দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি বিপাকে অসহায় নিন্ম আয়ের মানুষ

মোঃ কামরুজ্জামান খান, পলাশ (নরসিংদী) || ২০২৩-০২-২৬ ১১:৫৫:৪৬

image
কাঁচাবাজার থেকে একটি পরিবারে যা কিছু কিনতে হয়, তার প্রায় সবকিছুর দামই বাড়তি ।ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে জানা যায় আগামী রোজাকে কেন্দ্র করে বাড়তে পারে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম। এ তালিকায় যেমন চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা আছে, তেমনি রয়েছে সবজি, বেগুন ডাল বেশন ডিম ও মুরগির দাম। পিছিয়ে নেই মাছ ব্যবসায়ীরাও। এই মূল্যবৃদ্ধি সে সব সীমিত আয়ের মানুষের ওপর নতুন আঘাত, যাঁরা ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতিতে নাকাল। এর আগে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছিল। এবার ব্যবসায়ীরা সামনে আনছেন ট্রাকভাড়া গ্যাস বিদ্যুৎ জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিকে। তাঁরা বলছেন মজুদ করতে বিদ্যুৎ , জ্বালানি তেল ও গ্যাস এর দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানোর প্রভাব কাঁচাবাজারে পড়েছে। আগামী দিনগুলোয় শিল্পপণ্যের দামেও প্রভাব পড়তে পারে। দেখা যায় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকায়ই।এই পর্যন্ত দাম বেড়েছে সব ধরনের চাল, ডাল, আটা, ময়দা, বোতলজাত সয়াবিন তেল, চিনি, রসুন, দেশি পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, আদা, ডিম ও ব্রয়লারমুরগির। কমেনি কোন পন্যের দাম। নরসিংদী ঘোড়াশাল ও পলাশ কাচাঁ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ সবজি প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই দর সপ্তাহ গুরতে না গুরতে আগের তুলনায় কেজিপ্রতি গড়ে ১০/১৫ টাকা, কোন কোন ক্ষেত্রে ২০/৫০ বেশি হারে বেড়ে যায়। কাঁচা মরিচের কেজি ১২০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, মাছ ব্যাবসায়ীরা দাম গড়ে ২০/৫০ টাকা বেশি চাইছেন। টিসিবি বলছে, মোটা চাল ২ টাকা এবং মাঝারি ও সরু চাল প্রতি কেজি ৩ টাকা করে বেড়েছে। বাজারে এখন আর ৬০ টাকা কেজির নিচে চাল নেই। মাঝারি চাল প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং সুরু চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।টিসিবির হিসাবে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩০ টাকা। সেই হিসাবে এখন দাম প্রায় ৭০/৭৫ শতাংশ বেশি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কোন এক সময় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সব জিনিসেরই দাম বেড়ে যায়। এতে গরিব মানুষের ওপর প্রভাব পড়ে এবং মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। এটা স্বাভাবিক। তবে সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছেন। বাজারে একসঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের শুরুর দিকে। ওই বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ‘লকডাউনের’ আশঙ্কায় বাজারে শুরু হয় আতঙ্কের কেনাকাটা। বেড়ে যায় চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। যার প্রভাব পড়ে দেশেও। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু এবং মে মাস থেকে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে খাদ্যপণ্যের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, টিস্যু, কাগজ–কলম, খাতাসহ প্রায় সব পণ্যের দাম।এই দিকে হটাৎ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ৫ আগস্ট রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে। এরপরই বেড়েছে বাস ও ট্রাকভাড়া। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিসিবির বাজারদরের তালিকার তুলনা করলে দেখা যায়, কাপড় কাচাঁ সাবান ৩০টাকা, শ্যাম্পু (৩০০গ্রাম) ৪০০ টাকা, ভিমবার(৩০০গ্রাম) ৪০ টাকা, টয়লেট টিস্যু ৩২ টাকা, স্যাভলন ১৩০ টাকা, সুগন্ধি সাবান ৮৫ টাকা, টুথপেস্ট(২০০গ্রাম) ১৭০ টাকা, পাউরুটি (৩০০গ্রাম) ৬০ টাকা, আপেল ২৮০টাকা,কমলা ২৫০/২৮০ টাকা, হারপিক(৪৫০গ্রাম) ১৫০ টাকা, আটা যা ছিলো ৩৫/৪০ তা এখন বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা ময়দা কেজি ৮০/৮৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন লিটারে ১৯০ /২০০ টাকা, চিনি ১২০ টাকা,লবন ৪২ টাকা, মসুর ডাল কেজি১৪০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৬০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা ও ডিমের হালি ৫০/৫৫ টাকা বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, টিসিবির তালিকায় উল্লিখিত দরের চেয়ে বাজারে পণ্যের দাম বেশি। তিনটি বাজার ঘুরে কোথাও ৫০/৫৫ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়নি। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব পণ্যের দামের সঙ্গেই ট্রাকভাড়া যুক্ত। জ্বালানির দাম বাড়ার পর ট্রাকভাড়া ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এর সঙ্গে পণ্যভেদে নানা কারণও রয়েছে, যা দাম বাড়িয়েছে। বাজারে এখন চড়া দামে দুটি পণ্য ডিম ও মুরগির দাম। মুদিদোকানে ফার্মের মুরগির প্রতি হালি ডিম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণত ৩৫/৩৮ টাকার আশপাশে থাকে। ব্রয়লার মুরগি বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৪০-২৬০ টাকা দরে, যা সাধারণত ১৫০ টাকার নিচে থাকে,সোনালি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৩১০/৩৫০ টাকা। চালের বাড়তি দামের ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা যেমন ধানের বাড়তি দরকে দায়ী করছেন, তেমনি দায়ী করছেন ট্রাকভাড়াকে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির থেকে জানা যায়, ধানের দাম মণপ্রতি দেড় শ থেকে দু শ টাকা বেড়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় ধান মিলে আনতে ট্রাকপ্রতি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে ট্রাকভাড়া যতটুকু বাড়ার কথা, বৃদ্ধির পরিমাণ তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে ঢাকার নারায়ণগঞ্জ–গাজীপুরে যেতে ছয় চাকার পণ্যবাহী (ট্রাক–কাভার্ড ভ্যান) যানবাহনে ডিজেল দরকার হয় ৬০ থেকে ৭০ লিটার। ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৪০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩৮০ টাকা। যদিও পরিবহন কোম্পানিগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে প্রায় চার হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদ্যুৎ জ্বালানি তেল ও গ্যাস এর দামের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এখানেই শেষ নয়।গ্যাস এর দাম ও বেড়েছে আরও দাম বাড়ার আশঙ্কা আছে। দুটি কারণে দাম আরও বাড়তে পারে ১. পণ্য সরবরাহকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী দিনগুলোয় ভাড়া বাবদ বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করে তাদের পণ্যের নতুন দাম নির্ধারণ করবে। ২. কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, যা দাম আরও বাড়িয়ে দেবে। সরকারের প্রতি সাধারণ জনগনের দাবি যেন নিত্যপর্ন সকলের অনুকূলে থাকে।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com