দিনাজপুরের বাগানি ও চাষিরা প্রকৃতির রসগোল্লাখ্যাত 'লিচু' নিয়ে এবার চরম বিপাকে পড়েছেন। মুকুল থেকে গুটি আসার পরপরই অব্যাহত অনাবৃষ্টি আর দাবদাহের কারণে পুড়ে যাচ্ছে লিচুর গুটি। এই অবস্থায় বাগানে সেচসহ পরিচর্যা করে গাছে লিচু রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বাগান মালিক ও লিচু চাষিরা।
লিচুপুরী পরিচিত দিনাজপুরে বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের লিচুচাষী খাদেমুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত তাপের কারনে এবার লিচুর ফলন নিয়ে শংকায় আছি। প্রতিকূল এই আবহাওয়ার কারণে এবার লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হবে। মুকুল থেকে গুটি না বেরছলেই তাপদাহে ঝরে যাচ্ছে সবগুটি। গাছে সেচ আর স্প্রে করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছেনা।
বিরল প্রেসক্লাবের সভাপতি বৈদেশিক কবিয়াল এম.এ কুদ্দুস জানান, প্রতি বছর লিচুর মৌসুমে এই অঞ্চলে হাজারও মানুষের কর্ম-সংস্থান হয়। এ অঞ্চলের অনেকের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল এ লিচুর উপরেই। কিন্তু এ মৌসুমে লিচু নিয়ে চরম বিপাকে এ অঞ্চলের মানুষ। যারা মৌসুমি লিচু বাগান ক্রয় করেছেন,সেইসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হা-হুতাশা পরিলক্ষিত হয়েছে।অনেকে বাগান ছেড়ে চলে গেছেন।'
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তের উপপরিচালক মো.নুরুজ্জামান জানালেন, 'প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে গাছে লিচু রক্ষায় চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। তবে,এভাবে তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে এ মৌসুমে লিচু ফলনে বিপর্যয় দেখা দিবে।'
দিনাজপুর সদর উপজেলায় শহরের উপকন্ঠে মাসিমপুর এলাকার লিচু চাষি মোবাররক হোসেন বলেন, 'তার বাগানের চিচুর গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল এবার । প্রতিটি গাছেই ব্যাপক মুকুল আসায় তিনিভ এবার লিচু নিয়ে বেশ লাভের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু গুটি আসা অবস্থায় তীব্র রোদ আর গরমের কারণে পুড়ে গেছে। ঝরে পড়ছে লিচুর গুটি।'
লিচু বাগানি মমিনুল জানালেন,'লিচুকে কেন্দ্র করেই চলে তাদের জীবন ও জীবিকা । কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরণে লিচুর ফলন নিয়ে শঙ্কায় তারা। এবার কি হবে,এনিয়ে তারা খুবই দু:চিন্তায়।'
কৃষিবিদ প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, লিচুর মুকুল থেকে গুটি আসার সময় সাধারণত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তা ফলনের জন্য বেশ ভালো। এর বেশি হলে লিচু ঝরে পরার আশকাই বেশি।এবারের তাপমাত্রা খুবই অসহনীয়। তাই,লিচু নিয়ে চাষিদের দু:চিন্তা হওয়ারি কথা।'
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, দিনাজপুরে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। তাপমাত্রা এইভাবেই ক'দিন অব্যাহত থাকবে।এখন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।'
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর তিনটায় দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এদিকে বুধবার মাধববাটী, মাসিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, লিচুর বাগানে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন চাষিরা। বিরল উপজেলার কালিয়া গঞ্জের লিচুচাষি আজাহার বললেন, সেচ দিতে বাড়তি খরচ হলেও এখন এছাড়া উপায় নেই। দিনাজপুরের গুন্জাবাড়ী এলাকার লিচু চাষি আকাশ ও নয়ন জানানা,এ বছর মুকুল দেখে অনেক খুশি ছিলাম রোদের তাপে সব ঝড়ে গেল, তাই লাভের আশা বাদ দিয়ে গাছ টিকিয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
সঠিকভাবে ওষুধ প্রয়োগ করে তাহলে পর্যাপ্ত ফলন পাব কিনা জানা নেই অনেক হতাশ হয়েছি।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান এর সাথে কথা বলে জানাযায় , চাষিদের আমি বিকালে বা সন্ধ্যায় লিচুগাছে নিয়মিত সেচ এবং স্প্রে করার পরামর্শ দিই। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা যেভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে লিচুর ফলনের বেশি ক্ষতি হবে না।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান জানান, জেলায় বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরেরও বেশী জমিতে লিচুর গাছ রয়েছে। লিচুগাছে এবার প্রচুর মুকুল আসার পরও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছু মুকুল ঝরে যাচ্ছে। তারপরও এখন দানা পর্যায়ে চলে এসেছে। সেক্ষেত্রে আমরা চাষী পর্যায়ে বলছি-এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা যদি সঠিকভাবে সেচ দেয়, সঠিকভাবে ওষুধ প্রয়োগ করে- তাহলে এই লিচুকে আমরা হারভেস্ট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারব এবং আমরা পর্যাপ্ত ফলন পাবো।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, দিনাজপুরে এক সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে তাপমাত্রা বিরাজ করছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সপ্তাহের রবিবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।আজ বুধবার তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন তাপমাতা এমনি অব্যাহত থাকবে।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com