সীমান্তে হঠাৎ বেড়েছে মাদক চোরাচালান

নিজস্ব প্রতিবেদক: || ২০২০-০৯-০৮ ০৪:৫৭:০২

image

সীমান্তে হঠাত্ বেড়েছে মাদকের চোরাচালান। দেশের ৩২টি জেলার ৪২টি পয়েন্ট দিয়ে বেশি আসছে ফেনসিডিল। টেকনাফের ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা আসছে। তবে চারটি পয়েন্টে এখন ইয়াবা পাচার জমজমাট। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তার সহায়তায় এসব মাদক সারা দেশে বিক্রি হচ্ছে দেদার।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আহসানুল জব্বার জানান, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান ইতিমধ্যে জোরদার করা হয়েছে। সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক মাদক উদ্ধার হয়েছে। মাদক নির্মূলে সবার সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, মাদক নির্মূল করতে যা যা দরকার, সবই করা হবে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। বাড়ছে সংক্রমণের ভীতিও। কিন্তু করোনার এই দুর্যোগকালেও বসে নেই মাদক কারবারিরা। নিত্যনতুন কৌশলে মাদকের চোরাচালান আসছে।

কখনো ত্রাণবাহী কিংবা জরুরি পণ্যবাহী যানে; মাছ ধরার ট্রলার, কাভার্ড ভ্যান, কখনো পায়ুপথে, কখনো যানবাহনের ইঞ্জিনের কাভারে করে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে গাঁজা, ফেনসিডিল কিংবা ইয়াবা। করোনার মধ্যে মাদকসেবীদের জন্য হোম ডেলিভারিও হচ্ছে। করোনাকালে রাজধানীসহ সারা দেশে অপরাধ কমলেও হঠাত্ মাদকের চোরাকারবার বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে সবজি, চাল, ডাল ও অ্যাম্বুলেন্সে স্থানান্তর হচ্ছে ইয়াবা।

প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ইয়াবা, ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়ছে। ৩২টি সীমান্তবর্তী জেলার প্রতিনিধিরা জানান, প্রতিদিনই মাদকের চালান আসছে। নৌ ও সড়কপথে এসব মাদক সারা দেশের গ্রাম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তবে নৌপথে বেশি যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর ও সাতক্ষীরা দিয়ে ফেনসিডিল বেশি আসছে। ইতিমধ্যে বগুড়ায় মাদকের বড় চালান ধরেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে গাঁজা ও ফেনসিডিল বেশি আসছে।

অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার অরক্ষিত। এসব পথ দিয়ে অস্ত্র ও মাদক আসছে। বিশেষ করে টেকনাফের চারটি পয়েন্ট দিয়ে বেশি ইয়াবা আসছে। টেকনাফ সীমান্তবর্তী নাফ নদীর ওপারে হলো ইয়াবার কারখানা। দুই দেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যায়ে একাধিকার বৈঠক হলেও ঐ সব কারখানা বন্ধ হয়নি। প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। টেকনাফ থেকে এসব ইয়াবা নৌপথে বরিশাল, পিরোজপুর হয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও মোংলা-খুলনায় চলে যাচ্ছে।

অন্যদিকে আরেকটি দেশের সীমান্তে ফেনসিডিলের কারখানাও আছে। মাঝখানে সেগুলো বন্ধ ছিল। এখন আবার সেগুলো চালু হয়েছে। ডিমান্ড বেশি হওয়ায় কারখানা চালু হয়েছে। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, ঐ সব কারখানা চালু হয়েছে কি না, জানি না। তবে সীমান্তে ফেনসিডিল পাওয়া যাচ্ছে।

বর্তমানে দেশের প্রতিটি গ্রামে মাদক পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। নইলে প্রতিটি ওয়ার্ড ও গ্রামে মাদক পাওয়া যায় কীভাবে? স্থানীয় একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতাকর্মী মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন প্রকাশ্যে। মোটা অঙ্কের টাকা মাসে উেকাচ পান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য।

অন্যদিকে নৌপথে মাদকের বড় বড় চালান আসছে, কিন্তু শতকরা ২ ভাগও ধরা পড়ছে না। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সোর্স আছে, যারা মাদকের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকেন। কিন্তু সোর্সদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না। প্রচলিত আছে, ১ হাজার বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হলে সোর্সকে দিতে হয় ৩০০ বোতল।

পরবর্তী সময়ে সোর্সরা ঐ সব মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় সোর্সমানি হিসেবে। এসব টাকার কোনো হিসাব দেওয়া হয় না।

অন্যদিকে হঠাত্ করে মাদকের চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার কারণ জানা যায়নি। তবে করোনা মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনীর করোনা ভাইরাস সুরক্ষা কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারি চক্রগুলো।

তল্লাশি ও নজরদারিতে কিছুটা শিথিলতা তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন কৌশলে দেশে মাদকের চালান আনছে তারা। ওষুধ কেনাসহ বিভিন্ন অজুহাতে সরাসরি গিয়ে এবং কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো পার্সেলের মাধ্যমেও মাদক বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে দুটি চালান জব্দ করা হয়। একটি চালান পাঠানো হয়েছিল মুরগির গাড়িতে। আরেকটি চালান ছিল কাভার্ড ভ্যানে। লবণবোঝাই ঐ কাভার্ড ভ্যান থেকে ৫৯ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) মাসুম রাব্বানী বলেন, করোনার কারণে মাদকবিরোধী অভিযান কিছুটা ধীরগতিতে চললেও এখন আবার অভিযান জোরালো করা হয়েছে সারা দেশে। এ অভিযান চলবে।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com