ঢাকা বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪
বিপৎসীমার ওপরে ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপূত্রের পানি
  • নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • ২০২০-০৬-২৮ ০২:২২:৫২

কুড়িগ্রামে ধরলা, দুধকুমার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের শনিবার বিকাল ৩টার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৩১ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৬ সে.মি., নুনখাওয়া পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি ৩১ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৮ সে.মি. ও চিলমারী ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি ৩৩ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪২ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, কাউনিয়া ঘাট পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ২৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল অব্যাহত থাকায় জেলার ২৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ শত হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন, চিনা ও শাকসবজির ক্ষেত। এছাড়া নদী ভাঙনে ভিটে-মাটি হারিয়েছে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার।
সদর পৌরসভার সওদাগরপাড়া গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় পার্শ্ববর্তী রাস্তায় চৌকির ওপর রাত কাটাচ্ছে অনেক পরিবার

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরযাত্রাপুর গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। করোনার কারণে এমনিতেই কাজকর্ম নেই, তার ওপর বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বানভাসিরা।

ওই গ্রামের আবুল হোসেন (৪০) জানান, চরের আবাদ সব নষ্ট হয়ে গেছে। বাড়ির চারপাশে যারা সবজি ফলিয়েছেন, সেগুলো এখন পানিতে তলিয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার সওদাগরপাড়া গ্রামের শোভা বেওয়া (৭০) বলেন, 'ধরলা নদীতে বন্যার কারণে বাড়িতে হাঁটু পানি হওয়ায় গত চার দিন ধরে রাস্তার ওপর চৌকিতে পরিবারের আট সদস্য নিয়ে রাত কাটাচ্ছি। রান্না করার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় কোনো রকমে এক বেলা খাচ্ছি।' একই অবস্থা বিরাজ করছে আরও অনেক পরিারের।

সওদাগরপাড়ার মোজাম্মেল আলম (৪৯) বলেন, 'বাড়িতে ধরলার বন্যার পানি প্রবেশ করায় আমার পরিবারের ১৮ সদস্য নিয়ে রাস্তায় পলিথিনের সেড তৈরি করে রাত কাটাচ্ছি।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের উত্তর নওয়াবশ গ্রামের সাজিনা বেগম (৩৩) ও তার স্বামী মহুবর রহমান (৩৮) জানান, তারা প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আড়াই বিঘা জমিতে পটল আবাদ করেছেন। ফলন খুব ভালো হয়েছিল। পটল সদ্যই বিক্রি করাও শুরু করেছিলেন। প্রায় ৬০ হাজার টাকার পটল ইতোমধ্যেই বিক্রি করেছেন। তিন দিন আগে হঠাৎ ধরলা নদীর বন্যায় পটল ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এখন পটল গাছে পচন শুরু হয়েছে এবং কয়ক দিনের মধ্যে সমস্ত ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে। 'যদি বন্যার পানি পটল ক্ষেতে না উঠত, তাহলে আরও প্রায় দুই লক্ষ টাকার পটল বিক্রি করতে পারতাম,' বলেন মহুবর।

বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের প্রচণ্ড ভাঙনের মুখে পড়েছে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, থেতরাই, বুড়াবুড়ি ও বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের নদী পাড়ের লোকজন এবং রৌমারী উপজেলার কর্ত্তিমারী, চিলমারীর ও নয়ারহাট ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের মানুষ।
সওদাগরপাড়া গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি

এছাড়া ধরলা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের নদী পাড়ের বাসিন্দারা। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্রের চর মশালের চরের বাসিন্দা মুসা মিয়া ও ভগবতির চরের জাহাঙ্গীর আলম জানান, চরের অধিকাংশ ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে। অনেকেই উঁচু ভিটায় থাকলেও নিচু ভিটার বাসিন্দারা নৌকা ও চৌকির ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্র ও স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান তারা।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ভাঙন কবলিতদের সরিয়ে আনতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও শুক্রবার ভাঙন কবলিত উপজেলাগুলোতে ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু জন্মেছিল বলেই জন্মেছে এ দেশ -হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি
অপ্রতিরোধ্য বাজার সিন্ডিকেট: মজুতের শাস্তি আটকে আছে বিধিতে
ডাইফ সেবা সপ্তাহ শুরু আজ
সর্বশেষ সংবাদ