ভোলায় ৩ মাসের অধিক ৩৪.৫ মেঘাঃ রেন্টাল পাওঃ প্লান্ট বন্ধ; চরম বিপর্যয়ে গ্রাহকরা।
মোঃ জহিরুল হক ||
২০২৪-০৪-১৮ ১২:৩৮:৫৬
গরম শুরু হতে না হতেই ভোলায় চরম লোডশেডিং দেখা দিয়েছে।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ভোলার গ্যাস ভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে দ্বীপ জেলার মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যুৎ বিতরনকারী প্রতিষ্ঠান বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও কমছে না লোডশেডিং। এতে চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা। এমন অনিশ্চয়তায় কর্তৃপক্ষ বলছে মেশিন চালু করতে সময় লাগবে আরো ৬ মাস। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।
ভোলা জেলা সদরের গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহের উৎস ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টটি গত ২৫ জানুয়ারি মেকানিক্যাল ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন চালু করা সম্ভব হয়নি।
এতে বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) ৪২ কিলোমিটার দূর থেকে বোরহানউদ্দিন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ দিয়ে গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম। এতেও কমেনি লোডশেডিং। তাইতো বিদ্যুতের লোডশেডিং সমস্যা নিয়ে দিন কাটছে ভোলাবাসীর। গত এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে ৩৭/ ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠা নামা করায় প্রচন্ড তাপদাহ বিরাজ করছে ভোলায়। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে জনদূর্ভোগ।এর মধ্যে আবার বিদ্যুৎতের লোড শেডিংএর কারনে জনদূর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট বড় প্রায় সকল ব্যবসায়ীরা। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা, শিক্ষকদান সহ সকল পর্যায়ে। চরম দূর্ভোগে পরতে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষগুলো। বিশেষ করে বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যাবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভোলা সদরের ওয়ার্সপ ব্যবসায়ী জানান তাদের পুরো ব্যাবসাই বিদ্যুৎ নির্ভরশীল কিন্ত অনেকদিন বিদ্যুৎতের অস্বাভাবিক লোডশেডিং বলতে গেলে বিদ্যুৎ না থাকায় তাদের ব্যাবসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।কর্মচারীদের বেতন প্রতিদিন ঘুনতে হচ্ছে এতে আর্থীকভাবেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।হাজী কলোনির সুমন খান জানান একদিকে অতিরিক্ত গরম অন্যদিকে অস্বাভাবিক লোডশেডিং এর ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারছে না, প্রায় সকল কাজকর্মই কম্পিউটার নির্ভর কিন্ত তাও সময় মত করা যাচ্ছে না। বাসাবাড়িতে কোন থাকাও কস্টকর। এক কথায় অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারনে অতিস্ঠ হয়ে পরেছে জনজীবন।জৈনিক গৃহীনি জানান একদিকে অতিরিক্ত গরম পরছে অন্যদিকে লোডশেডিং এতে রাতের বেলায় একটু ঘুমানো যায় না।নিদ্রাহীন বাসার বাহিরে বসে থাকতে হয়। জেলা জামিয়াতুল মোদাররেছিনের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মোবাশ্বের হক নাইম ইনকিলাবকে জানান ভোলার গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ প্লান্ট তৈরি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ভোলার বাহিরে নেয়া হয়। অথচ আমরা ভোলাবাসী নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছিনা। আমাদের সম্পদ বাহিরে মানুষ উপভোগ করতে পারছে অথচ আমরা পাচ্ছি না। ফলে প্রচন্ড গরমে বিশেষ করে শিশুরা নিউমোনিয়াসহ ধরনের রোগে আক্রান্ত সহ নানা সমস্যা পরতে হচ্ছে ।
অটো ড্রাইভার কবির বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় ঠিকমত অটোরিকশা চার্জ দিতে পারছি না। অটোরিকশা চার্জ না থাকায় রাস্তায় নামতে পারছিনা। বেটারী সমস্যা হচ্ছে। আয় রোজগার আগের থেকে অনেক কমে গেছে। পরিবার নিয়ে এখন অনেক কষ্টের দিন কাটাতে হচ্ছে।
মসজিদের মুসুল্লিরা জানায়, নামাজের সময় কারেন্ট চলে যায়। এতে ইবাদত করতেও মানুষের কস্ট হচ্ছে ।
ভোলা বিদ্যুৎ সরবরাহ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, ভোলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ মেগাওয়াট।
তবে চাহিদা তুলনায় বিদ্যুৎ পাচ্ছি ৬০ মেগাওয়াট। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়াতে বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আমরা ন্যাশনাল গ্রীডের বাইরে ছিলাম। এখন ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ন্যাশনাল গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ নিতে হচ্ছে। ভোলায় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের জন্য সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে ১৫০ মেগাওয়াট সাব স্টেশন নির্মান। এটি নির্মাণ হলে জেলায় লোডশেডিং এর সমস্যার সমাধান হবে।ভোলায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিস্ঠান ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ফর ডিস্ট্রিবিউশন( ওজোপাডিকা) কোম্পানি লিঃ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় পুরো জেলায় ৫ লাখের অধিক গ্রাহক রয়েছে। তারা জেলার প্রত্যেক উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জানিয়েছেন তাদের প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক থাকলেও জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কারনে তাদের তেমন সমস্য হচ্ছে না। এ জেলায় গ্রীড সাব স্টেশন থাকলে বিদ্যুৎতের সমস্যা থাকবে না।
৩৪.৫ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ভোলা এর ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানান, গত ২৫ শে জানুয়ারি আমাদের রেন্টাল প্লান্টটি বন্ধ হয়। এটার যান্ত্রিক ত্রুটির সারানোর জন্য যে যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেগুলো দেশের বাইরে থেকে কিনে আনার চেষ্টা করছি। আশা করি আগামী ৫/৬ মাসের মধ্যে রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টটি চালু করা সম্ভব হবে।
আর ভোলা জেলা প্রশাসক মোঃ আরিফুজ্জামান বলেন, ভোলার ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিন মাস ধরে ত্রুটিপূর্ণ সমস্যার কারণে বন্ধ রয়েছে। ফলে সেচ মৌসুম ও গরমের কারণে ভোলাবাসি কিছুটা দুর্ভোগে পড়েছে। এই দুর্ভোগ নিরসন করার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় কে সমস্যা সমাধানের জন্য জানানো হয়। আমরা আশা করি খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।উল্লেখ ২০০৯ সালে সিনহা গ্রুপ রেন্টাল পদ্ধতিতে ৩৪.৫ মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটি বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু করে। এর আগেও দুই বার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দীর্ঘ সময় কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিলো।
এই প্ল্যান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ১৬ মেগাওয়াট জেলা সদরে সরবরাহ করতো। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে দিতো প্রায় ২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ একমাত্র সমাধান ভোলায় দ্রুত গ্রীডের সাব স্টেশন তৈরীর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে জনদূর্ভোগ লাগব করা যাবে। তাই অতিদ্রুত গ্রীডের সাব স্টেশন তৈরীর দাবী ভোলাবাসীর।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357