ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নারীর প্রতি সহিংসতার ক্রমবর্ধমান ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো মানুষের মনে জমে থাকা ক্ষোভকে বিক্ষোভে রূপ দিয়েছে। অফলাইন বা অনলাইন, রাজপথ বা ভার্চুয়াল সর্বত্র আজ প্রতিবাদে সামিল হয়েছে জনতা। নারীরর প্রতি সহিংসতায় প্রতিবাদের অংশ হিসাবে নারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রোফাইলে কালো ছবি দিচ্ছেন, অনেকে আবার রাজপথের প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
‘নারী ছাড়া বিশ্ব কেমন হতে পারে তা দেখানোর জন্য এই আন্দোলন। আপনার প্রোফাইলের ছবিটি কালো করে দিন, যাতে পুরুষরা ভাবে নারীরা কোথায়? এটি শুধু নারীদের কাছে পাঠান। এটা নারীর প্রতি সহিংতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।’
এমন একগুচ্ছ বার্তায় ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি নারী পতিটি নারীকে দিচ্ছেন এবং ফেসবুকের প্রোফাইল ছবি কালো করে সেই প্রতিবাদে সক্রিয়ভাবে সামিল হচ্ছেন। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার প্রতিবাদে আজা সারা দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে অংশ নিতে দেখা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীতেও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন বামপন্থি দলের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়েছিলেন। যারা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ধর্ষণের ঘটনায় নানা প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজশাহীতে, ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ করে এবং ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা শহরের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সকাল ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী সাহেববাজার এলাকার জি-পয়েন্টে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করে।পরে তারা কিছুক্ষণ রাস্তা অবরোধ করে। শিক্ষার্থীদের সাথে সাধারণ মানুষও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার চেয়েছেন এবং ধর্ষকদের কঠোরতম শাস্তির দাবি তুলেছেন।
সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধন শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দেয়া বক্তব্যে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবি জানান বক্তারা। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করেন তারা।
চুয়াডাঙ্গায় সারাদেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে সকালে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যদের সাথে সাধারণ মানুষ একটি মানববন্ধনে অংশ নেয়।
প্রসঙ্গত, বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জানা যায়, ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে ২০/২৫ দিন আগে এ ঘটনা ঘটলেও, গত রবিবার গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিও চিত্রে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে তার মুখমণ্ডলে উপুর্যপুরি লাথি ও বেধড়ক মারধর করতে দেখা যায়। এসময় ওই গৃহবধূ বহুবার পায়ে ধরে এবং বাবা-বাবা বলে ডাকলেও নির্যাতন চালিয়ে যায় বখাটেরা। এছাড়া সম্প্রতি এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলছেন?
নোয়াখালীর নারী নির্যাতনের ঘটনায় আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া এক জঘন্য ঘটনা। আমরা তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে অপরাধীদের প্রায় বেশির ভাগকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, সিলেট এমসি কলেজের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। নোয়াখালী ও এমসি কলেজের ঘটনায় নির্ভুল তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে যাতে আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পায়।
নোয়াখালীর ঘটনা এক মাস আগের হলেও এত পরে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই তথ্য পেয়েছি তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি। এসব ঘটনা অনেক সময় ভুক্তভোগী জানাতে চায় না। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
ধর্ষণের ঘটনা বিচারহীনতার কারণে ঘটছে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনায় সাথে সাথে বিচার হচ্ছে। এখানে বিচারহীনতার কোনো বিষয় নেই। যতগুলো ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি’
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: [email protected]
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: [email protected]