দিনাজপুরে ধানখেতে কীটনাশক স্প্রে, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কৃষক

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর || ২০২৩-১০-২০ ১২:৪২:৫২

image
দিনাজপুরে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই ধানখেতে পোকা-মাকড় ও আগাছা দমনে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক স্প্রে করছেন কৃষকরা। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। এতে করে শ্বাসকষ্ট, চামড়ায় ফোসকা, লিভার, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন কৃষকরা। বিশেষ কীটনাশক স্প্রে করায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এদিকে কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক স্প্রে আর সার ব্যবহারে কৃষি দফতরের সহযোগিতা পান না তারা। তাই না জেনেই এমন স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। নেই কারও নাকে-মুখে মাস্ক বা কাপড়। হাতে নেই কোনো হাতমোজা বা গ্লাভস। কাঁধে ঝোলানো মেশিনে ভর্তি কীটনাশক। এভাবেই প্রতিদিন রোপা আমন বিস্তৃর্ন ধানখেতে কীটনাশক “বিষ” স্প্রে করছেন কৃৃষকরা। সকাল ৮টার পূর্বে এবং বিকাল ৪টার পর কীটনাশক স্প্রে করার উপযোগী সময় এবং সার ও কীটনাশক স্প্রে করতে হলে বিশেষ পোশাক পরিধান করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দিনাজপুরে কৃষকরা সারাদিন প্রখর রৌদ্রে এভাবেই হাজার হাজার বিঘা রোপা আমন ধানক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম-কানুন বা দিকনির্দেশনা। অনেক কৃষক টি-শার্ট পরে, জামা পরে জমিতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। কেউ আবার জমিতে আগাছানাশক মিশিয়ে হাতমোজা ছাড়াই হাত দিয়ে ছিটাচ্ছেন রাসায়নিক সার। কীটনাশকের প্যাকেট বা বোতলের গায়ে স্পষ্ট অক্ষরে “বিষ” লেখা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। নিয়ম-নীতি না মেনেই এখানকার কৃষকরা যে যার মতো জমিতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। আবার অনেকে মুখে মাস্ক ছাড়াই কীটনাশক স্প্রে করায় অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। জেলায় এবার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। জেলায় চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমন বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। দেশের শস্য ভান্ডার বলা হয় এই জেলাকে। দেশের সিংহভাগ ধান উৎপাদন হয়ে থাকে এই জেলায়। চলতি বছর আমন ধানের ভাল ফলন হবে। বিস্তীর্ণ মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজ ধান ক্ষেতের ধান গাছ। চলতি বছর ২ লাখ ৭১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অতিরিক্ত ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ অর্জিত হয়ে মোট ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,কৃষক তার বাড়ন্ত ধান ক্ষেতে রোগ বলাই দমনে কীটনাশক কে স্প্রে করছেন। দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন,কৃষি অফিস থেকে আমাদের এব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমরা যখন সার ও কীটনাশক স্প্রে করি তখন আমাদের মাথা ঘোরে, বমির ভাব হয়। শরীরে বিভিন্ন অসুখ দেখা দেয়। বোচাগঞ্জ উপজেলার মায়েরপুর এলাকার জিয়াউর রহমান নামে এক যুবক জানান,রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় জমিতে ছিটানো কীটনাশকের দুগর্ন্ধে নিশ্বাস নিতে পারি না। চলাচল করতে কষ্ট হয়। দুই ভাবে এসব বিষাক্ত পদার্থগুলো শরীরে প্রবেশ করে। এতে করে রক্তে গিয়ে কান-মুখ, চোখ জ্বালাপোড়া করে। চামড়ায় ফোসকা পড়ে ঘা হয়। আবার লাে গেলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সীমান্ত বেষ্টিত হাকিমপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মোঃ প্রীতম মুজতাহীন জানান, 'ক্ষেতে স্প্রে করা এসব বিষাক্ত পদার্থগুলো শরীরে প্রবেশ করায় অনেকে লিভার সিরোসিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। তবে মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও পোশাক পরিধান করে কীটনাশক ব্যবহার করলে এসব রোগ থেকে সুরক্ষা সম্ভব।' একই হাকিমপুর উপজেলার উপজেলা কৃষি অফিসার আরজিনা বেগম বলেন, 'নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে কৃষকরা যাতে ছত্রাক নাশক ও কীটনাশক স্প্রে করে সেজন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে আমাদের কৃষকরা অনেক সচেতন রয়েছেন। সকাল ৮টার পূর্বে এবং বিকাল ৪টার পর ছত্রাক নাশক ও কীটনাশক স্প্রে করলে ফসলের গুনাগুন ভালো থাকে। এব্যপারে আমাদের পরামর্শ অব্যাহত আছে।'

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com