তালতলী পায়রা নদী সংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হঠাৎ ভেঙে যাওয়ার একালাবাসী চরম বিপাকে
এইচ এম মোজাহিদুল ইসলাম নান্নু ||
২০২৩-০৩-২৯ ০৩:৫৩:৫৩
বরগুনার তালতলীর উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত সোমবার রাতে ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পায়রা নদী সংলগ্ন বাঁধে প্রচন্ড ফাটল ধরছে। বাঁধ ভাঙ্গণ শুরু হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন এলাকার ১০ হাজার মানুষ। প্রাণীসম্পদ, বসতভিটা ও ফসলি জমি রক্ষায় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ।
উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে সোমবার রাতে পায়রা নদীর প্রবল স্রোতে আকস্মিক ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে বাঁধের দুটি অংশের প্রায় ২০০ মিটার পায়রা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পায়রা সংলগ্ন বাধে প্রচন্ড ফাটল ধরেছে। পায়রার ভাঙ্গনে তেঁতুলবাড়িয়া, সোবাহানপাড়া, অংকুজানপাড়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের ১০ হাজার মানুষ দুঃশ্চিম্তায় রাত কাটিয়েছেন।
গত ১৬ বছর ধরে পায়রা নদীর ভয়াল ভাঙ্গনে তেতুঁলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে জানান এলাকাবাসী।
নদী ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে ঢাকা, চট্রগ্রাম ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। নতুন করে বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় তিন গ্রামের ১০ হাজার মানুষ আতঙ্কে আছেন।
২০০৭ সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় সিডরে তালতলী উপজেলার বঙ্গোপসাগর মোহনায় পায়রা নদী সংলগ্ন তেতুঁলবাড়িয়া এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ওই বন্যায় নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৪৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। বাঁধ ভাঙ্গার ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ করেনি। ১৬ বছর ধরেই তেঁতুলবাড়িয়া বাঁধ এলাকার তেঁতুলবাড়িয়া, সোবাহানপাড়া, অংকুজানপাড়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন।
২০১৫ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে বাঁধের একাংশ ভেঙ্গে যায়। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ মেরামত করেছে বলে অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য আলম হাওলাদার।
২০২২ সালের ১৫ জুলাই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ আবারো ভেঙ্গে যায়। ওই বছর বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড তেতুঁলবাড়িয়ায় ২৭০ মিটার বাঁধ সংস্কার করে।
ওই বাঁধও নড়বড়ে ছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর দায়সারা ভাবে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত করলেও ওই বাঁধ বেশী দিন টিকেনি।
স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ উপচে অথবা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে ভালো থাকলেও বর্ষার মৌসুমে ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে জলে ভেসে জীবন যাপন করে বলে জানান, হাজরা বেগম, হানিফ হাওলাদারও লিটন।
তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামের রোজিনা বেগম ও মোঃ জসিম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, সিডরের ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণ করেনি। দায়সারা ভাবে বাঁধ নির্মাণ করছে। ১৬ বছরই এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। দ্রুত পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ ও ব্লক নির্মাণের দাবী জানান তারা।
তালতলী নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সিডরের পর পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করায় গত ১৬ বছরে সাগর সংলগ্ন নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুঁলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের অন্তত দের কিলোমিটার ভুমি সাগর ও নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। দ্রুত টেকসই বাঁধ ও ভাঙ্গণ রোধে ব্লক নির্মাণ করা না হলে পুরো নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন তালতলী থেকে হারিয়ে যাবে। দ্রুত টেকসই বাঁধ ও ব্লক নির্মাণ করে ভাঙ্গণ রোধের দাবী জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, নতুন করে পায়রা ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় পুরো নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নবাসী আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার টুম্পা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শন করে ঝুঁকিতে থাকা বাড়ির নারী শিশু ও বৃদ্ধদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে, বাঁধ মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুদীপ্ত চৌধুরী বলেন, পায়রা নদী সংলগ্ন ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রিং বসানে বাঁধের কাজ শুরু হবে বলে জানান।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357