নরসিংদীর শিবপুরে নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় দুই পথচারী নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও এক শিশু গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হাজিবাগান এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে ঘটনার পরপর স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওই বাসে আগুন ধরিয়ে দেন।
দুর্ঘটনায় নিহত দুই পথচারী হলেন শিবপুরের শ্রীফুলিয়া এলাকার মো. কিতাব আলীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৫৫) ও একই উপজেলার সৃষ্টিগড় এলাকার মো. আয়েছ আলী কাজীর স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৫৫)। এ ঘটনায় রোকেয়া বেগমের নাতনি তানজিনা (১২) গুরুতর আহত হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, দুপুরে রোকেয়া বেগম ও তাঁর নাতনি তানজিনা ও আনোয়ারা বেগম মহাসড়কটি পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। এ সময় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কাজী পরিবহনের একটি বাস মহাসড়কের হাজীবাগান বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টা পথে গিয়ে ওই তিনজনকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই রোকেয়া বেগম ও আনোয়ারা বেগমের মৃত্যু হয়। এ সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা আহত অবস্থায় তানজিনাকে উদ্ধার করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
এদিকে দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির কাচের জানালা ভাঙচুর শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে বাসের সব আসন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে ইটাখোলা হাইওয়ে ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহত দুই নারীর লাশ উদ্ধার করে। পরে নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ও শিবপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে বাসটির আগুন নেভায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাসটিতে আগুন জ্বলছিল বলে জানা যায়।
ইটাখোলা হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. নূর হায়দার তালুকদার জানান, নিয়ন্ত্রণ হারানো বাসের চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। তাঁদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় আহত এক শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তবে বাসের চালক পলাতক।
এদিকে জেলার বেলাব উপজেলায় মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দড়িকান্দি ও জঙ্গুয়া এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত ওই কিশোরের নাম রিয়াদ হোসেন (১৪)। সে বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের আবদুল ছাত্তার মিয়ার ছেলে ও হোসেননগর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী রিয়াদ হোসেনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত রিয়াদের পরিবারের সদস্যরা জানান, রিয়াদ তার বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেল চালিয়ে রায়পুরার মাহমুদাবাদ গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিল। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দড়িকান্দি ও জঙ্গুয়া এলাকার মধ্যবর্তী একটি স্থানে পৌঁছালে ঢাকাগামী একটি মাইক্রোবাস তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে মোটরসাইকেলসহ মহাসড়কে ছিটকে পড়ে যায় রিয়াদ। জনশূন্য মহাসড়কে আহত অবস্থায় রিয়াদ প্রায় ৩০ মিনিট পড়ে ছিল।
নিহত রিয়াদের বাবা আবদুল ছাত্তার মিয়া বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ছেলেকে উদ্ধার করে বারৈচা বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে সৃষ্টিগড় এলাকায় পৌঁছার পর তার মৃত্যু হয়।