ঢাকা শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
বালুখেকো চেয়ারম্যান সেলিম খান আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিস্কার
  • শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর
  • ২০২২-০৬-০৪ ০৮:০২:৩৫
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনকারী ও চাঁদপুর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে কেলেংকারিসহ বিভিন্ন অপমর্কের মাধ্যমে দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপরাধে বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে। চেয়ারম্যান সেলিম খান চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মিপুর মডেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ৪ জুন শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নির্দেশনায় এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাথে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপরাধে সেলিম খানকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারীকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল জানান, শনিবার অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাথে পরামর্শক্রমে ১০নং মডেল লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে বহিস্কার করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রব ভূইয়া, আব্দুর রশিদ সর্দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটোয়ারী, মঞ্জুর আহমেদসহ কার্যনির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। প্রসঙ্গত, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের মেঘনা পাড়ে একটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যান সেলিম খান, তার ছেলেমেয়েসহ অন্যান্য জমির মালিকরা অস্বাভাবিক মূল্যে দলিল তৈরি করেছেন। ফলে ওই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা। জমির অস্বাভাবিক মূল্য দেখে জেলা প্রশাসক তদন্ত করলে বেরিয়ে আসে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকা লোপাটের পরিকল্পনার তথ্য। ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে সাবেক জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ উল্লেখ করেন, ওই মৌজায় জমির মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কানুনগো ও সার্ভেয়ারদের সমন্বয়ে ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা যায়, অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত ও পূর্বে অধিগ্রহণ করা দাগগুলোর জমির হস্তান্তর মূল্য অস্বাভাবিক। এ ছাড়া এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ায় জনস্বার্থ ও সরকারি অর্থ সাশ্রয়ে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যে সৃজন করা দলিল ছাড়া ১১৫ নম্বর লক্ষ্মীপুর মৌজার অন্যান্য সাফ কবলা দলিল বিবেচনায় নিয়ে ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা অধিগ্রহণের প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়। উচ্চমূল্যের সেই দলিলগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রাক্কলন তৈরি করলে সরকারের ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা ক্ষতি হতো। এ ছাড়া মৌজা মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ জনগণ ভূমি হস্তান্তরসহ নানা বিষয়ে সমস্যায় পড়তো। এদিকে, সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের পক্ষে অবস্থান নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ একটি অংশ। সরকারি অর্থ লোপাট চেষ্টার পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। অপরদিকে, চাঁদপুরের নদী অঞ্চলে শত শত ড্রেজার বসিয়ে গত কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এমনকি অনুমতি ছাড়াই চেয়ারম্যান বছরের পর বছর বালু বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দীর্ঘদিন বালু ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে নদীভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনের দাবির প্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিআইডব্লিউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও চিঠির আলোকে সরকারি সম্পদ ও ইলিশ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। ওই চিঠির পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে ভূমি মন্ত্রণালয়ও। এরই মধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ও চেয়ারম্যান সেলিম খানকে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন নদীপাড়ের ভাঙনকবলিত মানুষ। তবুও বালু উত্তোলনের জন্য উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। যা সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়। এর ফলে চূড়ান্তভাবে বন্ধ হয় তার অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন। এছাড়া গত ৬ এপ্রিল সেলিম খানের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুমিল্লার সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাতের নেতৃত্বে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের সুযোগে ৩৬০ কোটি টাকা লোপাটের চেষ্টা ও অনেক বছর ধরে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটি এখন আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। তথ্য সংগ্রহ শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে  একজনের মৃত্যু
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে সকল সুবিধা দিত হাসিনা:  আলতাফ হোসেন চৌধুরী