ফের বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শুধু ঢাকা শহরেই মৃত্যু হয়েছে ৪০ জনের। মশা মারতে ছাদ বাগানে চোখ রাখছে ড্রোন৷ জলাশয়ে ছাড়া হচ্ছে ব্যাঙ৷ কিন্তু মশা কমলেও মানুষের সচেতনতা কি বাড়বে?
গত বছর মশা মারতে খাল, জলাশয়, নালা, বক্স-কালভার্টসহ বদ্ধ জলাশয়ে ব্যাঙ ছেড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও (ডিএনসিসি) মশা মারতে ড্রোনের মাধ্যমে ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। যদিও পরে সে উদ্যোগ বন্ধ করে ড্রোনের মাধ্যমে ঢাকার ছাদগুলো মনিটরিং করেছে। কর্মকর্তাদের দাবি, এতে সুফলও মিলেছে। এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনেও একইভাবে ড্রোনের মাধ্যমে মনিটরিং করতে যাচ্ছে।
ব্যাঙ ছাড়ার উদ্যোগ সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, আমরা যেসব জায়গায় ব্যাঙ, হাঁস, তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছিলাম সেখানে এডিস মশার লাভা পাওয়া যায়নি। ফলে আমাদের এই উদ্যোগ তো সফলই হয়েছে। তাহলে এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে কেন? জবাবে তিনি বলেন, এখন বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমের শুরুতে ডেঙ্গু দেখা দেয়। এটা শুধু আমাদের দেশে না, আশপাশের সবগুলো দেশেই। এই মুহূর্তে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ আশপাশের দেশগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আমাদের থেকে ৫-৬ গুন বেশি। আমরা কিন্তু হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। কাজ করে যাচ্ছি।
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন গত বছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কয়েক হাজার ব্যাঙ সংগ্রহ করে খাল, জলাশয়, নালা, বক্স-কালভার্টে ছেড়েছিল। সেগুলো এখন আর বেঁচে আছে কিনা সে তথ্য তাদের কাছে নেই। কর্মকর্তারা বলছেন, মশা বদ্ধ জলাশয়ে ডিম পাড়ে। রাজধানীতে এ রকম জলাশয়ের অভাব নেই। পানিপ্রবাহ খুব একটা না থাকায় এসব স্থানে মশার বংশবিস্তারের জন্য বছরের বেশির ভাগ সময় অনুকূল পরিবেশ থাকে। এ জন্য এর আগে রাজধানীর জলাশয়, বক্স-কালভার্ট ও ড্রেনগুলোতে ব্যাঙ পানির ওপর ভেসে থাকা লার্ভা খেয়ে ফেলবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ব্যাঙ প্রক্রিয়ায় খুব একটা সুফল মেলেনি। কারণ এই পানিগুলো এতই দূষিত যে, ব্যাঙের বংশবিস্তার বা বেঁচে থাকার কোন সুযোগ নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, আমরা ডেঙ্গু নিরসনে কাজের পরিধি আগের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছি। ছাদবাগানগুলোতে ড্রোন দিয়ে সার্ভে করছি। আমরা ৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাদ সার্ভে করেছি। এর মধ্যে ২ হাজার ২৭০টি ছাদে এডিস মশার লাভা পেয়েছি। ড্রোন ছাড়া তো এই কাজ করা সম্ভব ছিল না। ফলে এখানে তো সফলতা এসেছেই। এই সব ছাদে ওষুধ আমদানি করে প্রয়োগ করছি। যেমন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিটিআই নামক একটি ওষুধ এনে আমরা প্রয়োগ করছি। এ রকম অনেক পদক্ষেপই এবার নেওয়া হয়েছে, যা নতুন। আমরা চিহ্নিত হটস্পটগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিয়মিত পদক্ষেপ, যেমন: ফগিং, ওষুধ দেওয়া ছাড়াও মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযানগুলো চলমান। এর বাইরে আমাদের স্কাউট, গার্লস গাইড এবং অনেকগুলো টিমকে সম্পৃক্ত করেছি, যেটা গত বছর ছিল না। আমরা সিটিজেন এনগেজমেন্টের প্রসার বাড়াচ্ছি এবং সিরিয়াসলি চেষ্টা করছি।
এবার একই পথে হাঁটতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম নগরীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ছাদবাগানে জমে থাকা পানি ড্রোন দিয়ে মনিটর করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে ১০০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম উদ্বোধন করে এই কথা জানান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। মেয়র বলেন, অনেকের ছাদবাগানে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করেন না। এমনকি চসিকের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা পরিষ্কার করতে গেলেও তারা বাধা দেন। এখন থেকে আমরা ড্রোন দিয়ে ছাদবাগান মনিটর করব, যারা ছাদবাগান পরিষ্কার করবে না, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে শুধু ওষুধ ছিটিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলে মনে করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কারণ, এডিস মশা তো নদী, খাল বিলে জন্মায় না। এটা আমাদের বাড়ি ঘরের আশপাশেই জন্ম নেয়। এছাড়া ঢাকা শহরে প্রচুর নির্মাণ কাজ চলে। এসব জায়গায় দেখভাল করার কোন ব্যবস্থা নেই। আর সিটি কর্পোরেশনেরও ঢিলেমি আছে। তারা সময়মতো কাজ শুরু করে না। যখন প্রকোপটা বাড়ে তখন তৎপর হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও মশা বিশেষজ্ঞ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমছে না এবং প্রতিদিন মৃত্যুও হচ্ছে। আসন্ন ঈদে ডেঙ্গু বাড়বে এবং এটা সুনিশ্চিতভাবে বলা যায়। সে সময় মানুষের মুভমেন্ট বাড়বে। কেউ এডিস মশার বাহক হলে তার থেকে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে। যেহেতু ঈদের ছুটিতে প্রচুর মানুষ বাড়িতে যায়, অনেকে জ্বর হলেও না বুঝে টেস্ট না করে চলে যায়। এভাবে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। আরেকটি কারণ হলো, আমরা বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষা করে দেখেছি, সব জেলাতেই এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। সেসব জেলায় মানুষ ঈদ করতে গেলে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই ঈদে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট ৪০ জনের মৃত্যু হলো। এছাড়া গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৬ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৬ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট এক হাজার ৩৮২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ৩০৯ জন ঢাকার বাইরের।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: [email protected]
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: [email protected]