"হিয়ালে হাত-পাওলা কাটি যাছে,কাম না করিলে খামো কী ?"

দিনাজপুর প্রতিনিধি: || ২০২৪-০১-২৯ ২০:৫৫:৩৯

image
" হিয়ালে হাত-পাওলা কাটি যাছে । কাম না করিলে খামো কী? হামার গরীবের বাঁচার উপায় নাই। তাতোইন্ন্যে বেহাল বেলায় আইচু।কামোত নামি পইছু। মুই একলায় নাহায়,দেখায়তো পাছেন-কতোজন কাম করচ্ছি। সবারেই এমন দশা। জাড়োত ককড়া লাগি যাছি সবাই।" তীব্র শীতে জমিতে বোরো বীজতলা তোলার সময় এমনি অনুভুতি প্রকাশ করছিলেন,কৃষি শ্রমিক দীলিপ কুমার। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুরিয়া গ্রামের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মো. মতিউর রহমানের বোরো বীজতলা তোলার কাজে একই সঙ্গে প্রায় ৩০/৩৫ কৃষি শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মধ্যে দীলিপ কুমারও রয়েছেন। দীলিপের বাড়ি বিরলের বহবহল দীঘি। প্রায় ৬ কিলো মিটার পথ বাইসাইকেলে পাড়ি দিয়ে কাজ করতে এসেছেন,কৃষক মতিউরের খামারে। অনেকেই এসেছেন, দুর-দূরান্ত থেকে কাজ করতে। কারণ কাজ নেই। কৃষক মতিউর রহমান বলেন, 'ক্ষেতে কেউ কাজও করতে চায় না ঠান্ডার কারণে। কাজ করতে আসলেও দেরিতে কাজে নামে।আবার আগেভাগেই চলে যায়। সকাল ১০ টার আগে কেউ কাজে নামে না।বিকেল ৪ টা না বাজতেই কাজ ছেড়ে চলে যায়। দুপুরে এক/দেড় ঘন্টা খাবারের সময় নেয়। এতে আমাদের লজ। কিছু বলাও যায়না। যে হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা পড়েছে, তাতে কিছু বলাও যায়না তাদের।মায়াও লাগে।কিছু করার নেই।এভাই পুষিয়ে নিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। প্রতি শ্রমিককে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে।সেই সঙ্গে দুপুরের খাওয়া। কৃষকের বাঁচার উপায় নাই। ঠান্ডায় তামাম শেষ। বোরো বীজলার বারোটা বাজি গেইছে। ঠান্ডা আর কুয়াশায় কোন্ড ইঞ্জুরি ধরেছে।চারা হলুদ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। এখনি না লাগালে আরো শেষ হয়ে যাবে।' কৃষক মতিউর রহমান জানালেন,তিনি এবার ৮০ একর জমিতে বোরোধান লাগানোর জন্য সাড়ে ৪ একর জমিতে বোরো বীজতলা লাগিয়েছেন। তীব্র শৈত্য প্রবাহে তার বেশকিছু বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। পলিথিন দিয়ে ঢাকিয়ে আর পানি সেচ দিয়ে প্রতিদিন পানি পাল্টিও লাভ হয়নি। তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসির একজন চুক্তিবদ্ধ চাষি।প্রতিবছর ভালোমানের ধানের বীজ তাকে বিএডিসিতে সরবরাহ করতে হয়। তার সেই বীজ সারা দেশের অনেক চাষি ব্যবহার করে ফসল ফলায়। একারণে তাকে প্রতি বছর ১৩০ একর থেকে ১৫০ একর জমিতে ধান চাষ করতে হয়। কিন্তু, এবার শীতের প্রকোপের কারণে তিনি বোরো ধান চাষাবাদের জমির পরিমান কমিয়ে দিয়েছেন। এবার ৮০ একর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা পরিপূরণ নাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন। কারণ, শীতে তার বেশকিছু বোরো বীজতলা নষ্ট হয়েছে। প্রসঙ্গগত :তীব্র শৈত্য প্রবাহে কনকনে হাঁড় কাঁপানো শীতে দিনাজপুরে ছন্দপতন ঘটেছে।বেহাল দশা মানুষসহ প্রাণিকুলের। তীব্র শীতে কাবু প্রকৃতি ও পরিবেশ। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দেশের সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। লাগাতার তীব্র শীতে চরম দূর্ভোগে ছিন্নমূল হতদরিদ্র মানুষ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া দিনমজুর নিন্ম আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। কাজ-কর্ম না থাকায় আয়-উপার্জনহীন তারা। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, আজ দেশের সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে।আদ্রতা ৮৮% বাতাসের গতি ২ নটস । তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়ায় আশংকা রয়েছে। রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। মৃদু শৈত্য প্রবাহ থেকে তীব্র শৈত্য প্রবাহের কবলে পড়েছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। জীবন-জীবিকার তাগিদে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই কাজে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষজন। কথা হয় নিম্ন নগর বালুবাড়ি এলাকার কৃষক কলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন ঘন কুয়াশায় জীবনে প্রথম দেখলাম। ঠান্ডায় কাজ করা খুবই কষ্ট। ঠান্ডার কারণে আয় অনেক কমে গেছে। এতে সংসার চালাতে অনেকটা হিমসিম খেতে হচ্ছে। দিনাজপুর স্টেশনে থাকা ছিন্ন মুল মানুষদের গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো জ্বালানি শীত নিবারনের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। মরিয়ম বেওয়া জানান, "হামাক কাহো কম্বল দেয় না বাঁ, তোমরা কি দিবা আইছেন।" গৃহ পরিচালিকা কুলসুম জানান,"এই শীতের সকালে বাসা বাড়িতে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াইছে, ঠান্ডায় হাত জমে যাচ্ছে, আমি তিনটি বাড়িতে কাজে যাই সকাল ৭ টায় যে বাড়িতে কাজ করি সেই ম্যাডাম অনেক ভালো বাসন মাজার জন্য পানি গরম করে দেন, তবুও শীত মানেনা ঠান্ডায় জমে যাই, রোদ গায়েই লাগে না, কি যে হবে আল্লাহই জানে। " আজ সকাল ৬ টায় দিনাজপুর পলিটিক্যাল ইন্সটিটিউট কলেজ মাঠে প্রাতভ্রমনে আশা আবদুর রাজ্জাক জানান,গত কদিন ধরে টানা শৈত্য প্রবাহের জন্য মানুষ হাঁটতে আসছে কম, যাদের উচ্চ ডায়াবেটিকস তারা নিয়োমিত না হাঁটলে শারিরীক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, যে শীত জেঁকে বসেছে তারা জীবন নাকাল হয়ে গেছে, দেখিন না আমি কম্বল জড়িয়ে চলে এসেছি। " শীতে গরম কাপড় টুপি,হাত-পা মোজা,মাফলার ফেরি করে বিক্রি করা জয়নুল জালালেন,তিনি নিজেও কাবু। বেচা-বিক্রি বাড়লেও ঠান্ডায় তার খুবই খারাপ অবস্থা। লাভ হলেও তার কষ্ট বেড়েছে।বের হতে পারছেন না রাস্তায়।তাই চায়ের দোকানেই বসে সময় কাটাচ্ছেন।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com