পাইটের যা দাম আছে, তা হামার নাই

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর || ২০২৩-০৫-১১ ০১:৫০:৫৩

image
পাইটের ( শ্রমিকের) যা দাম আছে,তা হামার নাই। এখন গৃরস্তি ( কৃষি) করি আর কোন লাভ নাই। ধানের দামেই পাওয়া যাছেনা। গৃরস্থ করি উৎপাদন খরচেই ঠিক মতোন উঠে না। রোপা বীজ,জমিত পানি সেচ,কীটনাশক, পাইট (শ্রমিক) সহ বিঘা প্রতি খরচ হইছে প্রায় ২৫/ ২৭ হাজার টাকা। সেই জমিত এবার সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ মণ ধান ফলিছে।বর্ত্তমান বাজার অনুযায়ী এক বিঘা জমির ধান বেচা যাবি ( বিক্রি,করা যাবে) ১৬ /২০ হাজার টাকার। এতে লস না লাভ ? তোমরাই কহেন ( বলেন)! হামরা গৃরস্থরা মরি সারা। এইভাবে চলিলে হামাক গৃরস্থি ছাড়ি,পাইটগিরি ( শ্রমিকের কাজ) করিবা হবি। এখন পাইটের দামেই বেশি। পাইট খুঁজি পাওয়া যায়না। জমিতে বোরো ধান উৎপাদন এবং বর্তমান ধানের বাজার দর নিয়ে এমনি কথা বলছিলেন কৃষক রফিকুল ইসলাম। দিনাজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ কোতয়ালীর উলিপুর এলাকায় জমিতে ধান কর্তন করে পাকা রাস্তায় যান্ত্রিক মেশিনে মাড়াই করার সময় তীব্র তাপদাহে দাঁড়িতে এমনিভাবে মনের অনুভুতি জানাচ্ছিলেন,এই প্রতিবেদককে। পাশে আরেক কৃষক আজাহার আলী বলেন, 'ঋণ করে বোরো চাষ করেছি। ন্যায্যমূল্য না থাকায় ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ধান বিক্রি করে লোকজনের পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে আবারও ঋণের ফাঁদে পড়তে হবে। যে পরিমাণ ধান পাওয়া গেছে খরচ বাদ দিলে তাতে লাভ থাকে না। সারা বছর শ্রম দিয়েও যদি লাভের দেখা না পাওয়া যায়, তাহলে সংসার চালানো কষ্টকর হবে। সরকার ন্যায্যমূল্য দিয়ে কৃষকের থেকে সরাসরি যে ধান ক্রয় করছে।সেই সুযোগ আমরা সাধারণ কৃষক পাচ্ছিনা। কি যেনো অনলাইন এপের মাধ্যমে সরকার ধান নিচ্ছে।আমরা এইসব এপ,টেপ বুঝিনা।তাই আমাদের ধানও নেয় না। কম দামে বাজারেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে,আমাদের।' এদিকে ৭ মে হতে দিনাজপুরে সরকারি ভাবে বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। প্রতিকেজি ধান ৩০ টাকা দরে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন,দিনাজপুর জেলা খাদ্য কমকর্তা কামাল হোসেন। তিনি বলেন,সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। জেলায় এবার চলতি মৌসুমে বোরো সংগ্রহ অভিযানে এক লাখ ৩৫ হাজার ৫ 'শ ৪৬ হাজার মে.টন চাল এবং ১৪ হাজার ৮ 'শ মে.টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিকেজি চাল ৪৪ টাকা এবং ধান ৩০ টাকা দরে নিবে সরকার। এছাড়াও গম ৩৫ টাকা দরে সরকার নিবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে, দিনাজপুর জেলা খাদ্য কমকর্তা কামাল হোসেন বলেন, এই সুযোগ শুধু চুক্তিবদ্ধ কৃষক ও মিলাররাই পাবেন। এপ এর মাধ্যমে কৃষকদের নিবন্ধিত করা হয়েছে। যারা নিবন্ধন করেননি,তার ধান দিতে পারবেন না। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। জেলায় নতুন জাতের জিরাশাইল ৯০, জিরা ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, উফসি-২৯ ও ব্রি-২৮, ব্রি ২৯ জাতের ধান বেশি চাষ হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,উত্তরের শস্য ভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরে মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সোনালি বোরো ধান। কৃষক ধান কাটা-উভানো,মাড়াইয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের ভালো ফলনের পরও কাঙ্ক্ষিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেন না কৃষক। হাট-বাজারে ধানের দাম কম থাকায় প্রতি মণ নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তাই ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের। দিনাজপুর বিরল উপজেলার কৃষক মতিয়ার জানান, এবার ধান বেশি লাগাতে পারি নাই দুই বিঘা জমিতে বর্গা নিয়ে লাগিয়েছি। ধানের ফলন বিঘা প্রতি ২২ থেকে ২৫ মণ। বর্তমান ধান বাজরে বিক্রি করলাম ৯০০ টাকা মণ। এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের উৎপাদন খরচ প্রায় ২৭/২৮ হাজার টাকা তাহলে থাকে কি আর। এজন্য ধান আবাদ করি কৃষকের লাভ লসও নাই। ধানের দামটা যদি ১৩শ টাকা মণ থাকত তাহলে কৃষক কিছুটা হলেও বাঁচতো।' বোচাগঞ্জ উপজেলার মাহেরপুর এলাকার কৃষক জিয়াউর রহমান জানালেন,' এবার ৭ বিঘা জমিতে বোরো জাতের বিভিন্ন ধান লাগিয়েছি। এর মধ্যে ২৮, মিনিকেট ৯০ জিরা লাগিয়েছি। এর মধ্য ২৮ ধান বিক্রি করেছি মাত্র ৯৫০ টাকা মণ। এবার তো সব কিছুর দাম বেশি গতবছর এক বিঘা জমিতে পানির খরা ছিল দুই হাজার এবার তিন হাজার। এক বস্তা ডেব সার ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা ছিল এখন ১২০০ টাকা। এক বিঘা জমির ধান কাটতে লাগছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। সব জিনিসের দাম বেশি হয় কিন্তু ধানের দাম বাড়ে না। তাহলে বলেন, কিভাবে ধান আবাদ করে লাভবান হব আমরা ! ' খানসাম উপজেলার কাচিনিয়া এলাকার কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, বোরো জাতের ২৮ ধান তিনি ৩ বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এবার তো সব কিছুর দাম বেশি সার থেকে শুরু করে সেচের পানির সহ দাম বেশি। তিন বিঘা জমি থেকে ধান ঘরে তুলতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২৩ থেকে ২৭মণ। ধান বিক্রি করিছি ৯০০ টাকা মণ দরে। এভাবে চললে আমাদের কি থাকে! ' কাহারোল উপজেলা জয়নন্দ এলাকার কৃষক সতেন্দ্র জানান, জিরা শাইল জাতের নতুন জাতের চিকন ধান লাগিয়েছি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে। ভাবছিলাম চিকন ধানের দাম বেশি হবে। কিন্তু বাজারে চিকন ধানের দাম ১২ থেকে ১৩শ টাকা মণ। ধানের উৎপাদন খরচ বাড়লেও দামের দাম বাড়েনি। এ অবস্থায় আমাদের কিছুই থাকেনা।' দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতে কৃষি বিভাগ সরকারি প্রণোদনার আওতায় আউশ ধানের বীজ বিতরণ করেছে। পাশাপাশি এসব ধান চাষে কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও কীটনাশকও দেয়া হয়েছে। এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। এদিকে চলতি মৌসুমে বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক পাওয়া গেলেও এবার তাদের মজুরি দিতে হচ্ছে অনেক বেশি। এখন শ্রমিকদের দিন হাজিরা দিতে হচ্ছে, ৬শ থেকে ৭'শ টাকা। এতে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা-মাড়াইয়ে হিমসিম খাচ্ছেন, কৃষক।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com