ইরি ধানের চাষ নিয়ে চাষীরা নতুন করে স্বপ্ন বুনছেন

সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর || ২০২৩-০১-৩০ ১১:১৫:৫৬

image

ভৌগলিক কারনেই ডিসেম্বর ও জানুয়ারী দুই মাস দিনাজপুর জেলাসহ উত্তাঞ্চলের জেলাগুলিতে শীতের প্রকোপ একটু বেশি থাকে । এই শীতের মধ্যেই দিনাজপুরে পুরোদমে ইরি-বোরো ধান চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা। ভোর হতেই শীতল বরফের মত ঠান্ডা পানিতে নেমে বোরো ধানের বীজ তোলা আর সেই বীজ তোলে জমিতে সারি সারি ভাবে রোপণ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষক-কৃষাণিরা। পাশাপাশি নতুন ভাবে চলছে বোরো চাষের জন্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে জমি। ভোর রাত থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বোরো জমি প্রস্তুত করতে হাল চাষ করছেন কৃষক।

আগাম জাতের ইরি বোরো ধানের বীজ রোপণের হিড়িক পড়েছে। তাই ইরি-বোরো রোপণ নিয়ে যেন চলছে গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ। ব্যস্থ সময় কাটছে কৃষক-কৃষাণিদের। এবার অন্য বছরের তুলনায় দিনাজপুর জেলায় তিনগুণ বেশি জমিতে ইরি বোরো ধান চাষ হবে। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, এ বছর আমন ধানের দাম ভাল পাওয়ায় ইরি বোরো ধানের আবাদ বেশি হবে। দিনাজপুরে ইরি বোরো ধানের মধ্যে হাইব্রিড ও উফসী জাতের ধান বেশি আবাদ হয়। এছাড়াও হিরা-১, হিরা-২, সোনার বাংলা, ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৮১, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৯, ব্রি ১০০ সহ স্থানীয় জাতের কিছু ধান চাষ হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ঘনকুয়াশা ঢাকা ভোর। বাড়ি সংলগ্ন জমিতে ধানের চারা তুলছেন অনেক কৃষক ও পরিবারের শিশু-কিশোররা। পুরুষেরা বস্তার মধ্যে কেউবা ভার-বাকুয়ায় করে ধানের চারা নিয়ে মাঠে যাচ্ছেন। কেউ চাষ দেয়া জমির ঘাস পরিষ্কার করছেন। পরিষ্কার শেষে সারিতে লাগানো হচ্ছে ধানের চারা। হালকা হিমেল বাতাসে দুলছে সদ্য লাগানো ধানের চারা। দোল খাওয়া ধানের চারায় কৃষক দেখছেন আগামীর রঙিন স্বপ্ন। চারা বড় হবে, ফসলে ভরে উঠবে তার ধানের গোলা। কেউ শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে জমি ভিজিয়ে দিচ্ছেন । কেউ কোদাল দিয়ে জমির আইল বেধে দিচ্ছেন। 

কৃষকরা বলছেন, আগাম চারারোপণ করায় ক্ষেতে ফসল ভালো উৎপাদন হয়। আর সারি সারি করে রোপণ করার ফলে পরিচর্যায় স্বস্থি মিলে। এছাড়াও ক্ষেতে রোগ বালাই কম হওয়ায় অন্যান্য ফসল থেকে শতকরা ২০ ভাগ উৎপাদন বেশি হয়। এ বছর কৃষি শ্রমিকের সংকট থাকায় অতিরিক্ত দাম দিয়ে কৃষি শ্রমিকের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হচ্ছে ।  ৩৩ শতক জমিতে ইরি বোরো ধানের চারা রোপন করতে ৯ শত থে ১ হাজার টাকা পারিশ্রমিক প্রদান করতে হচ্ছে ।  

চিরিরবন্দরের নশরতপুর ইউপির দক্ষিণ রানীপুর গ্রামের মোকাররম হোসেন বলেন , এই ফসল দিয়ে পরিবারের খাবারের যোগান দিতে হয়। তাই বোরো মৌসুম এলে সময় মতো রান্না, খাবারের কথা ভুলে যেতে হয়। শুকনো খাবার চিড়া-মুড়ি খেয়ে ভোরে কাজে নামতে হয়। পরিবারের নারীরা শ্রমিকদের সাহায্য করতে মাঠে যান।

একই গ্রামের আমিনুল ইসলাম, বীজ, সার সবকিছুর দাম বেশি। এ বছর ইউরিয়া , পটাশসহ অন্যান্য রাসায়নিক সারের সংকট রয়েছে , বাজাওে সার পাওয়া যায়না ।  শ্রমিকের মজুরিও বেশি। সার ও বীজের দাম সহনীয় হলে ধান চাষ করে আরো লাভ পাওয়া যেত। তবে এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে কারণ আর কয়েকদিন পর সকলেই এক সাথে ইরি বোরো ধানের বীজতলা রোপণ করতে শুর“ করলে শ্রমিক সঙ্কটে পড়তে হবে।

বিরলের বিজোরা গ্রামের কৃষক আমজাদ আলী জানান, ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার মধ্যে সময় মতো চারা রোপণ করতে না পারলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না। তাই চারা রোপণ শুরু করেছি।

কৃষিবিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে শীতে বীজ তলার তেমন ¶তি না হওয়ায় কৃষকেরা বেশ স্বস্থিতে রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি ইরি বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান , দিনাজপুরে এ বছর ১ লাখ ৭৩ হাজার  হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ২ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধানের বেশি চাষ হবে । আশা করা যাচ্ছে এ বছর  ধানের ভাল দামও পাবে চাষীরা ।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com