নরসিংদীর রায়পুরায় ডেকে নিয়ে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া পারভীন আক্তার (৩০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আজ সোমবার সকাল ছয়টার দিকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাঁর মৃত্যু হয়। গত শনিবার পারভীনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

নিহত পারভীন রায়পুরার মরজালের বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেনের সাবেক স্ত্রী। আট মাস আগে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে পারভীন উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকতেন। 
পারভীনের ছোট ভাই আক্রাম হোসেন বলেন, এক বছর আগে মেয়ের পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার অভিযোগে দেবরের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পারভীন। এতে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এ ঘটনায় পারভীনের ছোট ভাই আক্রাম হোসেন চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রায়পুরা থানায় মামলা করেন। আসামিরা সবাই ওই নারীর সাবেক স্বামীর স্বজন। ইতিমধ্যেই জাকির হোসেনের ভাই আলী হোসেন (৩২) ও ভাগনে মো. শাহরিয়ারকে (১৮) পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ও পারভীনের স্বজনেরা বলেন, টিকা নিয়ে দেওয়ার কথা বলে শনিবার দুপুরে তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নেন সাবেক শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে তাঁর মুখ বেঁধে রায়পুরার লোচনপুর এলাকার একটি নির্জন স্থানে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় স্থানীয় লোকজন চিৎকার শুনে পারভীনকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পারভীনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। তাঁর স্বজনদের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহতের শরীরের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে জানান চিকিৎসকেরা।

রায়পুরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেবদুলাল দে বলেন, ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২৭ ঘণ্টা চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ সকালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে শাহবাগ থানা-পুলিশ লাশ হস্তান্তর করবে। পরে ওই লাশ নরসিংদীতে আনা হবে। এদিকে এ ঘটনায় এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।