রাঙ্গামাটি জেলায় সারি সারি উঁচু-নিচু পাহাড়। ন্যাড়া পাহাড়ের ঢালে ঢালে নানান জাতের ফসলের পাশাপাশি স্থানীয় চাষিরা বিভিন্ন জাতের কলা চাষ করছেন। পাহাড়ি জমির মাটি ও জলবায়ু কলা চাষের অনুকুলে থাকায় পাহাড়ের ঢালে ঢালে কলা বাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় চাষিরা।
স্থানীয় কলা চাষিরা জানান, চাঁপা, বাংলা, সাগর,সূর্যমূখী এসব দেশীয় কলা চাষের প্রচুর সম্ভাবনা থাকায় পাহাড়ে কলা চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা পাহাড়ের কলা চাষীদের জন্য আরো বেশি সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের ¯^নির্ভরতায় অভাবনীয় সাফল্য বয়ে আনবে এবং পার্বত্য অঞ্চলে কৃষি অর্থনীতি নতুনদ্বার খুলবে।
তারা আরো জানান,বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপকভাবে কলা চাষের দিকে ঝুঁকছে চাষীরা। বর্তমানে দেশীয় উন্নত জাতের কলা চাষ করে প্রতিটি কলাগাছ থেকেই আশাতীত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। জেলার প্রতিটি বাজারে বোট ভর্তি উন্নত জাতের কলা নিয়ে চাষীরা ভীড় জমাচ্ছে, এমন দৃশ্য প্রতিটি হাটবারে চোখে পড়ার মতো। দামও হাতের নাগালের মধ্যেই থাকায় পাইকারী ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি করে জেলার বাইরে বাজারজাত করছে। তবে রাঙ্গামাটি জেলায় কোন হিমাগার না থাকায় কলা ¯^ল্পমূল্যে বিক্রি করে দিতে হয়। এতে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কলা চাষিরা। রাঙ্গামাটি জেলায় একটি হিমাগার নিমার্ণের দাবি জানান চাষিরা।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মোঃ মিজানুর রহমান মন্টু জানান, রাঙ্গামাটির বাংলা ও চাম্পা কলা সুন্দর, সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। চট্টগ্রামে এর ভালো চাহিদা রয়েছে। তাই প্রতি মাসে রাঙ্গামাটি থেকে ৩-৪ ট্রাক কলা নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, শীতকালে ব্যবসা একটু লাভে- লোকসানে চলছে। তবে গরম কালে কলার চাহিদা বেশি থাকে। ফলে ঐ সময় ভালো লাভ করা যায়।
বনরূপার সমতা ঘাটে কলা বিক্রি করতে আসা চাষী রবি মোহন চাকমা ও রিতিশ চাকমা জানান, পাহাড়ে উৎপাদিত কলা বাজারে আনা কষ্টসাধ্য এবং খরচও বেশি। করোনার পর থেকে আগের বছর গুলোর মতো ভালো দাম পাচ্ছি না। তারা আরো জানান, জেলায় কোন হিমাগার না থাকায় কলা ¯^ল্পমূল্যে বিক্রি করে দিতে হয়। এতে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কলা চাষিরা। রাঙ্গামাটি জেলায় একটি হিমাগার নিমার্ণের দাবি জানান চাষিরা।
রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১১ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। কলার উৎপাদন হয়েছে ২লক্ষ ৪২ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন। ওজন বিবেচনায় উৎপাদিত কলা প্রতি ছড়া (কাঁধি) গড়ে ১৫০ টাকা হিসেবে বিক্রি হলে বছরে শতকোটি টাকার ব্যবসা হয়।
রাঙ্গামাটি জেলা কৃষিবিভাগ সিনিয়র কর্মকর্তা মোঃ সেলিম মিয়া জানান, রাঙ্গামাটি জেলায় কলার যা উৎপাদন হয়, এরমধ্যে থেকে শতকরা ১০ ভাগ ঘাটতি থাকে। তারমধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ বাংলা কলা এবং শতকরা ৫০ ভাগ চাঁপা কলা বিক্রি হয়। যদি উৎপাদন সঠিক থাকে তাহলে রাঙ্গামাটি জেলা থেকে বছরে ৩৫০ কোটি থেকে ৪৫০ কোটি টাকার কলার বাণিজ্য হয়।
রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, কলা চাষিদের কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন পরামর্শ এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়াও পাহাড়ে উচ্চফলনশীল জাতের ফলের আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি দপ্তর থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, রাঙ্গামাটি জেলায় বিভিন্ন মৌসুমে কলা,আনারস,কাঁঠাল ও আম সহ নানা রকমের ফলের ভালো উৎপাদন হয়। তবে জেলায় এসব ফলমূল সংরক্ষণের জন্য কোন হিমাগার না থাকায় চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। তাই কাঁচামাল সংরক্ষণে একটি হিমাগার নিমার্ণ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।