গরু মোটা তাজাকরণে সবুজ ঘাস,খড়,ভূষি'র পরিবর্তে এখন দিনাজপুরে ভুট্রা গাছের অংশ বিশেষ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গো-খাদ্য হিসেবে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণে খামারীদের মধ্যে এই ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পালিত গরুকে সবুজ ঘাস,খড় খাওয়ানোর পাশাপাশি ভুট্টা গাছের উপরের অংশ খড় কাটা মেশিনে কুচি কুচি করে কেটে রোদে শুকিয়ে নেওয়ার পর তা গরু ও মহিষকে খাওয়াচ্ছেন অধিকাংশ খামারি । বিশেষ করে কোরবানি ঈদ উপলক্ষে যে সব খামারি গরু মোটাতাজা প্রকল্প গড়েছেন,তারা এই ভুট্রা গাছের তৈরি খাদ্য গরু-মহিষকে খাওয়াচ্ছেন। এতে গো-খাদ্য দুর্লভ বাজারে তাদের অনেকাংশ খরচ কমে যাচ্ছে।নিজেদের তৈরি এ খাদ্য খেয়ে গরু ও মহিষ দ্রুত বর্ধনশীল হচ্ছে। সেই সাথে খামারীদের কমে যাচ্ছে গরু ও মহিষ পালন খরচ। এতে গো-পালনে কম খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।
সরজমিনে বীরগঞ্জ উপজেলা মোহনপুর এলাকার গরু খামারী রেজওয়ানুল ইসলাম (সবুজ) এবিষয়ে কথা হয়।তিনি এ এপ্রতিবেদককে জানানা, 'আমার ৭ টি গরু রয়েছে। এই গরুগুলোর পিছনে প্রতিদিন সবুজ ঘাস,ভূষিসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী দিতে হয়।এতে অনেক টাকা খরচ পড়ে যায়। তাই গরুর খাদ্যে খরচ কমাতে আমি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছি। ভুট্টা গাছের উপরের অংশ কেটে ছোট ছোট টুকরো করে খাদ্য তৈরি করি। প্রথমে পরীক্ষামুলক অল্প করেছিলাম। দেখলাম, গরু ভালোই খাচ্ছে। তখন আমার লাগানো দুই বিঘা উচিষ্ট ভুট্টা গাছের উপরের অংশ খড় টাকা মেশিনে কেটে সেগুলো ভালো মতো রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখছি। যাতে ভুট্টার অফ সিজিনেও সময় মতো গরুকে খাওয়াতে পারি। এই খাদ্য খাওয়ার পর গরু অল্প দিনে বর্ধনশীল ও মোটা হচ্ছে। এতে গো পালনের বাড়তি খরচ কমে গেছে।'
একই অবস্থা পরিলক্ষিত হল, আশরাফুল ইসলাম নামে এক খামারির। তিনি গরু পালনের পাশাপাশি ৬ টি মহিষ পালন করছেন। তিনি এবছর প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তিনি চাষকৃত ভুট্টা ঘরে তুলবেন। কিন্তু তার এলাকার অনেকেই ভুট্টা গাছের ডগা হতে গরু-মহিষের খাদ্য তৈরি করছে এটা তার জানা ছিল না। স্বচক্ষে দেখার পর ভুট্টা গাছের ডগা হতে তিনিও গরু-মহিষের খাদ্য তৈরি শুরু করেছেন।
এতে প্রতি বিঘা ভুট্রা গাছের ডগা খড় কাটা মেশিনের কাটতে খরচ হয় এক হাজার থেকে এক হাজার দুইশত টাকা। এতে সবুজ ঘাস ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর উপর চাপ কমে গেছে। গরু-মহিষ পালনে তার খরচ কম লাগছে।'
যাদের ভুট্রা ক্ষেত নেই,কিন্তু গরুর খামার রয়েছে,তারাও এখন অন্যের ক্ষেত থেকে ভুট্রা গাছের উচ্ছিষ্ট ডগা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ভুট্রার ডগা খড় কাটা মেশিনে কেটে নিয়ে রোদে শুকিয়ে মজুত করে রাখছেন,গো-খাদ্য হিসেবে।
ফয়জার,তোফাজ্জল,মকবুল,মিলন,মুজিবুর সহ এমন বেশ কয়েকজন গো-খামারির সাথে কথা হয়েছে।
আগে এই ভুট্রার উচ্ছিষ্ট ডলা কেউ কেউ রোদে শুকিয়ে চুলোয় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতো। আবার অনেক সময় তা ক্ষেতেই পচে গলে যেতো। এখন তা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পেরে তারা খুবই খুশি। কারণ,গরু-মহিষ পালনে তাদের অনেক হিমসিম খেতে হয়। উর্ধগতি দ্রব্যমূল্য বাজারে সংসার চালাতেই তাদের অবস্থা খারাপ।সেখানে উর্ধদামে গো-খাদ্য ক্রয় করে গরু-মহিষ পালন করা এখন খুবই দুষ্কর বলে দাবি তাদের। তাই বিকল্প গো-খাদ্যে তাদের ভাগ্য খুলেছে বলে তারা আনন্দ প্রকাশ করেছেন।'
এ এবিষয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোঃ ওসমান গনির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'ভুট্টা গাছের উপরের অংশ পুষ্টিকর গো-খাদ্য। ভুট্টা গাছের ফেলে দেয়া উচিষ্ট উপরের অংশ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।এতে কোন বিরূপ কিংবা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। অনায়াসে তা গরু-মহিষকে খাওয়ানো যায়।এটি তৃনভোজি খাদ্য। এখাদ্য খাওয়ালে গরু-মহিষ পালনে খরচও কমে যায়। খামারিরা লাভবান হয়।
আমাদের এলাকায় ভুট্টা গাছের উচ্ছিষ্ট ডগা খাদ্য ইদানিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।শুনেছি অনেকই তা গরু-মহিষকে খাওয়াচ্ছে। এর ফলে সবুজ ঘাস ও অন্যান্য খাদ্যের উপর চাপ কমেছে।'
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com