ঢাকা বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪
দিনাজপুরে কলার হাট জমে উঠেছে
  • দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
  • ২০২১-০৯-২৮ ২৩:২৬:৫০

দিনাজপুরের উৎপাদিত সাগর কলা দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। গ্রীস্ম কালের শেষে দিকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শত শত একর জমিতে বাণিজিক ভাবে কলা আবাদ করা হয়। শরৎ কালের প্রথম দিন থেকে কলা চাষীরা মাড়াই করে। শত শত ভ্যান যোগে জেলার সবচেয়ে কাহারোলের দশমাইল কলা বাজারে বিক্রি হয়। এই হাটে এখন চাষি-ব্যবসায়ী ও পাইকারদের ব্যস্ততা। জমে উঠেছে কেনাবেচা।

কলা চাষের উপযোগী উঁচু জমি থাকায় দিনাজপুরে এই ফলের উৎপাদন বেশি। এ ছাড়া আবাদে পরিশ্রম কম এবং ন্যায্য দাম পাওয়ার নিশ্চয়তার কারণে কৃষকেরা ঝুঁকছেন কলা চাষে। 

দিনাজপুর জেলার সব কটি উপজেলাতেই কমবেশি কলা চাষ হয়। তবে বেশিল ভাগ  কলা চাষ হয় কাহারোল, বীরগঞ্জ, সদর ও বিরল উপজেলায়। কাহারোল উপজেলার দশমাইল ও বীরগঞ্জ পৌর এলাকার বীরগঞ্জ বাজারে  বৃহত্তম বড় কলার হাট বসে । ঢাকার বাদামতলী, যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও, ওয়াইজঘাট, নারায়ণগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে কলা ব্যাপারীরা কলা কিনতে আসেন ।

এখন প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে ভ্যানে করে এই হাটে বিক্রির জন্য কলা আনতে শুরু করেন চাষি ও স্থানীয় কলা ব্যবসায়ীরা। এই হাটে স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী আছেন দেড় শতাধিক। হাটের বাইরে থেকে আসা ব্যাপারীদের সঙ্গে চলে দর-কষাকষি। কেনাবেচা শেষে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে কলা তোলা হয়। সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয় হাটের কারবার। এর শত শত ট্রাকে  কলা লোড দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাচা কলার কাদি নিয়ে যাওয়া হয় । 

কলার বাজারে সারি সারি সাজানো কলার কাঁদি। স্থানীয়ভাবে কলার কাঁদিকে কেউ বলে কাইন, ঘাউর, ঘের, পীর। প্রতিটি কলার কাঁদি বিক্রি হয় ৪০০-৪৫০ টাকা দরে। ব্যাপারীরা জানান, গেলবার প্রতিটি কলার কাঁদি কিনেছেন ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। সে হিসাবে এবার কাঁদিপ্রতি দম ১০০ টাকা বেড়েছে।

কলার দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরাও। কাহারোল উপজেলার কলাচাষি আব্দুল করিম মোল্লা বলেন, ‘কলা চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। গেলবার ২০০ গাছ দিয়ে বাগান শুরু করি। এবার সেখানে ৫০০ গাছের বাগান করেছি। বাগানে মোট খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। প্রায় ২ লাখ টাকার কলা বিক্রির আশা করছি।’ তিনি জানান, কলার বাগানে যে খরচ হয়েছে, বাগানের ভেতরে বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ থেকেই সেটা উঠে এসেছে।

কাহারোল উপজেলার শীতলাই এলাকার কৃষক  মহেশ কুমার রায় বলেন, কলা বিক্রি করতে হাঁটে আসতে হয় না। পাইকারেরা আগেই টাকা দিয়ে দেন। হাঁটে আনলে খাজনা দেওয়া, পরিবহন খরচসহ পড়তা করা যায় না। তাই ব্যবসায়ীদেরই দিয়ে দিই, বিক্রির ঝামেলা থাকে না। তিনি জানালেন এবার, ৩০০ কাঁদি কলা বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতিটি কাঁদির দাম পেয়েছেন ২৮০ থেকে ৩৪০ টাকা।

দশমাইল কলাহাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান জানান, মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন ৭০-৮০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এই হাটে। শতাধিক ব্যাপারী কলা কিনতে আসেন। প্রতিদিন ২৫-৩০টির বেশি ট্রাকে কলা নেওয়া হয়। একটি ট্রাকে সর্বনিম্ন ৮০০-৯০০ কাঁদি কলা ধরে। অর্ধশত শ্রমিক শুধু ট্রাকে কলা তোলার কাজ করেন। তবে গত বছরের চেয়ে এবার কলার আমদানি কম। তিনি বলেন, ভুট্টার আবাদ বেড়ে যাওয়ায় কলার আবাদ কিছুটা কমেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, এ জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে।  দিনাজপুরে উৎপাদিত সাগর কলা ঘ্রাণে ও স্বাদে অনন্য হওয়ায় এবং মৌসুমের শুরুতে এবার চাহিদা বেশি থাকায় দামও কিছুটা বেশি। কলা চাষে খরচ কম। ঝুঁকি ও রোগবালাইও কম। তাই কলা চাষ জনপ্রিয় হয়েছে।

দিনাজপুরে নিরাপদ বিষমুক্ত বারোবাসি ড্রাগন ফল পাওয়ার  দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রতন কুমার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেড়েছে খিরার আবাদ
চিরিরবন্দরে গীষ্মকালিন পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা
সর্বশেষ সংবাদ