ঢাকা শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
টিআইএন থাকলেই রিটার্ন দিতে হবে
  • নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • ২০২০-১১-২৫ ০৩:৩৮:৪৯

গত অর্থবছর থেকে সব টিআইএনধারীর বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। শূন্য আয়ের জন্য কোনো কর দিতে হয় না। কিন্তু রিটার্ন জমা দিতেই হবে।
রাজধানীর একটি হাউজিং কোম্পানিতে নির্বাহী পদে চাকরি করেন। তিনি যে বেতন পান, তাতে করের আওতায় এসেছেন। করোনাকালে অনেকের মতো তারও চাকরি চলে গেছে। এখন তিনি বেকার। আয়-রোজগার নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, তাকে কি আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে?

হ্যাঁ, দিতে হবে। কারণ আইন হচ্ছে, আয় থাকুক বা না থাকুক, করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন থাকলে অবশ্যই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। আগে এ নিয়ম না থাকলেও গত অর্থবছর থেকে সকল টিআইএনধারীকে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করে সরকার।

ধরুন আপনার আয় নেই। তাতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এর জন্য আপনাকে কোনো ধরনের প্রশ্ন কিংবা জরিমানা করা হবে না। আয়কর ফরমে লিখতে হবে আয় শূন্য। শূন্য আয়ের জন্য কোনো কর দিতে হয় না। কিন্তু রিটার্ন জমা দিতেই হবে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, নানা কারণে আয় শূন্য হতে পারে অথবা কমে যেতে পারে। পরের বছর যখন আবার আয় হবে, তখন রিটার্নে তা উল্লেখ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কর পরিশোধ করতে হবে।

টিআইএন থাকলেই যে কর দিতে হবে তা নয়। ফ্ল্যাট, বাড়ি, জমি, গাড়ি, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচনসহ নানা কাজে টিআইএন লাগে।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, টিআইএন মানে হলো একজন ব্যক্তিকে কর জালে আনা। স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনি যখন তার আয়-ব্যয় দেখাবেন, তখন করযোগ্য আয় হলে কর দেবেন । আর না হলে কর দিতে হবে না।

বর্তমানে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সহজভাবে বললে করের আওতায় এরা। এদের মধ্যে রিটার্ন জমা দেন মাত্র ২২ লাখ।

এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২২ লাখ আয়কর রিটার্নের মধ্যে সবাই কর দেন দেন না। নিয়মিত করদাতার সংখ্যা ১৭ থেকে ১৮ লাখ।

এক সময় জালিয়াতি করে ভুয়া টিআইএন নেয়া যেত। টিআইএন বাণিজ্য ছিল কর কর্মকর্তাদের আয়ের একটি বড় উৎস। টিআইএন ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় করায় সেই যুগের অবসান হয়েছে।

২০১৩ সালে অনলাইনে ই-টিআইএন পদ্ধিত চালু করে এনবিআর। এ ব্যবস্থায় যে কেউ ইচ্ছা করলে ঘরে বসে টিআইএন নিতে পারেন। কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা না দিলও চলে। এনবিআরের ওয়েবসাইটে ঢুকে ক্লিক করে ১২ ডিজিটের ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (ই-টিআইএন) সংগ্রহ করা যায়।

এই ই-টিআইএন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আয়কর রিটার্ন জমার সময় ফরমের ওপর ১২ ডিজিটের নম্বর অবশ্যই লিখতে হয়। তা না হলে রিটার্ন গ্রহণ করা হয় না। এ ছাড়া বাংকে এফডিআর করার সময় ই-টিআইএন সনদ লাগবে। তা না হলে বেশি কর দিতে হবে।

করের আওতা বাড়াতে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমার দেয়ার নিয়ম আগের চেয়ে কঠোর করেছে এনবিআর। বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবী, যাদের মূল বেতন মাসিক ১৬ হাজার টাকার বেশি, তাদের রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।

এ ছাড়া বেসরকারি খাতে নির্বাহী পদে যারা চাকরি করেন তাদেরকেও রিটার্নের আওতায় আনা হয়। শুধু তাই নয়, তাদের রিটার্ন জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিয়োগকারি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়। এ নিয়ম প্রতিপালন না করলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় বিবরণী অডিট করা হয়।

জনসংখ্যা অনুপাতে দেশে করদাতার সংখ্যা খুবই কম। অথচ কর দেয়ার সামর্থ্য আছে অনেকেরই। আয় অনুযায়ী, বাংলাদেশে কত জন লোকের কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে ধারণা করা হয়, সামর্থ্যবানদের বেশির ভাগই করের আওতার বাইরে এখনও। বাংলাদেশের অর্থনীতির বাস্তবতায় কমপক্ষে এক থেকে দেড় কোটি লোকের নিয়মিত কর দেয়ার সক্ষমতা আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

প্রতি বছরই বাজেটে করের আওতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু তারপরও করদাতার সংখ্যা আশানুরূপ বাড়ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ আয়কর দেন। ভারতে এই সংখ্যা চার শতাংশ। নেপালে ছয় শতাংশ। বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমানে ১০ দশমিক ৫, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন।

চলতি বছর বাজেটে অন্তত এক কোটি লোককে করের আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কিন্তু করোনার বছরে এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে জানান এনবিআরের কর্মকর্তরা।

 

সবজির স্বস্তি ম্লান চাল-মুরগিতে
বাংলাদেশি টাকায় আজকের টাকার রেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশি টাকায় আজকের টাকার রেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪