দিনাজপুরে গাছে গাছে ঝুলছে প্রকৃতির রসগোল্লা খ্যাত মাদ্রাজি-বেদানা বোম্বাই,চায়না থ্রি লিচু। দিনাজপুরের বিরলের মাধববাটি, সদর উপজেলার উলিপুর এলাকায় গাছে গাছে এখন সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু ঝুলে আছে। আর কিছু দিন পর লিচুর রঙ আসলে দেখলেই যেন জিভে জল আসবে। লিচুর অমৃত স্বাদে মুগ্ধ হবেন অনেকে।
এমন লিচুর স্বাদ পাওয় দুষ্কর। তবে প্রতিবছরের মতো স্বাদে ও রসে এগিয়ে থাকবে দিনাজপুরের লিচু। সাধারণত বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতে দিনাজপুরের লিচু পাকতে শুরু করে। তবে চাষিরা বলছেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় লিচুর দেখা মিলবে জ্যৈষ্ঠের শেষ ভাগে। তাই চাষি ও লিচুপ্রেমীরা কিঞ্চিৎ উদ্বিগ্ন। আবহাওয়া অধিদপ্তর এপ্রিলের শেষ ভাগে বৃষ্টির সম্ভবনার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু সেই অর্থে দিনাজপুরে বৃষ্টি হয়নি।
বিরলের মাধববাটি এলাকার চাষি মিজানুর রহমান জানালেন, ‘ঠিক এই মুহূর্তে বৃষ্টি দরকার। এতে দানাটা পুষ্ট হবে। আমরা সেচ দিচ্ছি নিয়মিত। কিন্তু আকাশের বৃষ্টি হলে ভালো। আর দুই সপ্তাহ পর বৃষ্টি হলে তখন হঠাৎ ফলের গ্রোথ বেড়ে যাবে। লিচু লাল বর্ণ ধারন করে ফেটে গিয়ে ঝরে পড়বে।’
লিচুর রাজ্য হিসেবে দিনাজপুরের সুনাম রয়েছে সারা দেশে। দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলাতেই কমবেশি লিচুর আবাদ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুর, মহব্বতপুর, বিরলের মাধববাটি, রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর,পলাশবাড়ী,চেতরা,বটহাট এবং চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলায়। এ অঞ্চলের বেলে-দোঁআশ মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরই স্থানীয় কৃষকেরা লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা যায়,ফলের ভারে অনেক গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানায়, এবার জেলায় ৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান আছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর, মাদ্রাজি ১ হাজার ১৬৬ হেক্টর, চায়না–থ্রি ৮০২ হেক্টর, বেদানা ২৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর, কাঁঠালি ৫৬ হেক্টর এবং মোজাফফরপুরী লিচু ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ আছে প্রায় সাত লাখ। এবার লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন।
দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর আউলিয়াপুর ও বিরলের মাধববাটি, ছেতরা, রবিপুর এলাকায় লিচুবাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু ঝুলে আছে। ফলের ভারে কিছুটা নুয়ে পড়ছে গাছের ডালগুলো। গাছের পরিচর্যাও প্রায় শেষ। চাষিরা জানিয়েছেন, আর একবার গাছে ভিটামিন প্রয়োগ করা হবে। এ ছাড়া লিচুর গোড়ায় পোকা রোধে কীটনাশক স্প্রে করা হবে।
রবিপুর এলাকার লিচুচাষি আবুল কালাম আজাদ জানান, তার ১৭ বিঘা জমিতে লিচুবাগান আছে। বোম্বাই বেশি হলেও এ বছর বেদানা ও মাদ্রাজির ফলন কম। কৃত্রিম সেচ দিয়ে যাচ্ছেন। এবার মুকুলও দেরিতে এসেছে। গেল মৌসুমে ১৮ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন তিনি। তবে এবার তিনি দাবি করছেন,অন্তত ৪০ শতাংশ ফলন কম হবে।
লিচুচাষির মকবুল,মনোয়ার,মকসেদ,রশিদ জানান, আবহাওয়া হচ্ছে,কৃষকের শত্রু ও মিত্র। এবার শীত কম হওয়ায় গাছে মুকুল কম এসেছে। এর ওপর অনাবৃষ্টি। সব মিলিয়ে এবার ফলন কম হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ফলন কম হলেও লিচুর দাম ভালো পাওয়া যাবে বলে তারা আশাবাদী।
সরেজমিনে দেখা মিলল গাছে গাছে সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু ঝুলে আছে। ফলের ভারে কিছুটা নুয়ে পড়ছে গাছের ডালগুলো। গাছের পরিচর্যাও প্রায় শেষ। চাষিরা জানিয়েছেন, আর একবার গাছে ভিটামিন প্রয়োগ করা হবে। এ ছাড়া লিচুর গোড়ায় পোকা রোধে কীটনাশক স্প্রে করা হবে।
টসটসে লাল বেদানা লিচু খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া গ্রামের কৃষক মাসুদ রানা জানালেন, লিচুর ফলন কম হওয়ায় চাহিদা থাকবে বেশি। এ ছাড়া এবার পরিচর্যার খরচও বেশি হয়েছে। তাই এবার লিচুর দাম বেশি থাকবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান আরো জানান,কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিরা গাছ ও ফলের পরিচর্যা করছেন। গতবার দিনাজপুরে লিচুর ফলন ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন। সাধারণত একবার বেশি ফলন হলে পরেরবার ফলন কিছুটা কমে যায়। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইতিমধ্যে ফল পুষ্ট হয়ে গেছে প্রায়।
দিনাজপুরে মূলত মাদ্রাজি, বেদানা, হাড়িয়া বেদানা, বোম্বাই, চায়না–থ্রি, কাঁঠালি লিচু চাষ হয়। এর মধ্যে বাজারে প্রথম দেখা মিলবে মাদ্রাজি লিচুর। এই দেখতে খানিকটা লম্বাকৃতির। পাকলে গাঢ় গোলাপি রঙের হয়, শাঁস তুলনামূলক কম আর বিচি আকারে বড়। তবে ঘ্রাণ আর স্বাদে অনন্য মাদ্রাজি লিচু।
মাদ্রাজি লিচুর সমসাময়িক সময়ে বাজারে আসে বোম্বাই লিচু। দেশের পুরোনো উচ্চ ফলনশীল জাত বোম্বাই লিচুর আকার ডিম্বাকৃতি। পাকা লিচুর রং লালচে। ফলের শাঁস মিষ্টি ও রসাল। বিচি আকারে ছোট থেকে মাঝারি। ওজন ১৮ থেকে ২০ গ্রাম। দিনাজপুরের বাগানসহ বসতবাড়ির আঙিনাতেও এই লিচুর গাছ দেখা মেলে।
এ ছাড়া লিচুর বাজারে বিশেষ চাহিদা আছে চায়না–থ্রি জাতের লিচুর। আকারে চ্যাপটা গোলাকৃতির। অনেকটা কমলা আকৃতির হয়। বিচি খুব ছোট হয় বলে শাঁস বেশি থাকে। এর স্বাদ অত্যন্ত মিষ্টি। চায়না–থ্রির গড় ওজন হয় প্রায় ২৫ গ্রাম। আবাদ ও ফলন কম হওয়ায় এর চাহিদাও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।
লিচুর রাজ্য হিসেবে দিনাজপুরের সুনাম রয়েছে সারা দেশে। দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলাতেই কমবেশি লিচুর আবাদ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় সদর উপজেলার মাসিমপুর, উলিপুর, আউলিয়াপুর, মহব্বতপুর, বিরলের মাধববাটি, ছেতরা,রবিপুর, রাজারামপুর, মহেশপুর, বটহাট এবং চিরিরবন্দর ও খানসামা উপজেলায়। এ অঞ্চলের বেলে-দোঁআশ মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছরই স্থানীয় কৃষকেরা লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
লিচুর বাজারে বিশেষ চাহিদা আছে,বেদেনা ও চায়না–থ্রি জাতের লিচুর। বেদেনা লিচুর বিচি ছোট, শাঁস পুরু অপূর্ব স্বাদ, গন্ধ ও মিষ্টি।দেশ ছাড়িয়েও বিদেশে এর চাহিদা প্রচুর। চায়না থ্রি আকারে চ্যাপটা গোলাকৃতির। অনেকটা কমলা আকৃতির হয়। বিচি খুব ছোট হয় বলে শাঁস বেশি থাকে। এর স্বাদ অত্যন্ত মিষ্টি। চায়না–থ্রির গড় ওজন হয় প্রায় ২৫ গ্রাম।
বেদেনা এবং চায়না থ্রি লিচুর আবাদ ও ফনল কম এবং গুণগত মান ভালো হওয়া এর চাহিদা বেশি।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com