৪৪ বছর পর পৈতৃক ভিটা ফিরে পেলে নির্মল রায়
- মজিবুর রহমান খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
-
২০২২-০৫-২৪ ১০:১৮:১৫
- Print
প্রায় ৪৪ বছর পর নিজ পৈতৃক ভিটা ফিরে পেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কান্দিপাড়ার বাসিন্দা নির্মল রায়৷ আজ মঙ্গলবার (২৪ মে) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আদালতের রায় অনুযায়ী সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাঈফ উল আরেফিন নির্মল রায়কে তার ৫ শতাংশ জায়গায় বাড়িটি বুঝিয়ে দেন। নির্মল রায় ওই এলাকার মৃত জগবন্ধু রায়ের একমাত্র ছেলে।
নির্মল রায় বলেন, ১৯৭৮ সালে আমার পৈতৃক ভিটা স্থানীয় হামদু মিয়া ও রুকুনুদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি যোগসাজশ করে ভূমি অফিসের রেকর্ডে অর্পিত সম্পদ হিসেবে লিপিবদ্ধ করেন। পরে তারা ভূমি অফিস থেকে সরকারি জায়গা হিসেবে আমার পৈতৃক এই ভিটা লিজ নেয়। সে সময় তারা দাপট খাটিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় আমাদের জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দখলে নেন। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে শাহজাহান ভূইয়া নামের এক ব্যক্তিকে এই বাড়ি লিজ এনে দেয়। ২০১২ সালে সরকার অর্পিত সম্পদের যারা ওয়ারিশ আছে, তারা পাবেন মর্মে একটি নির্দেশনা জারি করেন। এরপরই আমি ২০১২ সালে পৈতৃক ভিটা ফিরে পেতে রাষ্ট্রকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করি। ২০১৫ সালে আদালত আমার পক্ষে রায় প্রদান করেন। আদালতের এই রায়ের বিপক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। ২০১৭ সালে এই আপিলের রায়েও আদালত আমার পক্ষে দেন। ২০১৯ সালে আপিলের এই রায়ের বিরুদ্ধে লিজ নেওয়া শাহজাহান ভূইয়ার স্ত্রী পারুল বেগম হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। একই বছর তারা আদালতে আবার রিভিউ আবেদন করলে সেই রিভিউও খারিজ করে দেন আদালত। আদালতের রায় পাওয়ার পরও পেড়িয়েছে দীর্ঘ ৩ বছরে। নিজের পৈতৃক বাড়ি ফিরে পাচ্ছিলাম না। রায়ের আদেশ পাওয়ার পরও স্থানীয় ভূমি অফিস টালবাহানা করছিল। দখল পেতে আমরা আবারও আদালতের দারস্থ হই। ঘটনাটি আমরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাতকে জানিয়ে তার সহায়তা কামনা করি। তিনি আমাকে এবং আমার স্ত্রী জেলা যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি জয়া রায়কে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে নিয়ে যান এবং বিস্তারিত খুলে বলেন। এসময় আমরা জেলা প্রশাসককে আদালতের রায়ের কপি দেখায়।
এরপরই জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলম সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করতে নির্দেশনা দেন। এরই প্রেক্ষিতে আজ এসিল্যান্ড মহোদয় আদালতের দখলদার পারুল বেগমকে উচ্ছেদ করে আমাকে ৫শতাংশ বাড়ি বুঝিয়ে দেন। উচ্ছেদে যাওয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাঈফ উল আরেফিন বলেন, আদালতে রায় বাস্তবায়ন করেছি। দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন, আমি শুধু একটি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। অবৈধ ভাবে এই পরিবারটিকে বের করে দিয়ে ঘরবাড়ি দখলে নিয়েছিল একটি চক্র। আমি এজন্যে জেলা প্রশাসক মো: শাহগীর আলমকে ধন্যবাদ জানাই। তার একান্ত সহযোগিতায় আদালতের রায় দীর্ঘদিন পর বাস্তবায়ন হলো। তার কড়া নির্দেশে দ্রুততার মাথে কাজটি হয়েছে। আমাদের নেতা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি-ও একাজে সহায়তা করেছেন।