নদী ও সাগরে মাছ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক || ২০২৪-১০-১১ ২৩:১৫:২৮

image

মা ইলিশ রক্ষায় দেশের সাগর ও নদীগুলোতে মাছ শিকারের ক্ষেত্রে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।

 

শনিবার (১২ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টার পর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে যাচ্ছে। আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাগর ও নদীগুলোতে জারি থাকবে এ নিষেধাজ্ঞা। এ সময়ে সাগর ও নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার, মজুত ও পরিবহন দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে।


বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনা করে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে সামনে রেখে এই ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখার পাশাপাশি মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানও বাস্তবায়ন করা হবে। ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইতোমধ্যে নৌকাসহ মাছ ধরার সরঞ্জামাদী তীরে ওঠাচ্ছেন উপকূলের জেলেরা।


আইন অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে দায়ী ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।


প্রতি বছর এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ছুটে আসে। আমাদের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধির প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী ২২ দিন চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে লক্ষীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় কোনো জেলে নদীতে নামতে পারবেন না। ইতোমধ্যে পদ্মা-মেঘনা পাড়ের জেলেরা জাল-নৌকা তীরে উঠিয়ে নিচ্ছেন।


এদিকে কর্মহীন এ মৌসুম নিয়ে বরাবরের মতোই দুশ্চিন্তা ভর করেছে উপকূলবর্তী জেলেদের মাথায়। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে পরিবার-পরিজনের ভরন-পোষন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।


সূত্রমতে, অর্ধ লক্ষাধিক জেলে রয়েছেন চাঁদপুরে। এর মধ্যে ৪৩ হাজার জেলে নিবন্ধনকৃত। শুধু নিবন্ধনকৃত জেলেরাই সরকারি সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল পেয়ে থাকেন কর্মহীন এ মৌসুমে। তাই সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার দাবি এখানকার জেলেদের।


চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের বেশ কয়েকজন জেলে বলেন, কিছু কিছু জেলে আইন মানছে না। ২২ দিন মাছ ধরতে পারবো না কিন্তু পরিবার নিয়ে কিভাবে দিন কাটে সে খবর কেউ রাখে না। আমাদের যে চাল দেয়, সেটি দিয়ে কিছুই হয় না। চালের সঙ্গে আনুষঙ্গিক জিনিস লাগে। সে খরচ কীভাবে পাবো? ধারদেনা ও কিস্তির টাকা দিয়ে আমাদের চলতে হয়। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারি না। অভাবে পরে অনেক জেলে বাধ্য হয়েই নদীতে নামে।


আমাদের হাতিয়া প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনেও জেলেদের একই ধরনের আকুতি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে হাতিয়া সূর্যমূখী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলা উদ্দিন জানান, হাতিয়াতে ২০টি ঘাটে প্রায় ২ লাখ মানুষ মৎস আহরণের সঙ্গে জড়িত। এদের সবার জীবিকা নির্বাহ হয় নদীর মাছ শিকার করে। নদীতে মাছ পাওয়া না গেলে এদের সবাইকে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়। প্রতি বছরের মত এবারও জেলেরা সরকারের আদেশ পালন করবে। ইতিমধ্যে অনেকে ঘাটে জাল-নৌকা বেঁধে রাখছে। কর্মহীন এই মৌসুমে সন্তান ও পরিবার নিয়ে বাঁচার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন জেলেরা।


হাতিয়া ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রাশেদ উদ্দিন জানান, হাতিয়াতে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ শিকার করার মত অন্তত ৫০০ ট্রলার রয়েছে। ইতোমধ্যে তিন শতাধিক ট্রলার ঘাটে ফিরে এসেছে। শনিবার রাত ১২টার আগে সব ট্রলার ফিরে আসবে।


চাঁদপুরের নদীকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাউছার দিদার বলেন, এবার ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। বিগত বছরের ন্যায় এবারও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করেন তিনি।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, এ বছর ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে পালিত হবে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে কোনো জেলে নদীতে নামলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু জেলে নয়, কোনো সাধারণ ক্রেতার হাতে ইলিশ পাওয়া গেলে, তাকেও আইনের আওয়তায় আনা হবে। জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশের পাশাপাশি এবার সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে।


আর হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাহাদ হাসান বলেন, আগামী ২২দিন যেন কোন অসাধু জেলে নদীতে না নামেন, সেজন্য উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ঘাটে লিপলেট বিতরণ ও মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হয়েছে। আগামী ২২দিন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নদীতে ও সাগরে পাহারায় থাকবে। নৌ-পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের সঙ্গে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবেন।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: [email protected]
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: [email protected]