পাঁচ হাজার অতিথি আপ্যায়নে ব্যাতিক্রম আয়োজনে দিনাজপুরে বট ও পাকুড়ের বিয়ে

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর || ২০২৪-০১-১৭ ১০:০৫:৪৮

image
চারদিকে ঢাক-ঢোল আর সানাইয়ের সুর, উলুধ্বনিও দিচ্ছেন অনেকেই,পুরোহিত পাঠ করছেন মন্ত্র। পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে ছাদনাতলা, পাঁচ হাজার অতিথিকে করানো হলো আপ্যায়ন,রং-বেরঙের আলোকসজ্জা,আলপনা, সুসজ্জিত গেট, অতিথি, এলাকাবাসী আর ভক্তদের উপস্থিতে উৎসুক মানুষের ভীড়ে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে হলো দিনাজপুরে। আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টি শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির প্রাঙ্গণে ব্যাতিক্রম এই বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে পড়ানোর জন্য নিয়োজিত ছিলো ৫ জন পুরোহিত। দুটি সুসজ্জিত গেট,চারদিকে রঙিন কাপড় দিয়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা।স্টেজ,অতিথিশালা,বাদ যায়নি রঙিন বাতির আলোকসজ্জাও। মঙ্গলবার গায়ে হলুদের মাধ্যমে বুধবার সকাল ৬টায় অধিবাস, সকাল ১০টায় নারায়ণ পূজা, দুপুর দেড়টায় মধ্যাহ্ন প্রসাদ বিতরণ এবং দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিয়ে ও যজ্ঞানুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পরিবেশিত হবে কবি গান। কবিগান পরিবেশন করবেন চিরিরবন্দর উপজেলার বাবুল সরকার ও খানসামার চন্দনা রানী সরকার। অতিথিদের দেওয়া নিমন্ত্রণপত্র থেকে জানা গেছে, বর বেশে পাকুড়গাছ, পিতা দিলীপ ঘোষ, মাতা দিপ্তী ঘোষ, ঠিকানা চকবাজার, সদর, দিনাজপুর। আর কনে সেজে কুমারী বটগাছ, পিতা মুন্না সাহা, মাতা পুর্নিমা সাহা, ঠিকানা চকবাজার, সদর, দিনাজপুর। আয়োজক দিলীপ ঘোষ বলেন, প্রকৃতি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করার বিশ্বাস থেকে বটপাকুড়ের বিয়ে। অর্থাৎ অশ্বত্থাদিবৃক্ষ বটেশ্বরি-পাকুড়েশ্বর প্রতিষ্ঠা করা। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যেভাবে মানুষের বিয়ে হয়, সেভাবে বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কনে কুমারী বটগাছের পিতা মুন্না সাহা স্ত্রী পুর্নিমা সাহা, বলেন, ‘বটগাছ মেয়ে। আমি মেয়ের বাবা। আর ছেলে পাকুড়গাছের মা দিপ্তী ঘোষ। আমরা প্রতিবেশী। বিয়ে ঘিরে আমরা আনন্দ-উল্লাস করছি। ধর্মীয় গুরু সঙ্গীত কুমার সাহা বলেন, 'শাস্ত্রে বর্ণিত আছে ধর্মবৃক্ষ বট ও পাকুড়ের বিবাহ দর্শন মাত্রই মঙ্গল- 'এজন্য তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে গায়ে হলুদসহ শাস্ত্র মতে সকল আয়োজন করা হয়।' গাছের বিয়ের বিষয়ে দিনাজপুর নাট্য সমিতির সভাপতি চিত্ত ঘোষ বলেন, প্রকৃতি ও ব্যক্তির মঙ্গল কামনায় বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়। বাসুনিয়াপট্টি দুর্গা মন্দিরে চকবাজার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীর মানুষ প্রকৃতির মঙ্গল কামনায় এমন বিয়ের আয়োজন করেছেন। বিয়ে ঘিরে আনন্দ-উৎসব হচ্ছে। জাকজমকপূর্ণ ব্যতিক্রমী এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি এলাকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। ভক্তরা পূজা-অর্চনা ও আনন্দ- উৎসব করছেন।' সরজমিনে দেখা গেছে,পাকুড় গাছকে মুখোশ, ধূতি, পাঞ্জাবি পরিয়ে বরের বেশ ধারণ করানো হয়। আর পাশের বটগাছটিকে মুখোশ এবং শাড়ি পরিয়ে কনের বেশ ধারণ করানো হয়। বর-কনের জন্য সাজানো হয় বিয়ের আসন। মন্দিরের বিশাল স্থানে ররযাত্রীদের জন্য টাঙ্গানো হয় বিশাল প্যান্ডেল। বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ খেতে এসেছিলেন কয়েক হাজার অতিথি। সবজি-পোলাও, আলুভাজি, ডাল ও পায়েস খাইয়ে আপ্যায়ন করা হয় তাদের। বিয়েতে প্রায় ৫ হাজার অতিথিকে আপ্যায়ন করানো হয়েছে বলে জানিয়েছে,রান্না কাজে নিয়োজিত বাবর্চিদের প্রধান নারায়ন চন্দ্র অধিকারী। তিনি বলেন, 'ভোর থেকে ১৪ জন বাবর্চি ও আমাদের সহকর্মীরা এই রান্নার কাজ করেছে।' শহরেরখালপাড়া এলাকার গৃহবধূ ললিতা বালা বট-পাকুড় গাছের বিয়ে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিয়েতে দাওয়াত করা হয়েছিল। এ জন্য এসেছি। বিয়ের আয়োজন দেখে মুগ্ধ।’ বিরল উপজেলার তেঘেরা থেকে এবিয়ে আসা সতিশ চন্দ্র বর্মন বলেন,'আমি এ যাবত শুধু শুনেই আসছি যে বট আর পাকুড় গাছের বিয়ের কথা। আজকে দেখলাম,এই বিয়ে। সনাতন রীতিনীতি মেনেই এই বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ’ রাণীগঞ্জ ঝাঞ্জিরা থেকে আসা মানিক চন্দ্র বলেন, ‌‘মুই ছোট থাকিতে একবার বট-পাকুড়ের বিয়া দেখিছুনু কিন্তু আগের কথা খেয়াল নাই। আবার আইজকা দেখুনু।নিজের যাতে পুণ্য হয় সেইজন্যে এই বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলেমেয়ে যাতে ভালো থাকে, পরকালে যাতে স্বর্গে জায়গা পাওয়া যায় সেইজন্য বট-পাকুড়ের বিয়া হয়। ’ বিয়েতে আসা সবিতা রানী বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে আমদের ধর্মীয়ভাবেই একটা পুণ্য লাভ হয়। অনেকেই আবার ছেলে বা মেয়ে সন্তান লাভের আশায় এই বিয়ে দেয়। অনেক আগে থেকে এই বিয়ের প্রথা চলে আসছে। ’ ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে আসা হরেতোষ কুমার বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে হবে এটা শোনার পর থেকেই অনেক কৌতূহল হচ্ছিল মনের মধ্যে। আগে অনেকবার শুনেছি বট-পাকুড়ের বিয়ের কথা। কিন্তু এই প্রথমবার নিজ চোখে বিয়ে দেখলাম। বিয়েতে অনেকের আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হলো। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করলাম। বর-কনের বিয়ের মতোই সব আয়োজন ছিল বিয়েতে। আমার অনেক ভালো লেগেছে বট-পাকুড়ের বিয়েতে আসতে পেরে। ’

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com