ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরসম্পদ দখলে বার বার আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন
মজিবুর রহমান খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ||
২০২৪-০৬-১২ ১৩:১৯:৫২
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বড়াইল গ্রামে অন্যের সম্পদ দখলে আদালতের নির্দেশকেও বারংবার লঙ্ঘন করছেন আবুল হোসেন গংরা।এলাকায় সুইডেন আলাউদ্দিন নামে খ্যাত স্বঘোষিত সমাজসেবক এহেন অপকর্মে পর্দার অন্তরালে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় আদালতের 'স্থিতিবস্থার আদেশ' বজায় রাখতে থানার ওসি স্থানীয় বিট পুলিশের কর্মকর্তা ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে দখল কাজে ব্যবহৃত নির্মাণকাজের যন্ত্রপাতি জব্দ করেন। পাশাপাশি নালিশা ভূমিতে আর কোনরূপ কর্মকাণ্ড চালালে গ্রেপ্তার করার হুশিয়ারি প্রদান করেন।
আদালতে চলমান মামলা, স্থানীয় এলাকাবাসী এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলার নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের বাসিন্দা আবদুল জলিল (প্রয়াত) বড়াইল মৌজাস্থিত একাধিক দাগে বাড়ি, ভিটা, পুকুর, নাল, কবরস্থান ডোবাসহ বিভিন্ন শ্রেণীভূক্ত ভূমির মালিক স্বত্তবান হিসেবে তার নামে ২২২ নং বিএস খতিয়ানভূক্ত। তন্মধ্যে অনেকাংশ ভূমি পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত যা তদীয় পিতা ওলফত আলীর নামে ১১৮ নং সিএস এবং ১১৫ নং এসএ খতিয়ানভূক্ত। প্রয়াত আবদুল জলিলের ত্যাজ্য সম্পত্তি তদীয় ওয়ারিশগণ যুগ-যুগান্তে নিরঙ্কুশ ভোগ দখলে বিদ্যমান। আবদুল জলিলের পুত্র-কন্যাগণ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণান্তে বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োজিত হয়ে দেশে-বিদেশে অবস্থান করায় পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি তাদের বংশীয় চাচা, ভাইয়েরা (আবুল হোসেন গং) দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তৎসুবাধে আবুল হোসেনের পুত্র স্বঘোষিত সমাজসেবক সুইডেন আলাউদ্দিনের ইন্ধনে আবুল হোসেন গংরা আবদুল জলিলের ত্যাজ্য সম্পত্তি জবরদখলের পাঁয়তারা করা এমনকি ওয়ারিশানদের বেদখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে নালিশা ভূমি (সাবেক ৩১৬ হালে ৬৫৫ দাগে ০৩ শতক ডোবা ভূমি ও সাবেক ৩১৭ হালে ৬৫৬ দাগে ১১ শতক ভিটি ভুমি, উভয় দাগে একুনে ১৪ শতক বর্তমানে ভিটি ভূমি) সংক্রান্তে আবুল হোসেন বাদী হয়ে মোহাম্মদ আরিফ গংকে বিবাদী করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যিগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে মামলা (দে.২৩৭/২০২০) দায়ের করেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন। এরই মাঝে নালিশা ভূমিতে আবুল হোসেন গংরা গৃহ নির্মাণের পাঁয়তারা করায় মোহাম্মদ আরিফ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌ.কা.বি'র ১৪৪/১৪৫ ধারায় আবুল হোসেন গংদের বিপক্ষে মামলা (নং পি-৯১২/২০২০) আনয়ন করলে আদালত দ্বিতীয় পক্ষকে কারণ দর্শানোসহ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ওসি নবীনগর থানাকে নির্দেশ দেন। এসবের পরও আবুল হোসেন গংরা নালিশা ভূমিতে গৃহ নির্মাণ শুরু করলে আদালত দ্বিতীয় দফায় স্থিতিবস্থা'র আদেশের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। এদিকে স্থানীয় বড়াইল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এ.বি.এম. ফরিদ উদ্দিন কর্তৃক সরেজমিন তদন্তে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন (স্মারক নং ৩১, তারিখ: ২৯.১২.২০২২খ্রি.) মর্মে নবীনগর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) প্রদত্ত প্রতিবেদনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে অবহিত করেন যে, বাদীপক্ষ (মোহাম্মদ আরিফ গং) প্রকৃতপক্ষে রেকর্ডীয় মালিক, ভূমি উন্নয়ন করও নিয়মিত পরিশোধ করে আসছেন। বাদীপক্ষ গ্রামে না থাকায় বিবাদী পক্ষ নালিশা ভূমি বিভিন্নভাবে দখল তছরুপ করছেন। অপরদিকে নবীনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রনি সোরে রানা সরেজমিন তদন্তে অনুরূপ সত্যতা প্রাপ্ত হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন (স্মারক নং১৪০৩, তারিখ : ১৭.১১.২০২০খ্রি.) দাখিল করাসহ বিরোধীয় ভূমির প্রতি পুলিশী নজরদারী অব্যাহত থাকার বিষয়ও অবহিত করেন। অপরদিকে দেওয়ানী মামলার ৭ নং বিবাদীর (নাজরীন আখতার) আবেদনের প্রেক্ষিতে যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক গত ০৯ জুন তারিখে প্রদত্ত আদেশে উল্লেখ করেন, বিগত ০৪ এপ্রিল প্রদত্ত ২ নং আদেশে বাদীগণকে (আবুল হোসেন গং) সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদানসহ আপত্তি দাখিল না করা পর্যন্ত নালিশা ভূমিতে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয়া সত্ত্বেও বাদীগণ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে নালিশা ভূমিতে গৃহ নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখে। স্থিরচিত্রে পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি এবং গৃহ নির্মাণের আলামত পরিলক্ষিত। তৎপ্রেক্ষিতেই আদালত ইতোপূর্বেকার স্থিতিবস্থার আদেশ বজায় রাখার স্বার্থে আদেশ বাস্তবায়ণের নিমিত্তে ৬৪ নং স্মারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে নবীনগর থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করাসহ ০৭ জুলাইয়ের পূর্বে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ প্রদান করা হয়। আদালতের নির্দেশে আদিষ্ট হয়ে নবীনগর থানার ওসি ১১ জুন সকালে স্থানীয় বিট পুলিশের কর্মকর্তা ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজের যন্ত্রপাতি জব্দ করেন। পাশাপাশি আর কোনরূপ কর্মকাণ্ড চালালে গ্রেপ্তার করার হুশিয়ারি প্রদান করে আবুল হোসেন গংদেরকে নালিশা ভূমি 'স্থিতিবস্থা' বজার রাখার নির্দেশ দেন।
নবীনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুব আলম বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, 'বাদীপক্ষের কতেক সদস্য গত ০৯ জুন তারিখের আদেশটি আদালত 'স্থগিত' করেছেন, আমাকে এমন ভুল তথ্য দিয়ে নির্মাণ কাজ করতে থাকে। বিবাদী পক্ষ আমাকে বিষয়টি অবহিত করার পরই মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বিট পুলিশের কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজের যন্ত্রপাতি জব্দ করে পুনরায় কোনরূপ কর্মকাণ্ড চালালে গ্রেপ্তার করার হুশিয়ারি প্রদান করে আবুল হোসেন গংদেরকে নালিশা ভূমি 'স্থিতিবস্থা' বজার রাখার নির্দেশ প্রদান করি। নির্ধারিত সময়েই এই বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবো এবং নালিশা ভূমিতে পুলিশী নজরদারী অব্যাহত আছে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357