দিনাজপুরে তীব্র তাপদাহে গ্রীষ্মকালীন নাবি জাতের টমেটো নিয়ে বিপাকে কৃষক

দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ || ২০২৪-০৪-২৯ ০৯:৫২:৫২

image

তীব্র তাপদাহে দিনাজপুরে গ্রীষ্মকালীন নাবি জাতের টমেটো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। টমেটো বাজারে ধস নেমেছে। গাবুড়ার পাইকারি হাটে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে, ৪' থেকে ৫'টাকা দরে। অথচ ক'দিন আগে এ টমেটো বিক্রি হয়েছে, প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১২' শ  টাকয়। 

প্রচণ্ড তাপদাহ ও গরমে টমেটো ক্ষেতে রাখা যাচ্ছে না যেমন, তেমনি পাইকাররা টমেটো কিনে  সরবরাহ করতে পারছেনা দেশের বাজারে।এতে ক্ষেত এবং পরিবহণের সময় সড়কেই পচে নষ্ট হচ্ছে, টমেটো।

তীব্র তাপদাহে কৃষক ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে কৃষি শ্রমিক পাচ্ছেনা। এতে গরমে খেতেই পচে যাচ্ছে টমেটো।
দেশে জুড়ে চাহিদা রয়েছে,দিনাজপুরের গ্রীষ্মকালীন নাবি জাতের টমেটোর। দেখতে আকর্ষণীয় স্বাস্থ্যসম্মত ও সুস্বাদু এই টমেটো উৎপাদন করে সারা বছর এর উপার্জিত অর্থ নিয়ে চলে এ জেলার অসংখ্য কৃষক। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া এই গ্রীষ্মকালীন নাবি জাতের টমেটো উৎপাদনের উপযোগি হওয়ায় এবার ফলনো হয়েছে,ভালো।

উত্তরাঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন নাবি জাতের টমেটোর সবচেয়ে বড় হাট বসে দিনাজপুর সদর উপজেলার ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুড়ায়। ভোর সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া এ হাট চলে সকাল  ৮ টা পর্যন্ত। প্রতি বছর মৌসুমি এ হাটে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় কমপক্ষে দুই হাজার লোকের। প্রতিদিন এই হাট থেকে টমেটো বোঝাই দুই শতাধিক ট্রাক টমেটো নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। 

সরজমিনে সোমবার ( ২৯ এপ্রিল)  সকালে গাবুড়া হাটে গিয়ে কথা হয় বেশ ক'জন কৃষক ও পাইকারদের সাথে।
শেখপুরা মাস্তান বাজার এলাকার কৃষক অসিয়ার রহমান জানান,তিনি এবার ১২ কাঠা মাটিতে টমেটো লাগিয়েছেন। এতে তার উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এবার টমেটো বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠছেনা।
একই কথা জানালেন,মাধবপুর এলাকার কৃষক গণেশ চন্দ্র।

তিনি বলেন, 'কয়েক দিন যেই  আম বাইগোন (টমেটো) বেচিনো ১২' টাকা মণ দরে,সেই টমেটো আইজ ( আজ) বেচিনো(বিক্রি) সাড়ে চাইর ( চার) 'শ টাকা করি । হামরা (আমরা) বাচিমো ক্যামন করি হেনে। হামার কৃষকের বাচিবার উপায় নাহি। ডিজেল,সারের দাম বেশি। পাইট ( কাজের লোক) খুঁজি পাইনা। মুজুরি বেশি। আর হামার ফসলের দাম নাই!'

 শেখপুরা ইউনিয়নের সরকারপাড়া এলাকার রিয়াজুল ইসলাম, সুন্দরবন ইউনিয়নের মিয়াজীপাড়ার মোখলেসুর রহমান, সদরপুর এলাকার রমজান আলী তারা এবার বিপুল প্লাস, রানী ও প্রভেন সিড নামে তিন জাতের টমেটো চাষ করেছেন।  সার, ডিজেল ও বীজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কামলাদের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার টমেটো উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। সেই মোতাবেক ফলন বৃদ্ধি পেলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না তারা। এতে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।

অতিরিক্ত গরমে দিনাজপুরের গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাজারে ধস টমেটো হাটের আড়তদার তারা মিয়া, শফি উদ্দিন, দেলোয়ার, ওয়াফেজ, তারা মিয়া জানান, প্রতিদিন এই টমেটো হাট থেকে দেড়'শ থেকে দুই শতাধিক টমেটো বোঝাই গাড়ি রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এখন মণ প্রতি সর্বোচ্চ সাড়ে ৪'শ  থেকে ৫'শ টাকায় কেনাবেচা চলছে।  কোয়ালিটি অনুযায়ী টমেটো কেনা হচ্ছে।প্রথম দিকে এই টমেটো ১১' থেকে ১২'শ টাকা মণ পর্যন্ত আমরা আড়তদাররা ক্রয় করেছি।  কিন্তু এখন গরমের কারণে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় পথে সড়কে টমেটো পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই,বাইরে টমেটো পাঠাতে আমরা ভয় পাচ্ছি।' 

অন্যদিকে ক্ষেত থেকে টমেটো তুলতে অনীহা কৃষক।  ফলে তীব্র তাপদাহ আর গরমে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছেন,অধিকাংশ টমেটো। 
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.নুরুজ্জামান জানান, 'জেলায় এ বছর গ্রীষ্মকালীন নাবি জাতের টমেটোর আবাদ হয়েছে ৯৬০ হেক্টর জমিতে। গত বছর যা ছিল ৯৩৪ হেক্টর জমিতে।

তিনি আরো জানান, কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে টমেটো সংরক্ষণের জন্য দিনাজপুরের চিরিরবন্দর ও বীরগঞ্জ উপজেলায় দু'টি মিনি হিমাগার স্থাপনের কাজ চলছে.শীঘ্রই তা চালু করা হবে। এ হিমাগার দু'টি বাস্তবায়িত হলে জেলায় এই গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে যাবে।'

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দিনাজপুর সদর,বিরল, চিরিরবন্দর, খানসামা, বীরগঞ্জ,সেতাবগঞ্জ, ফুলবাড়ি ও বিরামপুর উপজেলায় এই গ্রীষ্মকালীন নাবি জাতের টমেটোর আবাদ হয়ে আসছে। টমেটোর বীজ বোনা শুরু হয়ে থাকে ডিসেম্বর মাসে। দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই টমেটো গাছে ফল আসে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জুন মাস পর্যন্ত টমেটোর ফলন হয়। এবার ফলনও ভালো হয়েছে।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com