বালু সংকটে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে অচলাবস্থা চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব
মামুনুর রশিদ, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) ||
২০২৪-০৬-২২ ১০:১১:২৬
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বৈধ বালু মহাল বা বালুর উৎস না থাকায় সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে এক ধরনের অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সরকারী পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ঠিকাদারগন বালুর অভাবে সময়মত উন্নয়ন কাজ সম্পাদন করতে পারছেননা।
ঠিকাদারগন এখন বালুর চাহিদা পূরণে প্রধান উৎস হিসেবে উপজেলার বালু অধ্যুষিত এলাকার কৃষকদের
উপর ভর করেছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন এলাকায় সরেজমিনে গেলে অনেকেই অভিযোগ করেন, ঠিকাদারগন পরিবহন ব্যয় কমাতে বাহিরের জেলা থেকে বালু সংগ্রহের পরিবর্তে পার্বতীপুরের বালু
অধ্যুষিত এলাকাগুলির জমি মালিকদেরকে প্রলুব্ধ করছে মাটির গভীরের বালু উত্তোলন করে বিক্রি করতে।
ঠিকাদারগনের উন্নয়ন কাজে বালুর চাহিদা দেখে জমি মালিকরাও অতি মুনাফার আশায় অবৈধভাবে
ফসলী জমি নষ্ট করে স্কেবেটর মেশিন দিয়ে মাটির গভীরের বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উত্তর শালন্দার এলাকাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে চলছে এমন বালু উত্তোলন আর বিক্রির মহোৎসব। দীর্ঘদিন যাবত উত্তোলিত বালু ভর্তি শতশত ট্রাক বেপরোয়াভাবে চলাচলের কারনে গ্রামের
অন্যান্য কাঁচা পাকা রাস্তাসমুহেরও বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বালু উত্তোলনের কারনে পাশর্বর্তী জমি মালিকদের ফসলী জমির মাটি ধ্বসে পড়ছে।
এদিকে পার্বতীপুর এল,জিই,ডি অফিস সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে বৃহত্তর দিনাজপুর ও রংপুর বিভাগের
গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৫২টি প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বতীপুরে ১৪টি কাঁচা রাস্তা
পাঁকাকরনের কাজ চলমান আছে। সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারগন নিয়ম অনুযায়ী এসব কাঁচা রাস্তায় বক্স কার্টিং (গর্ত) করে রেখেছেন। এখন বালু ও ইটের খোয়া দিয়ে এসব গর্ত ভরাট করা প্রয়োজন। এরপর আরও আনুসাঙ্গিক কারিগরি কাজের মাধ্যমেই রাস্তা পাঁকাকরনের কাজ সম্পন্ন করার কথা। রাস্তাসমুহে আংশিক বালু ভরাট অবস্থায় থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বালু ভরাট করতে না পারায় উপজেলার বেশ কিছু রাস্তা এখন ভূতুড়ে খালে পরিনত হয়ে রয়েছে। সময়মত বালু ও ইটের খোয়ায় ভরাট করা সম্ভব না হওয়ায় বর্তমানে ভারী বৃষ্টিপাতে রাস্তাসমুহে চরম জলাবদ্ধতার সৃষ্টিসহ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এরূপ পরিস্থিতিতে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার ও সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগন বালু সংকটের ব্যাপারে পড়েছে উভয় সংকটে। একদিকে বালু সংকটে সরকারী কাজের অচলাবস্থা। অন্যদিকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের দৌড় ঝাপ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
তাহলে কি উপায়ে হবে বালুর সংকটের সমাধান? এসব বিষয়ে কথা হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগন জানায়, উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ছোট নদীসমুহের গতিপথ পরিবর্তনের ফলে পূর্বের গতিপথের বিস্তর এলাকা জুড়ে জমেছে বিশাল বালুর স্তুপ। ওইসব বালুর স্তুপসমুহ চিহ্নিত করে এবং পরিবেশ রক্ষার সম্ভাব্যতা যাচাই পূর্বক সেগুলিকে বালু মহাল হিসেবে অনুমোদন দেয়া হলে এলাকার বালুর চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে।
এছাড়াও ফসল বিনষ্ট করে বালু উত্তোলনের অবৈধ কর্মকান্ডও কমে যাবে। পাশাপাশি ইজারা প্রদানের
মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব কোষাগারেও জমা হবে বিপুল পরিমানের অর্থ। পরিবেশবাদী সচেতন লোকজনের দাবী, বৈধ বালু মহাল ঘোষনার পাশাপাশি ফসলী জমির বালু উত্তোলন বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর হওয়া জরুরী।
এসব বিষয়ে কথা হলে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)
খালিদ বিন মনসুর বলেন, ইতিপূর্বে দিনাজপুর জেলায় বেশ কয়েকটি বৈধ বালু মহাল থেকে বালু ক্রয় করে
অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করা হতো। কিন্তু গত ৪/৫ বছর যাবত অধিকাংশ বালু মহালের ইজারা প্রদান বন্ধ
থাকায় এ উপজেলার গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ কিছু বিলম্বিত হচ্ছে। বালু সংকট সমাধানে বৈধ বালু মহাল সনাক্তে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। পাওয়া গেলে সরকারী বিধি মোতাবেক টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা প্রদান করা হলেই এলাকার বালু সংকট কেটে যাবে। কর্মকর্তাগন আরও জানান, ফসলী জমির বালু
উত্তোলন বন্ধ করতে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু দোষীদের জরিমানাও প্রদান করা হয়েছে। সব এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357