বিশ্বব্যাপী মোট ৯১ লাখ মানুষ এখন পর্যন্ত নতুন করোনাভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা শাস্ত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ মোকাবিলা করতেই যেখানে সিংহভাগ দেশ হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে অনেক দেশ এখন দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে। খবর সিএনএনের।
দ্বিতীয় স্রোতে আক্রান্ত যারা
দক্ষিণ কোরিয়া:
সবার আগে দ্বিতীয় সংক্রমণ স্রোত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথমদিকে ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে দেশটি উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করে। এই প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।
তারপরেও সম্প্রতি দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলে গোষ্ঠীবদ্ধ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। নতুন এ সংক্রমণ দক্ষিণ কোরিয়ার মহামারি নিয়ন্ত্রণের সকল প্রচেষ্টাকে নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করছে।
গত মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাময় কর্তৃপক্ষ (কেসিডিসি) আনুষ্ঠানিকভাবেই সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা জানায়। চলমান এই সংক্রমণ স্রোত গত মে মাসের গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে ধারণা করছেন কেসিডিসি কর্মকর্তারা।
আগামী বসন্ত ও শীতকালে এই সংখ্যা বহুগুণ বাড়ার আশঙ্কাও করছেন তারা। কেসিডিসি পরিচালক জুং ইউন-কেয়ং জানান, বড় আকারের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এখন প্রচুর সংখ্যক হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী মজুদ করা শুরু করেছেন।
জার্মানি:
নতুন সংক্রমণ গুচ্ছ লক্ষ্য করা গেছে ইউরোপের অর্থনৈতিক ভরকেন্দ্র বলে পরিচিত জার্মানিতেও। স্থানীয় একটি মাংসের কারখানায় করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ গুচ্ছ শনাক্তের প্রেক্ষিতে সেখানে লকডাউন চালু করেছে নর্থ-রাইন ওয়েস্টফিলিয়া নামক প্রদেশটির কর্তৃপক্ষ।
'টয়েনিস' নামক ওই মাংসের কারখানায় করোনার সংক্রমণ দেড় হাজারের বেশি শ্রমিককে আক্রান্ত করে। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার প্রাদেশিক সরকার ওই কারখানা সহ আশেপাশের এলাকায় লকডাউন বিধিমালা চালু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা এলোমেলো:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ধাপের সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই অর্থনীতিকে পুনরায় সচল করতে তোড়জোড় শুরু করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান দল নিয়ন্ত্রিত নানা প্রদেশেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধিমালা শিথিল করতে থাকে। ধীরে ধীরে এরপর এখন উন্মুক্ত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এবং পশ্চিম উপকূলের অঙ্গরাজ্যগুলো।
এসব রাজ্যে ইতোমধ্যেই তরুণ-তরুণীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিধি না মানার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় করোনা পজিটিভ বলে শনাক্ত হচ্ছেন। বিগত কয়েকদিনে যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক ৩০ হাজার নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে।
মেক্সিকো সিটির ইটযাপালপা বাজারে একজন নারীর দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখছেন এক স্বাস্থ্য কর্মী। ছবি: সিএনএন
ভারত ও লাতিন আমেরিকা অবনতির ঘূর্ণিপাকে:
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারত সংক্রমিতের সংখ্যায় এখন বিশ্বে চতুর্থ। শুধুমাত্র গত ৮ দিনেই সেদেশে এক লাখ নতুন সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ আর অর্থনীতিকে আংশিক সচল রাখা এই দুয়ের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে দেশটির সরকারের।
এদিকে লাতিন আমেরিকায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যেন করোনার মহামারি। দুর্বল স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের নানা দেশের জন্য।
গত সোমবার টানা দ্বিতীয় দিনের ন্যায় মেক্সিকোতে ব্রাজিলের চাইতে বেশি প্রাণহানি ঘটে, মারা যান ৭৫৯ জন। নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ে পাঁচ হাজারটি। ফলে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার জনে। আর মোট মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার।
ব্রাজিল এখন সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্তে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গত এক সপ্তাহে সেখানে দৈনিক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। আর গত সোমবার এই সংখ্যা ছিল ৬৫৪টি। ফলে সার্বিক প্রাণহানির সংখ্যা উন্নীত হয় ৫১ হাজার ২৭১টিতে।