কালো সোনা নামে পরিচিত পেঁয়াজ বীজ চাষ করে লাখপতি ঠাকুরগাঁওয়ের মোয়াজ্জেম হোসেন। এক সময়ের বেকার মোয়াজ্জেম এখন হয়েছেন অন্যের অনুপ্রেরণা। এখন তার উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজের চাহিদা থাকায় সেটি সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। স্থানীয়রা মনে করছেন তার পিয়াজের বীজ দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে রাখছে বড় ভূমিকা।
ফুলের বাগান কিংবা নকশী কাঁথার মাঠ নয়, এটি দিগন্তজোড়া পেঁয়াজ বীজ ক্ষেত। মাঠ জুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে সাদা রংয়ের পেঁয়াজের ফুল। এ দৃশ্য ঠাকুরগাঁও এর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামের। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সাদা ফুলের মাঝেই লুকিয়ে আছে পেঁয়াজের বীজ যা কালো সোনা নামে পরিচিত।
দেশে পেঁয়াজের ঘারতি মেটাতে ও দাম বেশী হওয়ায় পেয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। গত বছর তিনি ৩৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে লাভ করেছিলেন প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। এ বছর তা বাড়িয়ে তিনি ৪৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন পেঁয়াজের বীজ। কিছুটা বৈরী আবহাওয়া থাকলেও এবছর ১৫ লাখ টাকা মুনাফার আশা করছেন তিনি। মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি প্রান্তিক পর্যায়ের এক কৃষক। আগে আমার বাবা এই কৃষি কাজ করতো। পরবর্তীতে দেখি কৃষিকাজ বেশ লাভজনক। তাই আমি কৃষিকাজে ঝুকেছি। তিনি বলেন সবাই আমরা চাকরির পিছনে ছুটি। কৃষিতেও যে ভালো কিছু করা যায় বা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে যে ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায় আমি তার উদাহরণ। এক সময় আমার কিছুই ছিল না এই পেঁয়াজের বিজ চাষ করে এখন আমি লাখপতি। নিজের টাকায় জমি কিনেছি। ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আর্থিক দিক দিয়ে এখন আমি সচ্ছল। মোয়াজ্জেম হোসেন আরো বলেন, যেসব জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয় সেসব জায়গায় আমার এই বিজ বেশ সুনাম কুরিয়েছে। আমার উৎপাদিত এই পেঁয়াজ বিজ দিয়ে ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে ছোট হলেও একটি কোম্পানি তৈরি করব। আমি নিশ্চয়ই এই পেঁয়াজের বিজ দিয়েই আমার ভাগ্যের পরিবর্তন আরও হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী হওয়ায় এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে জেলার অন্যান্য কৃষকরাও। বীজ উৎকৃষ্টমানের হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। উপকারী পোকা কমে যাওয়ায় হাতের স্পর্শেই কৃত্রিম ভাবে পরাগায়ন ঘটিয়ে সুফলও পাচ্ছে তিনি। এতে করে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে তার জমিতে।
মোয়াজ্জেমের জমিতে কাজ করা এক শ্রমিক ফখরুল আলম বলেন, মোয়াজ্জেমের জমিতে হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন ঘটানোর কাজ করি। আগে বেকার ছিলাম এখন আমার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এখানে। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে আমার সংসার খুব ভালোভাবে চলে যায়। শুধু আমি নয় আমার মত আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এখানে।
কলেজ ছাত্রী হাফিসা বলেন, আমি পড়াশোনা করি পাশাপাশি পেঁয়াজের বীজের খেতে কাজ করি। যা আয় হয় তা দিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারেও কিছু দিতে পারি।
মোয়াজ্জেমের পেঁয়াজের বীজের খেত দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বীজ আবাদ শুরু করেছেন এলাকার অনেক কৃষকই। এক কৃষক মফিদুল ইসলাম বলেন, আগে আমার খেতে আমি অন্যান্য ফসল আবাদ করতাম। মোয়াজ্জেম ভাইয়ের পিয়াজের বীজ আবাদ করা দেখে এবং লাভের কথা শুনে তার পরামর্শে পিয়াজের বীজ চাষে ঝুকেছি। আমিও প্রায় দশ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছি। ফলোনো ভালো পেয়েছি আশা করছি ভালো দাম পাব এবং লাভবান হব।
এ বছর ১২ কোটি টাকার পেঁয়াজের বিজ উৎপাদিত হবে এ জেলায়। আর দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানোর জন্য ভালো মানের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোছাম্মৎ শামীমা নাজনিন। তিনি বলেন অন্যান্য মাঠ ফসলের চেয়ে পেঁয়াজের বীজ চাষে লাভবান হওয়া যায় বেশি। এবছর ১০২ মেট্রিক টন পেঁয়াজের বীজ ঠাকুরগাঁও জেলায় উৎপাদিত হবে বলে আশা করছি।এবং যার মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা।
এ বছর জেলায় ১১৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদিত হয়েছে। এ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে সারা দেশে পেঁয়াজের যে ঘাড়তি রয়েছে সে ঘাড়তি পূরনে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com