জীবনভর যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকা মানুষগুলোকে বলা হয়, মধ্যবিত্ত। সংসারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। করোনার ভয়াল থাবায় আরও জটিল হয়েছে পরিস্থিতি। একদিকে বাড়ছে জীবনযাত্রার খরচ। অন্যদিকে কারো চাকরি যাচ্ছে, কারো কমছে বেতন। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরছেন অনেকে। কেউ কেউ বাসা বদল করে উঠছেন কম ভাড়ার বাড়িতে।
হাটা-চলা কিংবা বেশভূষায়, বুকের ভেতরে থাকা চাপা কষ্ট-যন্ত্রণার ছাপ নেই। থেকে থাকলেও ঢাকা পড়ছে মাস্কের আড়ালে। মধ্যবিত্তের এরকম দু’জনই চাকরিচ্যুত হয়েছেন ‘অ্যালকো ফার্মা’ থেকে। এখন কী করবেন? কোথায় যাবেন? কিভাবে চলবে সংসার খরচ? উত্তর না পেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
চাকরি হারিয়ে তাদের একজন বলেন, ঢাকাতে বাসা ভাড়া করে থাকা সম্ভব না, পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবো? এই করোনাকালীন চাকরিচ্যুত করেছে তারা। আমাদের কোন দোষ নেই। কিছুই তারা উল্লেখ করে নাই।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ফাহিম চৌধুরী। পড়াশুনা করছেন রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কয়েক বছর ধরে মিরপুরে থাকলেও, খরচ কমাতে ছুটছেন গ্রামের পানে দিনাজপুরে।
মেরুল বাড্ডায় ভাড়া থাকেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত একটি স্কুলের শিক্ষিকা তৌহিদা খানম।
তিনি জানালেন, জীবনে এত কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হবেন, ভাবেননি আগে কখনও।
নানামুখি সংকট আর হতাশার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রণি। চাহিদা মেটানো দূরে থাক, অভাবও ঘোচাতে পারছেন না। আবার তা প্রকাশ্যে বলতেও পারছেন না।
বাড়ি ভাড়াসহ খরচ কমাতে কেউ পরিবার পাঠিয়েছেন গ্রামে। কেউ কেউ বেশি দামের বাসা ছেড়ে, উঠছেন কম ভাড়ার বাড়িতে। সারাক্ষণ মাথার ভেতর চলে, ক্যালকুলেটরের হিসাব।
এমনকি ঢাকায় বাড়িওয়ালাদের একটা অংশও খুব একটা ভাল নেই। প্রায় বাড়িতেই ফ্ল্যাট খালি, ফটকে ঝুলছে ‘টু-লেট’।
বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া বিষয় নয়, মধ্যবিত্তরা ভীষণ কষ্টেও পারেন না, হাত পাততে। প্রাণ খুলে বলতে পারেন না, অভাব-অনটনের কথা। সামাজিক মর্যাদা বা স্টাস্টাস রক্ষার কথাও ভাবতে হয় অভাব মেটানোর পাশাপাশি।