মব ভায়োলেন্সে মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ, পুলিশের বাড়তি সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক || ২০২৪-১১-১৬ ০৩:৩৪:২৪

image

দেশে প্রায়ই গণপিটুনি বা ‘মব ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটছে। এতে দেখা যায় একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা ‘বিচার করার নামে’ কোনো একটি অভিযোগ তুলে একজনকে পিটিয়ে মারছে আর বাকিরা ভিড় করছে। কেউ ভিডিও করছে, আবার অনেকে উল্লাস করছে। এসব ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে আঁতকে উঠছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে গণপিটুনিতে হত্যার খবর পাওয়া গেছে তুলনামূলক অনেক বেশি। এ ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে লুটপাট, জমি দখল এবং বাসাবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা তো ঘটছেই।

 

২০২০ সালে রাজধানীর বাড্ডায় একটি স্কুলে মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম ওরফে রেনু। তিনি স্কুলে গিয়েছিলেন মেয়ের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে। ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে আশপাশ থেকে কয়েকশ’ মানুষ স্কুল প্রাঙ্গণে ঢুকে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এটি ছিল তখনকার খুব আলোচিত ঘটনা।


চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। একই দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে কয়েক দফা মারধর করে হত্যা করা হয়। এ দুটি ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।


৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হওয়ার দাবি করে সংঘবদ্ধ জনতার হামলা দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, আদালতে, এমনকি দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে সীমান্তে ধরা পড়া অনেক নেতাকর্মীর ওপরও।


ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশে এই গণপিটুনি ও মবের কারণে মৃত্যুর ঘটনা আগেও ঘটেছে কিন্তু এবারের ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন। আগে কথিত চোর-ডাকাত, অপ্রীতিকর হয়রানির অভিযোগ এনে গণপিটুনি দেওয়ার ঘটনা বেশি দেখা গেলেও এবারে মিশ্র কারণ উপস্থিত।


আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এ প্রবণতা রোধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। গত কয়েক মাসের তুলনায় মবে মৃত্যু কমে এসেছে উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ রকম ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য মাঠ পুলিশকে সতর্ক থাকতে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) গত তিন মাসের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাসে মবের কারণে মৃত্যু ঘটেছে ৬৮ জনের। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি, ২৮ জন। এর আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মবে মৃত্যু ঘটেছে ৩২ জনের। এ বছর জুলাইয়ে কোনও মব নথিবদ্ধ হয়নি। আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের তথ্য বলছে, সে বছর মবে ৫১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু ঢাকায়, ২৫ জন, তারপরে চট্টগ্রামে ১৭ জন। রংপুরে কোনও মবের ঘটনা নথিবদ্ধ হয়নি।


অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশ্লেষণে গত তিন মাসের হিসাব বলছে, এই তিন মাসে একটি মাত্র গুমের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ৩৫টি, যাতে আহত হয়েছেন ১ হাজার ৪২৪ জন। সাংবাদিক হয়রানির ঘটনা ঘটেছে ২৫৫টি। এদিকে শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ১২০, শিশু হত্যা ৮৬। এবং সেটাও সবচেয়ে বেশি ঘটেছে সেপ্টেম্বরেই।


১৪ নভেম্বর ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, অন্তর্ভুক্তি এবং ন্যায়বিচার: জনপরিসরে গণতন্ত্র’ সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার পরবর্তী তিন মাস ‘মবের মুল্লুক’ মনে হয়েছে।


মব কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় উল্লেখ করে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর গণমাধ্যমকে বলেন, অপরাধী যেই হোক সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য মাঠ পর্যায়ে প্যাট্রোল বাড়ানোসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে বার্তা দিতে চাই, যেখানে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে, আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে আমাদের জানান, এ বিষয়ে আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: [email protected]
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: [email protected]