দিনাজপুরে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৪০ জন এতিম নববধূর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা
- সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর
-
২০২২-০৫-২৭ ০৮:২১:২০
- Print
দুপুর ১২ টায় শুক্রবার, একের পর এক লাল বেনারসি শাড়ি, লাল উনার ঘোমটা, নাকের নোলক পরে একে একে ৪০ জন নববধূ ও তাদের হলুদ রঙের পাঞ্জাবি আর পায়জামা মাথায় টিকলি পরা ৪০ বর (স্বামী) হাত ধরে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে দিনাজপুরের দ্য গ্রিন ভিউ কমিউনিটি সেন্টারে।
নববধূ ও তাদের পরিবারের আত্মীয়-স্বজন। বর ও তাদের পরিবারের আত্মীয়-স্বজন কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত হন। নববধূ তার বরের হাত ধরেই চলে এসেছে দ্য গ্রিন ভিউ কমিউনিটি সেন্টারে আগে থেকেই নববধূ এবং তার বরকে বরণ করা হয় ।
দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের জন্য আয়োজন চলছে সকাল থেকে। ১৫ শত লোকের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে দিনাজপুর সদর আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং জেলা প্রশাসক খালিদ মাহমুদ জাকি ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত হতে থাকে নববধূ এবং বর কে বিয়ের সাজে সাজিয়ে নববধূ এবং বরকে পাশাপাশি বসিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনের সুখী-সমৃদ্ধ কামনা করেন এবং বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুর ২ টায় দিনাজপুর গ্রিনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাব শিশু নিকেতন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে ৪০ জন নিবাসী ( এতিম) মেয়েদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়েছে।
বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাদেরকে সংবর্ধিত করা হয়েছে তারা একসময় দিনাজপুর শিশু নিকেতন এতিমখানায় বড় হয়েছে।
আজ তাদের এই বিবাহোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া ৪০ জন এতিম মেয়ে যৌতুক বিহীন ভাবে বিভিন্ন পেশার বরদের হাতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
শিশু নিকেতন হোম (এতিমখানা) বড় হওয়া ডলি, শাহনাজ, পিংকি , রাইসা রামিশা আজ বধু সেজে বরের ঘরে চলে যাচ্ছে। জীবনের ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারালেও আজ তারা স্বামীর ঘরে নতুন বাবা-মা সংসার স্বামী এবং স্বামীর আত্মীয়স্বজনকে কাছে পেয়ে তারা তাদের ছোটবেলার যে মা-বাবাকে হারিয়েছিল সেই কথাটি আজ ভুলে গিয়ে।
৪০ জন নববধূ ও তাদের বরকে উপহার হিসাবে একটি করে নতুন বাইসাইকেল, একটি করে হাত সেলাই মেশিন, একটি করে কোরআন শরীফ সহ লেপ তোষক বালিশ পরিবারের বাসন-কোসন সহ ৩৫ প্রকার উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয় যা তাদের সংসার জীবনে সহায়তা করবে।
নববধূ ডলি আক্তার বলেন কিছুদিন আগে আমার বিয়ে হয়েছে আমার স্বামী এবং আমার স্বামীর পরিবারের লোকেরা আমাকে অত্যন্ত ভালোবেসে। আমিও তাদের নিজের পরিবারের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছি কারণ ছোটবেলায় যেহেতু আদর-ভালোবাসা তেমন পাইনি আজ স্বামীর বাড়িতে গিয়ে সেই না পাওয়া ভালোবাসা পেয়ে আজ অনেক খুশি হয়েছি।। তারপরেও আজকে আরো বেশি খুশি হয়েছি আমার মত যারা একসময় একই এতিমখানায় মানুষ হয়েছি তাদেরও বিয়ে হয়েছে তাদের বরসহ তারাও ওখানে আমার মত নববধূ আর আমার স্বামীর মতো তাদেরও বর নতুন সাজে সেজেছে অনেক ভালো লাগছে আজকের দিনটি।
নববধূ পিংকি বলেন, ছোটবেলায় একই এতিমখানায় মানুষ হয়েছি। নতুন পরিবেশের সাথে প্রথম প্রথম খাপখাইয়ে নেওয়াটা একটু কষ্টকর ছিল। পরবর্তীতে স্বামীর পরিবারের লোকজনদের সৌজন্যমূলক ব্যবহারের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে খুব দ্রুত তাদের পরিবারের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছি।
বর আবু রায়হান বলেন আমি জীবনে মনে মনে যাকে চেয়েছিলাম আমার স্ত্রী এতিম খানায় মানুষ হলেও তার ব্যবহার এবং অন্যান্য গুনে আমি মুগ্ধ হয়েই তাকে ভালবাসার দিচ্ছি। বাকি জীবন যেন তাকে নিয়েই চলতে পারি। অনেক ভালো আছি আপনাদের দোয়া প্রত্যাশী করছে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর বলেন আমাদের সমাজে যারা অসহায় এতিম রয়েছেন তাদেরকে মূল স্রোতের সাথে একত্রিত করে। তাদের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি তাদেরকে দক্ষ করে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি এই প্রশিক্ষণ তারা গ্রহণ করলে তারা সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ তথা নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
প্রধান অতিথি বলেন ইকবালুর রহিম বলেন দিনাজপুর জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বর্তমান সরকার প্রতিবছর ১৮ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে আসছে। এতে করে যারা সমাজের অসহায় দুস্থ তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্কিল দক্ষতা বৃদ্ধির করলে তারাও আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশ এবং জাতির উন্নয়নে কাজ করবে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি মোজাফফর হোসেন দিনাজপুর সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক দিনাজপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি আসিস দেবাশীষ চৌধুরী দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মর্তুজা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম প্রমুখ।