নিয়ম না মেনে কীটনাশক স্প্রে, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কৃষক

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : || ২০২৪-১০-২৭ ০৭:১৩:২৫

image

লালমনিরহাটের কৃষকরা স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই ধানখেতে পোকা- মাকড় আর আগাছা দমনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্প্রে করছেন। প্রতিদিন সকাল হলেই এমন চিত্র দেখা যায়।স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তারা মানছেনা কোন নিয়ম। এতে করে শ্বাসকষ্ট, চামড়ায় ফোসকা, লিভার, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকরা। বিশেষ কীটনাশক স্প্রে করায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে। 


কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় এবার ৮৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।


কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক স্প্রে আর সার ব্যবহারে কৃষি দফতরের সহযোগিতা পান না তারা। তাই না জেনেই এমন স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। অন্যদিকে কৃষি বিভাগের বলছেন কৃষকদের বারবার সচেতন করলে ও কাজে আসছে না কোনো কিছুই।


নেই কারও নাকে-মুখে মাস্ক বা কাপড়। হাতে নেই কোনো হাতমোজা বা গ্লাভস। কাঁধে ঝোলানো মেশিনে ভর্তি কীটনাশক। এভাবেই প্রতিদিন রোপা আমন বিস্তৃর্ন ধানখেতে কীটনাশক “বিষ” স্প্রে করছেন কৃৃষকরা। সকাল ৮ টার পূর্বে এবং বিকাল ৪টার পর কীটনাশক স্প্রে করার উপযোগী সময় এবং সার ও কীটনাশক স্প্রে করতে হলে বিশেষ পোশাক পরিধান করার নিয়ম রয়েছে।


লালমনিরহাটের কৃষকরা সারাদিন প্রখর রৌদ্রে এভাবেই হাজার হাজার বিঘা ধানক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম-কানুন বা দিকনির্দেশনা। অনেক কৃষক টি-শার্ট পরে  কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। কেউ আবার জমিতে আগাছানাশক মিশিয়ে হাতমোজা ছাড়াই হাত দিয়ে ছিটাচ্ছেন রাসায়নিক সার। কীটনাশকের  প্যাকেট বা বোতলের গায়ে স্পষ্ট অক্ষরে বিষ লেখা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। নিয়ম-নীতি না মেনেই কৃষকরা যে যার মতো জমিতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। আবার অনেকে মুখে মাস্ক ছাড়াই কীটনাশক স্প্রে করায় অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন।


জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষক তার ধান ক্ষেতে রোগ বলাই দমনে কীটনাশক স্প্রে করছেন। এ সময় আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার কৃষক আউয়াল মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন,কৃষি অফিস থেকে আমাদের এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমরা যখন সার ও কীটনাশক স্প্রে করি তখন আমাদের মাথা ঘোরে, বমির ভাব হয়। শরীরে বিভিন্ন অসুখ দেখা দেয়। আমরা সাধারণ কৃষক মানুষ।  সকাল হলেই ফসলের মাঠে যেতে হয়। এত নীয়ম মেনে কিভাবে চলবো?


আরও এক কৃষক এনামুল হক জানালেন, আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। কৃষিই আমাদের জীবিকার উৎস। বিধি মেনে চলতে গেলে স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইনের উদ্যেগ নিতে হবে কৃষি বিভাগকে। গ্রামের সাধারণ কৃষকরা এসব বিষয়ে জানেনা।


কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা চাঁপারতল এলাকার সুলভ মিয়া জানান, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় জমিতে ছিটানো কীটনাশকের দুগর্ন্ধে নিশ্বাস নিতে পারি না। চলাচল করতে কষ্ট হয়। দুই ভাবে এসব বিষাক্ত পদার্থগুলো শরীরে প্রবেশ করে। এতে করে রক্তে গিয়ে কান-মুখ, চোখ জ্বালাপোড়া করে। চামড়ায় ফোসকা পড়ে ঘা হয়। আবার লাে গেলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।


কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলী রাজিব নাসের বলেন, ধান ক্ষেতে স্প্রে করা এসব বিষাক্ত পদার্থগুলো শরীরে প্রবেশ করায় অনেকে লিভার সিরোসিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। তবে মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও পোশাক পরিধান করে কীটনাশক ব্যবহার করলে এসব রোগ থেকে সুরক্ষা সম্ভব।'


লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, ধান সহ বিভিন্ন ফসলে বালাইনাশক স্প্রে করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। যেমন বাতাসের বিপরিতে স্প্রে করা যাবে না। স্প্রে করার সময় মাক্স,গ্লাভস,চশমা ব্যবহার করতে হবে। যাতে শরীরের কোন অংশে এই কীটনাশকের কোন আবরন পৌছাতে না পারে।

নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে কৃষকরা যাতে ছত্রাক নাশক ও কীটনাশক স্প্রে করে সেজন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। বিভিন্ন উঠান বৈঠকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে, যাতে এই কীটনাশকের ঝুঁকি থেকে তারা রক্ষা পেতে পারে। তবে আমাদের কৃষকরা অনেক সচেতন রয়েছেন। সকাল ৮টার পূর্বে এবং বিকাল ৪টার পর ছত্রাক নাশক ও কীটনাশক স্প্রে করলে ফসলের গুনাগুন ভালো থাকে। এব্যপারে আমাদের পরামর্শ অব্যাহত আছে।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com