দিনাজপুরের বিরলে অ্যালুইটি জাতের আলুর চাষ করে আলুর বীজ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছেন কৃষক মতিউর রহমান মতি। এই প্রথম জেলার বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান মতি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ১০ একর জমিতে আয়ারল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত নতুন এ্যালুইটি জাতের আলুর বীজ উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নভেম্বর মাসের ২৮/২৯ ইং তারিখে দুই দিনে এ্যালুইটি জাতের আলু জমিতে বোপন করেন। এখন আলুর বয়স প্রায় ৫০ দিন আলু আসতে শুরু করেছে। আলুর বয়স ৬০ দিন হলেও আলুর ওজন বাড়তে থাকে। ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে আলু মাড়াই করা যাবে। একটি আলু গাছে ১৮ থেকে ২২ টি করে আলু ধরেছে। প্রতিটি আলু ৫০ গ্রাম থেকে ২শত গ্রাম পর্যন্ত ওজন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আলুর গায়ের রং লাল যা উত্তরাঞ্চলের মানুষের নিকট জনপ্রিয় হতে উঠবে।
কৃষক মতিউর রহমান বলেন অন্যান্য আলু চাষের মতই জমি চাষাবাদ করতে হয়েছে। এক একর জমিতে এই আলু চাষ করতে খরচ ধরা হয়েছে একলক্ষ টাকা। বিএডিসি কর্তৃপক্ষ এ্যলুইটি জাতের আলু বীজ করার জন্য পার কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে ক্রয় করবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। তিনি আরোও বলেন আশা করছেন এতে করে তার প্রতি একর জমি থেকে দেড় লক্ষ্যাধিক টাকা আয় হতে পারে বলে ধারণা করেন ।
কৃষক মতিউর রহমান আরোও বলেন, বিএডিসি কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা এ্যালুুইটি জাতির আলু চাষ করার পর থেকে গাছের তরতাজা চেহারা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় তেমন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। আলুর রোগ ব্লাইন্ড কম হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম কীটনাশক প্রয়োগ করতে হচ্ছে এবং এই আলুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম হবে এবং লাভ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষক মতিউরের ভাতিজা মাসুদ রানা জানান এ্যালুইটি জাতির আলু একটি সম্ভাবনাময় আলু হবে। কারন অন্যান্য জাতের আলুর তুলনায় এই আলুতে ফলন অনেক বেশি হবে এবং কৃষকেরা বেশি লাভবান হবে। এক হেক্টর জমিতে ৪৩ টন আলু উৎপাদন হবে যা অন্য জাতের আলুর উৎপাদনের প্রায় অর্থেকের চেয়ে বেশি উৎপাদন। আমরা আগামী বছর আরোও বেশি জমিতে এই এ্যালুইটি জাতের আলুর চাষ করব।
দিনাজপুর বিএডিসি উপ-পরিচালক আবু জাফর মোহাম্মদ হেমায়েতল্লাহ বলেন, এ্যালুইটি জাতের এই আলুর চাষ অত্যন্ত লাভজনক হবে। এই জাতের আলু চাষের প্রতি কৃষকরা ঝুঁকে পড়বে কারণ আমাদের দেশে আলু চাষে এখন দিনে দিনে অনেক কৃষকেরা আগ্রহী উঠছে। যেহেতু এক হেক্টর জমিতে ৪৩ টন আলু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দেশের উদ্বৃত্ত আলু যদি রপ্তানি করা যায় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরো সমৃদ্ধ হবে মনে করি।
দিনাজপুর বিএডিসির যুগ্ম-পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, উত্তরাঞ্চলে এ্যালুইটি জাতের আলুর চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আয়ারল্যান্ড থেকে সরকার এই জাতের আলুটি আমদানি করেছে। কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করছে এবং উৎপাদিত এই জাতের আলু আবার বীজ হিসাবে আগামীতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। এতে করে কৃষকেরা এই জাতের আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।