বাইরে বের হতে নানা ফন্দি

রাজধানী প্রতিবেদক: || ২০২০-০৬-১১ ২২:১৫:৪২

image

জোনভিত্তিক লকডাউনে থাকা রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারবাসীর জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেই কিছু সবজির ভ্যানকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জানানো হয়, কেউ তরকারি কিনতে চাইলে বের হয়ে কিনতে পারেন। বাসিন্দাদের অনেকেই বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ, সবজি বিক্রেতারা দাম বেশি রাখছেন।

যে চালকুমড়ার দাম ৩০ টাকা, সেটা হাঁকা হচ্ছে ৫০ টাকা। ৫০ টাকা কেজির পটোল চাওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। কিন্তু উপায় নেই। তাদের বাধ্য হয়েই বেশি দামে সবজি কিনতে হয়। একইভাবে গতকাল লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাছ-মাংস-ফল বিক্রেতাদের পূর্ব রাজাবাজারের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে মাইকিং করা হয়। তবে সব ক্ষেত্রেই বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। ভেতরে কোনো দোকানপাট খোলা না থাকায় ওইসব বিক্রেতাই ছিল ভরসা। তবে প্রায় প্রথম দিনের মতোই ছিল গতকালের লকডাউনের চিত্র।

স্থানীয় কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান সমকালকে বলেন, লকডাউন করতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হচ্ছে। অনেকে বাইরে বের হতে রাতে বাউন্ডারি প্রাচীর ফুটো করে রাখছেন যাতে সুবিধামতো বের হতে পারেন। গতকাল সেগুলো খুঁজে খুঁজে ঠিক করা হয়েছে। এক বৃদ্ধা মহিলা জানান- তার জর্দা শেষ হয়ে গেছে। তার জর্দা কিনে দিতে হবে। নইলে তাকে বাইরে যেতে দিতে হবে।

আরেক ছেলে জানান- সে সারাদিন ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়ায়। তাকে বের হতে না দিলে মরে যাবে! পরে তাকে ছাদে গিয়ে ঘোরাঘুরি করতে বলা হয়। পরে সেই যুবক আবার জানান- বাড়িওয়ালা ছাদে যাওয়ার চাবি দিচ্ছে না। বাড়িওয়ালাকে বলে ছাদে যাওয়ার ব্যবস্থা পর্যন্ত করতে হয়েছে। আবার মঙ্গলবার রাত ১২টার পর লকডাউন হওয়ার পরদিন সকালেই কিছু লোক বলে তাদের ঘরে খাবার নেই। ত্রাণ দিতে হবে। বাধ্য হয়ে তাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। অথচ তিন দিন পর থেকে ত্রাণ দেওয়া শুরুর পরিকল্পনা ছিল।

করোনায় একজনের মৃত্যু : করোনায় আক্রান্ত হয়ে পূর্ব রাজাবাজারের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। একজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, সকাল ৬টার দিকে মৃতব্যক্তির একজন আত্মীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্স করে ওই ব্যক্তিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান জানান, ওই ব্যক্তি ইউনাইটেড হাসপাতালের কর্মকর্তা। করোনার উপসর্গ থাকায় সম্প্রতি তিনি পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। গতকাল সকালে তাকে জানানো হয়, তার করোনা পজিটিভ। করোনার কথা শুনে ভয়েই তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন।

এদিকে গতকাল পূর্ব রাজাবাজারের চারপাশে ঘুরে দেখা যায়, প্রথম দিনের মতোই গলির ভেতর তরুণদের আড্ডা। সোনারতরী টাওয়ারের কাছের সেঞ্চুরি গলিতে একদল যুবক আড্ডা দিতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের বাধার মুখে পড়ে। তখন তাদের বলতে শোনা যায়, লকডাউন শুরুর আগেই এলাকা ছেড়ে যাওয়া ভালো ছিল।

গতকালও পূর্ব রাজাবাজারের আটটি প্রবেশপথের সাতটিই বন্ধ ছিল। গ্রিন রোডের আইবিএ হোস্টেল সংলগ্ন গেটটি (নাজনিন স্কুল গেট হিসেবে পরিচিত) খোলা ছিল। তবে একটি বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। জরুরি প্রয়োজনে মানুষের যাতায়াতের জন্য ওটা খোলা রাখা হয়। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা গেটে দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল দুপুরে এক ব্যক্তি ওই গেট দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি পুলিশকে জানান, তিনি খাগড়াছড়ির একটি স্কুলের শিক্ষক। ছুটির পর চাকরিতে যোগদান করতে তাকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। কিন্তু তার অনুরোধে সাড়া না দিয়ে তাকে পুলিশ বুঝিয়ে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

জানা যায়, লকডাউন শুরুর আগে ব্যবসায়ীসহ কিছু মানুষ বাড়ি ছেড়েছেন। কারওয়ানবাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি বাসায় থাকলে তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই পরিবারের জন্য বাজার করে দিয়ে তিনি লকডাউন শুরুর আগেই অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করেছেন।
আইবিএ-সংলগ্ন প্রবেশপথে দায়িত্বরত শেরেবাংলা নগর থানার এসআই ওয়াজেদ আলী জানান, অনেকেই চাকরির কথা বলে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের বুঝিয়ে বাসায় পাঠানো হচ্ছে।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com