ঢাকা শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
ওমানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে টিকে রইল বাংলাদেশ
  • স্পোর্টস প্রতিবেদক
  • ২০২১-১০-১৯ ১৪:৩৮:০৫

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাঁচা মরার লড়াইয়ে ওমানের বিপক্ষে হারের শঙ্কায় ভুগছিল বাংলাদেশ। শেষ দিকে সাইফউদ্দিন, সাকিব ও মোস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের তোপে আর টিকতে পারেনি মরুরাজ্যের দেশটির ব্যাটাররা।


আজ মঙ্গলবার বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানকে ২৬ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। শুরুতে ব্যাট করে সব উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান তুলতে পারে ওমান। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রথম ম্যাচে স্কটিশদের কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে আসর শুরু করেছিল ওমান। আর স্কটল্যান্ড এরইমধ্যে বাংলাদেশ ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে মূল পর্ব প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে।

নিজদের পরের ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির মোকাবিলা করবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচ তো জিততে হবেই, সেই সঙ্গে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ওমানের হারও কামনা করতে হবে টাইগারভক্তদের। অবশ্য নেট রান রেটও রাখতে পারে বড় ভূমিকা। কারণ ওমানের নেট রান রেট এখনও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। ফলে সমান সমান জয় ও হার নিয়েও পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে অবস্থান ওমানের। আর বাংলাদেশ আছে তিনে। চারে থাকা পিএনজির এরইমধ্যে বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে।  

বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তাসকিন আহমেদের করা প্রথম ওভারে ১২ রান তুলে ফেলেছিল ওমান। তবে পরের ওভারের প্রথম বলেই ব্রেক থ্রু এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। ওমানি ওপেনার আকিব ইলিয়াসকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই বাঁহাতি পেসার। আকিব অবশ্য রিভিও নিয়েছিলেন, কিন্তু তাতেও সিদ্ধান্ত বদলায়নি। ইলিয়াস বিদায় নিয়েছেন ৬ রান করে।

এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কাশ্যপ প্রজাপতিকে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের ক্যাচ বানিয়ে ফেরালেন 'দ্য ফিজ'। ড্রেসিং রুমের পথে হাঁটার আগে প্রজাপতির ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২১ রান। তবে এরপর অধিনায়ক জিসান মাকসুদকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জতিন্দর সিং। দুজনের জুটিতে যোগ হয় ৩৪ রান।  

তবে ওমানিদের রানের গতির রাশ টেনে ধরেন মেহেদি হাসান ও সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদির ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন স্বাগতিক দলের অধিনায়ক জিসান মাকসুদ (১২)। পরের ওভারে ফিফটির দিকে ছুটতে থাকা জতিন্দর সিংকে আউট করে স্বস্তি ফেরান সাকিব। ওমানি ওপেনার বিদায়ের আগে ৩৩ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেছেন ৪০ রান।  

জতিন্দর বিদায় নিতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বাংলাদেশের হাতে। ওমানের রানের গতিও যায় কমে। এর মধ্যে ১৬তম ওভারে ছয়ে নামা সন্দীপ গৌদকে (৪) বিদায় করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তবে ওমান শিবিরে আসল ধাক্কাটা দেন সাকিব। নিজের চতুর্থ ওভারে তিনি পর পর দুই বলে আয়ান খান (৯) ও নাসিম খুশিকে (৪) ড্রেসিং রুমের পথ দেখান। দুজনের ক্যাচই ধরেন লং-অফে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওই ওভারে সাকিব খরচ করেন মাত্র ৩ রান।

চাপে পড়ে যাওয়া ওমানের লেজ মুড়ে দেওয়ার কাজটা সেরে রাখেন মোস্তাফিজ। নিজের তৃতীয় ও ইনিংসের ১৮তম ওভারে তিনি মাত্র ৫ রানে নেন ২ উইকেট। ততক্ষণে লক্ষ্যটা ওমানের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত বড় জয়ই তুলে নিল মাহমুদউল্লাহরা।

বল হাতে ৪ ওভারে ৩৬ রান খরচে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন মোস্তাফিজ। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ের পর দুর্দান্ত বোলিং করেছেন সাকিব। ৪ ওভারে ২৮ রানে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচে ১ উইকেট পেয়েছেন সাইফউদ্দিন। অন্যদিকে ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচ করে ১ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন মেহেদি।

এর আগে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটে ভর করে সব উইকেট হারিয়ে ১৫৩ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের বদলে একাদশে সুযোগ পেয়ে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন নাঈম। তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত এক ফিফটি। সাকিব ফিফটির দেখা না পেলেও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে ইনিংস মেরামতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই দুজনের জুটিই মূলত বাংলাদেশ ইনিংসের প্রাণ।  

মাসকটের আল আমেরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টসে জিতে শুরুতে ব্যাটিং বেছে নেন টাইগার দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে আসে বড় পরিবর্তন। তিনে সাকিবের জায়গায় নামেন মেহেদি হাসান। চারে সাকিব এবং পাঁচে আসেন নুরুল হাসান সোহান। ছয়ে আফিফ, সাতে মাহমুদউল্লাহ এবং ২০১০ সালের পর এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আটে ব্যাট করেন মুশফিক।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দুই ওপেনার লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম রীতিমত ওয়ানডে স্টাইলে শুরু করেন। প্রথম ৩ ওভারে দুজনে মিলে কোনো বাউন্ডারিও বের করতে পারেননি। এরপর স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫ রান করা ডানহাতি ওপেনার লিটন আজ বিদায় নিয়েছেন ৭ বলে মাত্র ৬ রান করে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বিলাল খানের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন লিটন।  

লিটনের বিদায়ের পরের ওভারে নাঈম এক বাউন্ডারি ও ছক্কা হাঁকিয়ে রানের গতি কিছুটা বাড়িয়েছেন। কিন্তু পরের ওভারেই ফায়াজ বাটের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফিরেছেন মেহেদি হাসান (০)। তবে চারে নামা সাকিব শুরু থেকেই কিছুটা আগ্রাসী ভঙ্গিমায় খেলতে থাকেন। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন নাঈমও। দুজনে মিলে ওমানি বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে দারুণ এক জুটি গড়েন। অবশ্য নাঈম একাই দু'বার জীবন পেয়েছেন।  

নাঈমের ডাবল রানে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৪তম ওভারের প্রথম বলেই ১০০ ছুঁয়ে ফেলে। কিন্তু একই ওভারের তৃতীয় বলেই আকিব ইলিয়াসের সরাসরি থ্রোয়ে আউট হয়ে ফেরেন সাকিব। বিদায়ের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে ৬ চারে ৪২ রান। এছাড়া নাঈমকে নিয়ে ৫৩ বলে ৮০ রানের দারুণ এক জুটি উপহার দেন তিনি। এরপর নাঈম বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিফটির দেখা পান ৪৩ বলে। কিন্তু ওই ওভারের শেষ বলে জিসান মাকসুদের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন নুরুল (৩)।

দারুণ খেলতে থাকা নাঈমকে যোগ্য সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন ছয়ে নামা আফিফ (১) । ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই এক্সট্রা কভার বাউন্ডারি অঞ্চলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ওমানি বোলার কলিমুল্লাহর করা ওই ওভারের চতুর্থ বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে নিয়ে বিদায় নেন নাঈমও। এর আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৫০ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস।  

এরপর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটিতে ভর করে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখলেও বাংলাদেশের এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার আশা পূরণ করতে পারেননি। বিশেষ করে মুশফিক। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে তিনি করেন মাত্র ৬ রান। পরের বলেই লং-অফে ক্যাচ তুলে দেন সদ্য ক্রিজে আসা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (০)। তবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ শেষ ওভারের তৃতীয় বলে বোল্ড হওয়ার আগে ১০ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রানের ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস উপহার দেন। ইনিংসের শেষ বলে মোস্তাফিজ (২) তুলে মারতে গিয়ে বিদায় নিলে সব উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

বল হাতে ওমানের বিলাল খান ও ফায়াজ বাট ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন। ২ উইকেট পেয়েছেন কলিমুল্লাহ এবং ১ উইকেট মাকসুদের।

ব্যাট হাতে ৪২ রান ও বল হাতে ৩ উইকেট তুলে নেওয়া সাকিব নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাচ সেরা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ
ভারতকে কাঁদিয়ে এশিয়ার সেরা বাংলাদেশের যুবারা
সৌম্যের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স