গাজীপুরের কাপাসিয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে উদ্বোধনের আগেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে প্রায় তিন বছর আগে স্টেডিয়ামটি স্থাপনের উদ্যোগ নেন স্থানীয় সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি। তিনি ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্টেডিয়ামটির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আক্তার এন্টারপ্রাইজ নির্মাণের দায়িত্ব পান। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪১ লাখ টাকা। আর পুরো কাজ শেষ করতে দেওয়া এক বছর সময় তিন বছর হতে মাত্র কয়েক মাস বাকী। আদৌ স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন হবে কিনা সেটি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে ক্রীড়া প্রেমিদের।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে যাচাই করে দেখা যায়, নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। শর্তানুযায়ী পুরো কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার বিল তুলে নিয়েছেন। অথচ এখনো নির্মাণ কাজই শেষ হয়নি। যতটুকো কাজ হয়েছে তাও অযত্নে নষ্ট হতে চলেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও নেই কোনো তত্ত্বাবধায়ক। ভবনটির ভেতরে নোংরা পরিবেশ। মাকড়শা জাল বুনেছে। ফ্লোরে পরে রয়েছে প্রাণীর মলমূত্র। ভবনটির সামনের এক অংশে গর্ত করে সংসার পেতেছে শেয়াল। প্যাভিলিয়নের বারান্দায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে। টয়লেট এবং ড্রেসিং রুমের সিঁড়ির টাইলস উঠে যাচ্ছে। টয়লেটের ট্যাংকির ডাকনা খোলা থাকে সবসময়। মেঝেতে পরে রয়েছে কয়েক মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের কপি। বৃষ্টিতে ভবনটির দেয়াল বেয়ে পানি পড়ে রঙ উঠে যাচ্ছে। ভবনের সামনে এখন বিশাল কলা বাগান। ছেলে-মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট থাকলেও কোনটাতেই দরজা লাগানো হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টয়লেটের দরজাগুলো স্থানীয় লোকমান হোসেনের বাড়িতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এমনকি ঠিকাদার কাজ শেষের কথা বললেও প্যাভিলিয়ন ভবনে কোনো বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হয়নি। স্থানীয় ইমাম হোসেন ও মাহাবুর রহমানের অভিযোগ, ভবন নির্মাণের সময় তারা রাজমিস্ত্রির কাজ করেছেন। তাদের পারিশ্রমিকের ১২ হাজার টাকা ঠিকাদার পরিশোধ করেননি।
এলাকাবাসী জানান, আগে মাঠে নিয়োমিত খেলাধুলা হলেও বর্তমানে তা পরিত্যক্ত। দিনে ক্রীড়া প্রেমিদের মাঠে দেখা না গেলেও রাতে এখানে নেশার আড্ডা জমে। স্থানীয় শাকিল, ইমাম, আরিফসহ একাধিক যুবকের ভাষ্য, পরিত্যক্ত এই মাঠটি খেলাধুলার জন্য মোটেও উপযোগী নয়। এখন পর্যন্ত ফুটবল গোল বার স্থাপন করা হয়নি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক শামসুল হক সবুজ বলেন, কাজ শেষই। মাঠের কিছু অংশে মাটি ভরাটের কাজ রয়েছে। গাছ কাটায় বন বিভাগের আপত্তির কারণে এটি আটকে আছে। তদারকির অভাবে স্টেডিয়াম ভবনের নিচ দিয়ে শেয়াল গর্ত করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভবনটি বুঝে নিচ্ছেন না এমন অভিযোগ করে তিনি জানান, কিছু আসবাবপত্র কেনার বাকি রয়েছে। হস্তান্তরের সময় সেগুলো বুঝিয়ে দেব।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বকুল জানান, ঠিকাদার প্রায় দুই বছর ধরে কাজ বন্ধ রেখেছে। ঠিকাদারের গাফিলতির জন্য স্টেডিয়ামের এই অবস্থা। এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. ইসমত আরা ঠিকাদারের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, কাজ শেষের আগে তো স্টেডিয়াম বুঝে নেওয়া যায় না। নোংরা পরিবেশ। ঠিকাদারের কোন খোঁজ নেই। মাঠের ভেতর বন বিভাগের গাছের যে টেন্ডার মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে মূল্যে গাছ কেনার ক্রেতা মিলছে না। ঠিকাদারকে মাটি ভরাটের কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় গাছ কর্তনের জন্য অনেক আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়ছে। তিনি আরও বলেন, এতদিন স্টেডিয়ামের এই অবস্থা সম্পর্কে কেউ জানায়নি। সমস্যাগুলো কাটিয়ে দ্রুতই স্টেডিয়াম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।