। পরে তাদের স্ব-স্ব বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। লিডার মিঠুর বাড়ি শহরে পশ্চিম ট্রাইবেল আদাম ও লিডার নিপনের কলেজ গেইট এরর মন্ত্রী পাড়ায়। নিহতের লাশ বাসায় পৌছালে পরিবারের কান্নায় পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে উঠে। শেষ দেখা দেখতে আসেন তাদের স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, নিহত নিপন কিছুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে রাঙামাটি থেকে সীতাকুন্ডে যোগ দেন। অন্যদিকে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে কর্মরত ছিলেন মিঠু। পদোন্নতি পেয়ে তিনিও যোগ দেন সীতাকুন্ডে কুমিরায়। মিঠু দেওয়ানের ছোট ভাই বিটু দেওয়ান বলেন, ভাইয়ের দেহটি শনাক্ত করতে বেশ কষ্ট হয়েছে। মাথা পুড়ে গেছে। পা পুড়ে গেছে। শরীর দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটা আমার ভাই। এদিকে নিপনের ছোট ভাই খোকন চাকমা বলেন, আমার ভাই নিপনকে দেখা মাত্র আমি চিনেছি। নিজেদের ধর্মীয় রীতি অনুসারে নিপনকে আসামবস্তি শ্বশানে এবং মিঠুকে রাঙাপানি শ্বশানে দাহ করা হয়। শেষকৃত্যের জন্য জেলা ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, শনিবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৯ ফায়ার সার্ভিস কর্মী (ফায়ার ফাইটার) সহ ৪৯জন নিহত হন। তাদের মধ্যে দুইজন ফায়ার ফাইটার রাঙ্গামাটির মিঠু দেওয়ান (৫২) ও নিপন চাকমা (৪৭)। এর মধ্যে মিঠু দেওয়ান ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা শাখা আর নিপন চাকমা সীতাকুণ্ড শাখায় লিডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে  একজনের মৃত্যু
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে সকল সুবিধা দিত হাসিনা:  আলতাফ হোসেন চৌধুরী