ঢাকা মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
মুক্তিযুদ্ধে ঢাকার বুকে কাঁপন ধরায় গেরিলা দল 'ক্র্যাক প্লাটুন'
  • নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • ২০২০-১২-১০ ২৩:১৯:০৬

মেধাবী ও দুঃসাহসী তরুণদের গেরিলা দল 'ক্র্যাক প্লাটুন'র দুর্ধর্ষ অভিযানে পাক হানাদার বাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে।

স্বাধীনতাযুদ্ধে ঢাকার বুকে কাঁপন ধরানো গেরিলা দল 'ক্র্যাক প্লাটুন'। একঝাঁক মেধাবী আর দুঃসাহসী তরুণের দুর্ধর্ষ গেরিলা দল 'ক্র্যাক প্লাটুন'। দুর্ধর্ষ গেরিলা দলটির নেতৃত্বে ছিলেন ২নং সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ। মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী বলে তখন প্রচার করে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। কিন্তু সে সময় ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা সদস্যরা দুর্ধর্ষ অভিযানে অংশ নিয়ে বিশ্বে জানান দেয় তারা দুষ্কৃতকারী নয়, লড়াইটা সমগ্র বাঙালির। তাদের দুঃসাহসিক অভিযানে ভেঙে পড়ে পাক হানাদার বাহিনীর মেরুদণ্ড। মুক্তিযোদ্ধারা পায় নতুন উদ্যম।

নড়বড়ে অর্থনীতিতে ঋণ পাওয়া যাবে বিশ্বব্যাংকের যদি তাদের বোঝানো যায় ঢাকা স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক সাহায্যের কথা বলে এই টাকায় মুক্তিযোদ্ধা নিধনে আরও অস্ত্র কিনবে ইয়াহিয়া সরকার। পাক সরকারের এই মিথ্যাচার জানাতে হবে পুরো বিশ্বকে। জানাতে হবে, দুষ্কৃতকারী নয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভারতের মেঘালয়ে ‘মেলাঘর’ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ। মূলমন্ত্র ‘হিট এন্ড রান’, গ্রেনেড ছুড়ে ঝটিকা আক্রমণ, অতর্কিত ত্রাস সৃষ্টি এবং পালিয়ে যাওয়া। এক মাসের প্রশিক্ষণ শেষ। এবার মিশন। ঢাকার অলিগলি চেনা এমন ১৭ গেরিলাকে দেয়া হয় প্রথম অপারেশনের দায়িত্ব। উদ্দেশ্য, বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলকে জানান দেয়া গেরিলারা যুদ্ধের ময়দানে সক্রিয়।

১৯৭১ সালের ৮ জুন। প্রস্তুত 'ক্র্যাক প্লাটুন'। অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। সেদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুর্ধর্ষ অভিযানের বর্ণনা দিয়ে ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, 'আমরা ইন্টারকন্টিনেন্টালে পৌঁছে গাছের আড়ালে পজিশন নিয়ে দাঁড়াতেই বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং সাংবাদিকদের দেখতে পেলাম। এ সময় আমি আর আমার বন্ধু দু'টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করি। কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা আরও দু'টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে গাড়িতে করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করি।'

গেরিলাদের এই অপারেশনে পাকিস্তান সরকারের দীর্ঘদিনের মিথ্যাচার নিন্দিত হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। তেজোদ্বীপ্ত হন মুক্তিযোদ্ধারা। ক্র্যাক প্লাটুনের আরেক সদস্য হাবিবুল আলম বীরপ্রতীক বলেন, 'ইন্টারকন্টিনেন্টালে আমাদের অভিযান ছিলো মাত্র দুই থেকে আড়াই মিনিট। তখন মনে হয়েছে কি আর এমন করলাম। কিন্তু, এ অভিযানে বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে। এর পরদিন ৯ জুন বিশ্বের সবাই জানতে পারে আমারা পশ্চিম পাকিস্তানের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।'

মৃত্যুর পরোয়া নেই তরুণ প্রাণে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ছাড়াও প্রথম দফায় ওয়াপদা গেট, পুরানা পল্টন এবং বিভিন্ন সিনেমা হলের সামনে হাতবোমা নিক্ষেপ আর দ্বিতীয় দফায় উন্নত অস্ত্র দিয়ে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পাওয়ার স্টেশনগুলো বিস্ফোরণ। ৬ মাসে এমন ৮২টি দুঃসাহসিক অভিযান। গেরিলাদের দুর্ধর্ষ অভিযানে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাক বাহিনী।

স্বাধীন সকাল দেখা হয়নি আজাদ, রুমী,বদি কিংবা জুয়েলদের। তাতে কি? পরের প্রজন্মের জন্য তো রেখে গেছেন মুক্ত আকাশ, হার না মানা বীরত্বগাঁথা।

 

বঙ্গবন্ধু জন্মেছিল বলেই জন্মেছে এ দেশ -হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি
অপ্রতিরোধ্য বাজার সিন্ডিকেট: মজুতের শাস্তি আটকে আছে বিধিতে
ডাইফ সেবা সপ্তাহ শুরু আজ
সর্বশেষ সংবাদ