‘কেউ আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, আর কিছু লাগবে না’

জীবন সংগ্রাম ডেস্ক: || ২০২০-০৬-১১ ২২:১৮:৫২

image

এই করোনাকালেও মানুষের ছোটখাট জটলা। রাস্তায় বসে আর্তনাদ করতে থাকা মাঝবয়সী এক নারীকে ঘিরে রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের ভিড়। অনেকে চেষ্টা করছেন ওই নারীকে সন্ত্বনা দিতে, জানার চেষ্টা করছেন কী তার সমস্যা? কিন্তু কারো কোনো কথাতেই ভ্রুক্ষেপ নেই ওই নারীর। বুক চাপড়ে আর্তনাদ করেই চলেছেন তিনি। শনিবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে এই দৃশ্য দেখা যায় রাজধানীর মগবাজার সিগন্যালে।

বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা শান্ত হন ওই নারী। জানান, তার নাম জেসমিন। বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাট এলাকায়। বর্তমানে থাকেন মান্দায় হায়দার আলী স্কুলের পাশে। শুক্রবার থেকে একমাত্র মেয়ে ঘরে না খাওয়া। কোনো উপায় না পেয়ে শনিবার সকালে খাবারের সন্ধানে বের হয়েছিলেন তিনি। অনেক আকুতি-মিনতির পর একজন দয়া করে ৫ কেজি চাল দিয়েছেন তাকে। কিন্তু সেই চাল নিয়ে ঘরে ফেরার সাহস হচ্ছে না তার। কারণ আদরের মেয়েটি তরকারি ছাড়া শুধু ভাত খেতে চায় না। ২ দিন পর মেয়েটির সামনে তরকারি ছাড়া ভাত কিভাবে এগিয়ে দেবেন তিনি?

জেসমিন জানান, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সুখের জীবন ছিল। স্বামী ফয়সাল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন। আর জেসমিন চাকরি করতেন ফকিরাপুল মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। একটি সড়ক দুর্ঘটনা তার জীবন এলোমেলো করে দেয়।

৬ বছর আগে বাস থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যান জেসমিন। এ সময় একটি সিএনজির ধাক্কায় তার একটি হাত ও একটি পা ভেঙে যায়। কিছুদিন পর স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। এরপর আর কোনো খোঁজ নেননি স্ত্রী সন্তানের। অভিমানী জেসমিনও খোঁজ নেননি তার।

দুর্ঘটনার পর চিকিৎসায় জেসমিনের পা ভালো হলেও হাতের হাতের হাড় এখনও জোড়া লাগেনি। চিকিৎসকরা সাময়িকভাবে হাতে রড লাগিয়ে দেন। সেই হাত নিয়েই জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন জেসমিন। এর মাঝে ছেলেও বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেলেও জেসমিন ও তার মেয়ের জীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু সেই সুখও টিকেনি জেসমিনের। আড়াই মাস আগে একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখেন ভাঙা হাতটি অস্বাভাবিক ফুলে গেছে। মাংস ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে হাড়। কোনোভাবেই হাতটি নাড়াতে পারছেন না আর।

তিনি বলেন, এরপর আশাপাশের মানুষ আমাকে নিয়ে যায় পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক হাত কেটে ফেলার কথা বললে আমি ঢাকা মেডিকেলে যাই। সেখানে চিকিৎসকরা হাড় সঠিক স্থানে বসিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে জানান অপারেশন করলে ঠিক হবে। তারা গত ১৪ এপ্রিল অপারেশনের জন্য হাসপাতালে যেতে বলেন। কিন্তু এদিন হাসপাতালে গেলে করোনার কারণে চিকিৎসকরা আর তার ধারে-কাছেও যাননি।

জেসমিন বলেন, গত ২ মাস ধরে কোনো কাজ করতে পারি না। জামানো কিছু টাকাও ছিল তাও শেষ। শুক্রবার সারাদিন না খেয়ে থেকে শনিবার আর সহ্য করতে পারিনি। খাবারের খোঁজে বের হয়ে পড়ি। কিন্তু আমাকে খাবার সাহায্য দেওয়া লাগবে না। কেউ আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন। হাত ভালো হলে আমি কাজ করেই খেতে পারবো।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com