করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব বিপর্যস্ত। বাংলাদেশে মার্চের শুরু থেকে করোনা থাবা বসিয়েছে। এতে করে সৃষ্ট সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শিশু, বিশেষত যারা শহর বা গ্রামের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছে, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় দুই মাসের সাধারণ ছুটিতে দেশ অচল থাকে। ৯০ দিনে ‘লকডাউনে’ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ায় দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবারের উপার্জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে দৈনিক রোজগার বা ব্যবসা বন্ধ থাকায় ৭৮.৩ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমেছে। শনিবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের কোভিড-১৯ র্যাপিড ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের অন্তর্বর্তীকালীন ন্যাশনাল ডিরেক্টর চন্দন গোমেজ বলেন, ‘আমরা শঙ্কিত। বিশেষত, পাঁচ বছরের কম বয়সী সেই শিশুদের নিয়ে যারা অপুষ্টির মতো প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে আছে, যা দেশে শিশু মৃত্যুর হার বাড়িয়ে তুলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের ২৬ জেলার ৫৭টি উপজেলায় আমাদের কর্ম এলাকাগুলোতে দেখেছি খাদ্য সংকটের কারণে অপুষ্টির মতো সমস্যাগুলোতে শিশুরা অধিক মাত্রায় সংক্রমিত হচ্ছে।’
প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে, জরিপ এলাকার ৯৪ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারে খুব সামান্য অথবা কোনো খাবার সঞ্চিত নেই যেখানে ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু এবং ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে সর্বোচ্চ দুবেলা খেতে পারছেন। এছাড়া ৫৮ শতাংশ পরিবার খুব কম খাবার খেয়ে দিন পার করছে।
গোমেজ বলেন, ‘আমরা শংকিত। বিশেষত ৫ বছরের কম বয়সী সেই সব শিশুদের নিয়ে যারা চলমান পরিস্থিতিতে পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে। ফলে কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমিত হলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়বে শিশুরা। বেড়ে যতে পারে শিশু মৃত্যুর হার।’
দেশের ২৬টি জেলার ৫৭টি উপজেলার সংস্থাটি কর্ম এলাকাগুলোতে দেখানো হয়েছে খাদ্য সংকটে শিশুরা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পাচ্ছে না। এতে করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়বে।
দেশের আট বিভাগের ৫২ উপজেলার ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১ হাজার ৬১৬ জন শিশু এবং ২ হাজার ৬৭১ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে র্যাপিড ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।