স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করছেন ৩ শতাধিক চরমপন্থী
নাজমুল হোসেন, সিরাজগঞ্জ ||
২০২৩-০৫-২১ ০৫:১৮:১২
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন বিভিন্ন চরমপন্থী দলের ৩ শতাধিক চরমপন্থি ও সর্বহারা সদস্যরা।
রোববার (২১ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তারা।
অস্বাভাবিক জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থীদের স্বাগত ও ধন্যবাদ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এতে সভাপতিত্ব করেন র্যাব ফোর্সেস মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বিপিএম (বার), পিপিএম।
র্যাব ফোর্সেস এর তত্ত্বাবধানে সিরাজগঞ্জে অবস্থিত র্যাব-১২ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রাজবাড়ী জেলার ৩ শতাধিক চরমপন্থীর সদস্য ২ শতাধিক অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি এর নিকট আত্মসমর্পণ করেন তারা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, র্যাব ফোর্সেস প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জনমানুষের নিরাপত্তা বিধান ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে প্রশংসীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে এ বাহিনী মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ইতোমধ্যে জনমনে সুদৃঢ় অবস্থান তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। অপরাধ দমনে র্যাব শুধু আভিযানিক প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। ইতিপূর্বে যে সকল জঙ্গি ও জলদস্যুরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার জীবন থেকে ফিরে আসতে চেয়েছে তাদের আত্মসমর্পণ, পুনর্বাসন ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে র্যাব।
অপরাধ দমনে র্যাবের কর্ম পরিকল্পনা বহুমাত্রিক। র্যাবের শুধু অপরাধ দমনে অভিযানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।র্যাব গবেষণা ও প্রশিক্ষণের আলোকে সৃষ্টিশীল ও সময়োপযোগী নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে পুনর্বাসনের মাধ্যমে অপরাধীদের স্বাভাবিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যার প্রতিফলন ঘটেছে বিভিন্ন মানবিক ও সৃষ্টিশীল প্রকল্পের মাধ্যমে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে র্যাব সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে র্যাবের তত্ত্বাবধানে সুন্দরবন, কক্সবাজার, মহেশখালী ও বাঁশখালী অঞ্চলের ৫০টি জলদস্যু বাহিনীর ৪০৫ জন জলদস্যু বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে ও আত্মসমর্পণকৃত জলসদস্যুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ইতোপূর্বে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে র্যাব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এমনি অচলাবস্থায় সাধারণ মানুষকে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। র্যাব সফল অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন চরমপন্থী গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অনেক সদস্যকেই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে।চরমপন্থীদের সৃষ্ট ত্রাসের রাজত্ব র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানে ভেঙ্গে পড়ে। শীর্ষস্থানীয় চরমপন্থীসহ বিভিন্ন চরমপন্থী দলের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়; ফলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফিরে আসে স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহের ক্রমাগত আভিযানিক প্রক্রিয়ায় চাপ সহ্য করতে না পেরে চরমপন্থী দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের সুযোগ খুঁজতে থাকে। অপরাধ জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া এসব চরমপন্থীদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করে র্যাব।চরমপন্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে ২০২০ সাল হতে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের নির্দেশনায় র্যাব-১২ কার্যক্রম শুরু করে। প্রাথমিকভাবে র্যাব চরমপন্থীদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে এবং চরমপন্থীদের পরিবারের সদস্যদেরকে হস্তশিল্প সহ বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করে।র্যাবের সময়োপযোগী এ সকল উদ্যোগ গ্রহণের ফলে চরমপন্থী পরিবারের সদস্যরা অনুপ্রাণিত হয় এবং বিভিন্ন চরমপন্থী দলে থাকা সদস্যদেরকে তাদের পরিবারের পক্ষ হতে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। পরবর্তীতে র্যাব ফোর্সেস চরমপন্থীদের পরিবারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে চরমপন্থীদেরকে আত্মসমর্পণ করতে উৎসাহী করে এবং সরকারের পক্ষ হতে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদেরকে পুনর্বাসন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনী সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে আশ্বস্থ করে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাখেন, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল- মামুন বিপিএম(বার) পিপিএম, র্যাব ফোর্সের্স অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল মোঃ মাহবুব আলম, বিপিএম, পিপিএম, বিপিএমএস(বার), রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আব্দুল বাতেন বিপিএম, পিপিএম ,র্যাব-১২ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মারুফ হোসেন পিপিএম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) তানভীর ইমাম, জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান প্রমূখ।
এসময় মাননীয় সংসদ সদস্য সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর) তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ আসন (সদর/কামারখন্দ) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত,সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ/তাড়াশ) অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৬, (শাহজাদপুর) প্রফেসর মেরিনা জাহান,পুলিশ সুপার, মোঃ আরিফুর রহমান মন্ডল, বিপিএম (বার) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যাডঃ কে এম হোসেন আলী হাসান সহ
র্যাব ফোর্সেস,বাংলাদেশ পুলিশ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মীসহ সুধীজন এবং আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থী সর্বহারা সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গ ।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357