নদীতে বালু-পাথর উত্তোলনে ‘সুবিধা’ না দিলেই পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: || ২০২৩-০৬-২১ ০৭:৩০:০৯

image
সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদীতে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন করায় তা জব্দ করে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে প্রশাসন। নিলাম কমিটির সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ দরদাতা এবং কার্যাদেশ পেয়ে দুটি ঘাটের সেই পাথর অপসারণ করায় হয়রানীর দুটি মামলা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ অধিদপ্তর। তাদের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন টাকার কুমির। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। সুনামগঞ্জের সব নদীতে চরে বেড়ান মোহাম্মদ এমরান হোসেন। অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনে তার নামে চলে সুবিধার বেচাকেনা। স্থানীয় আরো অনেকে তার সুবিধার সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। তবে সুবিধা দিতে ব্যর্থ হলে করা হয় ‘পরিবেশ জীব-বৈচিত্র্য ও এলাকার সার্বিক পরিবেশ বিনষ্টসহ পরিবেশ ক্ষতি সাধন’ মামলা। তাকে অব্যহতি দিয়ে সম্পদের পরিমাণ যাচাই করা হলে প্রমাণ মিলবে বলে মনে করেন অনেক ব্যবসায়ী। একইসঙ্গে, হয়রানীমূলক মামলা থেকে অব্যহতি পেতে ও মামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের বিভিন্ন দফতরের লিখিত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সচিবালয়ে রোববার (১৮ জুন) সুনির্দিষ্ট করে ৬টি বিষয়ে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন মো. রাজিব নামে একজন ব্যবসায়ী। তিনি এমরান হোসেনের দায়ের করা দুটি মামলার আসমিও। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের মোতাহার আলীর পুত্র রাজিব। পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মহাপরিচালক, অধিদপ্তরের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবর রোরবার (১৮ জুন) ব্যবসায়ীদের পক্ষে অভিযোগ দেন তিনি। অভিযোগ করা হয়েছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা নদীর পাড় ও তালেবের ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৩ ঘনফুট পাথর জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। সেই পাথর চলতি বছরের ২২ মে ডলুরা শহীদ মিনার এলাকায় প্রকাশ্য নিলাম ডাকা হয়। নিলামে ফারুক মিয়ার নামে কয়েকজন মিলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পান। কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী পাথর সরানোর কাজও শুরু করেন তারা। এতে স্থানীয় প্রভাবশালী কবির হোসেন তার সহযোগী পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন ক্ষিপ্ত হন। তিনি সুনামগঞ্জে থাকাকালে তাদের সঙ্গে মিলে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্বরপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ধোপাজান নদী থেকে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করতেন। তাদের সঙ্গে অলিখিত ব্যবসায়িক অংশিদার হিসেবে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন এমরান। নিলাম নিতে না পেরে কবির হোসেন চক্র ক্ষিপ্ত হন। নিলামকারীরা পাথর যেন সরাতে না পারেন এ জন্য পরিবেশের বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় ১৪ জুন হয়রানিমূলক একটি মামলা করেন (মামলা নং ১৮)। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদীতে বালু-পাথর মহালে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই বেআইনীভাবে উত্তোলন করায় ৩৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন এমরান হোসেন। রাজিব অভিযোগ করেন, সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন সুনামগঞ্জের অবৈধভাবে বালু ও পাথর খেকোদের একজন। ইতিপূর্বে সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসনে কর্মরত থাকাবস্থায় বালু ও পাথর খেকো চক্রের সাথে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্বরপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ধোপাজান নদী থেকে অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলন করতেন। পরে তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক হিসেবে পদায়ন হন। এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ না করেই বেআইনীভাবে তিনি সরকারিভাবে নিলামকৃত পাথর পরিবহণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দেন। সুনাগঞ্জের চক্রের হোতাদের অফিসে বসেন এবং মাসোহারা গ্রহণ করেন। মামলা যাচাই করলে দেখা যাবে ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ও চলতি বছরের ১৪ জুন তারিখে দায়ের করা মামলার সাক্ষী তিনজনের নাম একই এবং অভিযোগ নামার ভাষাও এক। মামলা সম্পর্কে সাক্ষীরা অজ্ঞাত এবং তারা সেখানকার স্থায়ী নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ রক্ষার কাজ এখন কোথাও চলমান নেই। তবুও চলতি বছরের ৭ মে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জিও ব্যাগে বালু ভর্তি করতে সুরমা নদী থেকে কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনে সহায়তা করেন তিনি। এমরান হোসেন তার স্বার্থে সৌদি প্রবাসীদের নাম আসামি তালিকাভুক্ত করেছেন। যারা মামলার সময় এবং বর্তমানেও সৌদিতে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী ও আসামি রাজিব। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনের সঙ্গে চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সিলেটের অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মোহাইমিনুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, স্যার হজে আছেন। তাকে হোয়্যাটসঅ্যাপে পেতে পারেন। পরে অভিযুক্ত ইমরান হোসেনের হোয়্যাটসআ্যাপ নম্বরে অভিযোগপত্র পাঠানো হয়। একইসঙ্গে ফোন এবং ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে তাকে মন্তব্য করতে অনুরোধ করা হলেও তিনি করেননি। পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে অভিযোগ গ্রহণ এবং ব্যবস্থা সম্পর্কে বুধবার (২১ জুন) পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিল্পী রানী দেবী বলেন, তিনি হজে গেছেন। আরো এমন অভিযোগ রয়েছে। আমরা এখনি কিছু বলতে পারছি না। তবে আমাদের মহাপরিচালক বিষয়গুলো দেখছেন।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com