রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আগুন সন্ত্রাসের স্বীকার হয়ে পথে বসেছেন বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা। ফুটপাতে বসে প্রতিদিনের আয় দিয়ে যারা সংবার চালাতেন তাদের বাড়িতে এখন চূলা না জ্বলার উপক্রম। হামলার পর আতঙ্কে এখনো দোকান খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী নেতাদের দাবি, এ ঘটনায় তাদের অন্তত আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ না দিলে মামলা করবেন তারা।
বিনোদপুর বাজার এলাকার মাহমুদা বেগম একজন চা দোকানি। একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি নেওয়া আছে তার। স্বামী কাজ করতে পারেন না। সন্তানও ছোট। মা-ছেলে মিলে চায়ের দোকান চালান। শনিবার রাতের আগুনে পুড়ে গেছে তার আয়ের একমাত্র অবলম্বন দোকানটি। ফলে দুই দিন ধরে তার আয় রোজগার বন্ধ। মাহমুদা বলেন, ‘কিস্তির টাকা, সংসার খরচ কে দেবে? পুলিশ বলছে দোকান করা যাবে না। কোথায় যাব? কী খাবোথ?
ঘটনার ৪দিন পেরিয়ে গেছে। স্বাভাবিক হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিও। সবকিছুই যেন ঠিকঠাক আগের মতোই। কিন্তু আগুনে পোড়া বিনোদপুর বাজার এখনো থমকে আছে। এখনো বিনোদপুর বাজারের দোকানগুলোতে পোড়ানোর ক্ষত। সব কিছু হারিয়ে পথে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায় পুলিশ মোতায়েন। কিন্তু কোনো দোকানই খোলে নি। গোটা বাজারই প্রায় ফাঁকা। যে ২-৪ দোকানী এসে তারা ঘুরেফিরে ধ্বংসস্তুপ দেখছেন আর হা-হুতাশ করছেন।
বিনোদপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আকরাম আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর নির্ভর করে আমাদের ব্যবসা। তারা আমাদের সন্তানের মতো। যখন বাসের চালক ও হেলপার কয়েকজন ছাত্র মারধর করছিল। তখন মানবিক কারণে তাদের রক্ষা করতে এগিয়ে যায় স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী। এটি কি আমাদের অন্যায়? তাহলে কেন আমাদের গোটা বাজারে আগুন ধরিয়ে দিলো। ভাংচুর করলো। লুটপাট করলো তারা। সিটি মেয়র, পুলিশ কমিশনার, ভিসি এরা সবাই নিজ চোখে দেখেছেন, ছাত্ররা কীভাবে আগুন সন্ত্রাস করলো। ব্যবসায়ীরা কোনো সংঘর্ষে জড়ায় নি। চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। অথচ উল্টো পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেই মামলা করলো। মামলা মাথায় নিয়ে তো কেউ দোকান খোলার সাহস পাচ্ছে না। পুলিশে গ্রেফতার করতে পারে। ছাত্ররা আবারো হামলা করতে পারে। এই আতঙ্ক আমাদের মনেথ।
তিনি আরো বলেন, ‘এতো বড় নৃশংস একটা ঘটনা ঘটে গেল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আমাদের সাথে কোনো কথা বললেন না। একবার আলোচনার জন্যও ডাকলেন না। ছাত্র যে ক্ষতি করেছে আমাদের নিজেরা পুষিয়ে ওঠার ক্ষমতা নেই। আমাদের অন্তত আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতিপুরণ বিশ্ববিদ্যালয় না দিলে আমরা মামলা করবোথ।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সবাইকে নিয়েই আমরা চলতে চাই। আগামীতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করবো। সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেবো। তবে শিক্ষার্থীরা নয়, বহিরাগতরা জ্বালাও পোড়াও করেছে বলেও মন্তব্য উপাচার্যের।
মহানগরীর মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় আর কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিনোদপুর বাজারে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, বাস ভাড়া নিয়ে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে মোহাম্মদ পরিবহন নামে বাসের চালক ও হেলপারকে পেটায় কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ ঘটনার জের ধরে সংগঠিত হয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এসময় পেট্রোল বোমা মেরে পুড়িয়ে দেয়া হয় বিনোদপুর বাজারের শতাধিক দোকান। পুলিশের রাবার বুলেট ও ছোররা গুলি এবং ব্যবসায়ীদের ইটপাটকেলে আহত হয় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলাদা মামলা করেছে। এ দুটি মামলায় অজ্ঞাত ৮০০জনকে আসামী করা হয়।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com