দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক। বেসরকারি এ অপারেটরটির বিরুদ্ধে কয়েকটি সেবার বিপরীতে মূসক (ভ্যাট) পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে। মূসক পরিশোধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ছয়বার ‘তাগিদপত্র’ দেওয়া হয়, কিন্তু কোনো সাড়া দেয়নি কোম্পানিটি।
এক বছর পার হলেও মূসক পরিশোধ করেনি বাংলালিংক। বাধ্য হয়ে এ মূসক আদায়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শরাণাপন্ন হয়ে এ মূসক আদায়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বিটিআরসি। একই সঙ্গে বাংলালিংককে মূসক সরাসরি এনবিআরে পরিশোধ করে ‘প্রমাণ’ বিটিআরসিতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
করোনার কারণে এতদিন চিঠি দেয়নি এনবিআর। তবে সেই মূসক পরিশোধে ১৫ দিনের সময় দিয়ে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। সম্প্রতি বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) মূল্য সংযোজন কর, কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী এ চিঠি দেন। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিটিআরসির চিঠিতে ‘২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ, সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ), বার্ষিক লাইসেন্স ফি-টুজি, থ্রিজি, ফোরজি এবং স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি-ফোরজি বাবদ বিটিআরসিতে পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে বকেয়া মূসক পরিশোধের তাগাদা’ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি এলটিইউকে এ মূসক আদায়ে চিঠি দেয়।
এলটিইউ’র চিঠিতে বলা হয়, বিটিআরসির চিঠি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ, সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড (এসওএফ), বার্ষিক লাইসেন্স ফি-টুজি, থ্রিজি, ফোরজি এবং স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি-ফোরজি খাতে বিটিআরসি’র বাবদ এআইটিসহ (অগ্রিম আয়কর) মোট ৫৪১ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ২১০ টাকা বাংলালিংক পরিশোধ করেছে। কিন্তু ওই অর্থের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে মূসক ৮১ কোটি ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩২ টাকা পরিশোধ করেনি বাংলালিংক।
উল্লেখ্য- বিটিআরসি কর্তৃক উল্লিখিত বকেয়া মূসক গণনার ক্ষেত্রে এআইটিসহ মোট পরিশোধিত অর্থকে মূসক গণনার ভিত্তিমূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু মূসক গণনার ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্যের মধ্যে এআইটি অন্তর্ভুক্ত হবে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে বকেয়া মূসকের পরিমাণ (এআইটি ব্যতীত পরিশোধিত মোট ৪৮৭ কোটি ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৯ টাকা, যাতে ১৫ শতাংশ হারে মূসক ৭৩ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৭ টাকা। এ মূসক প্রতিষ্ঠানটি এখনও পরিশোধ করেনি।
চিঠিতে বলা হয়, এসব খাতের বিপরীতে প্রযোজ্য বকেয়া মূসক পরিশোধের জন্য বিটিআরসি বাংলালিংককে ছয়বার তাগিদপত্র দিয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৪ আগস্ট প্রথম তাগিদপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি মূসক পরিশোধ করেনি। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর, ১০ অক্টোবর, ১৫ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি, ২৩ ফেব্রুয়ারিসহ মোট ছয়বার তাগিদপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলালিংক বকেয়া মূসক পরিশোধ করেনি।
কমিশনারের চিঠিতে বলা হয়, বকেয়া মূসক পরিশোধ না করায় বিটিআরসি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে জানায়। ডাক ও টেলিযোগাযোগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ষষ্ঠ তাগাদাপত্রের মাধ্যমে বাংলালিংকে উল্লিখিত বকেয়া পাওনার মূসক অতি জরুরি ভিত্তিতে সরাসরি এনবিআরে জমা দিয়ে প্রমাণ বিটিআরসিতে দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ষষ্ঠ তাগাদাপত্রের ক্ষেত্রে বাংলালিংক ও এনবিআরকে কপি দেওয়া হয়। এরই মধ্যে এক বছর অতিক্রান্ত হলেও বকেয়া মূসক পরিশোধ করেনি বাংলালিংক।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বকেয়া মূসক পরিশোধ করতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসির বাংলালিংককে দেওয়া তাগাদাপত্রে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই এনবিআর থেকে বিটিআরসিকে মূসক নিবন্ধনের বিষয়ে জানানো হয়েছে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ধারা ৪ উপধারা ২ অনুযায়ী উৎসে কর্তনকারী সত্তা হিসেবে বিটিআরসি’র মূসক নিবন্ধন গ্রহণের প্রয়োজন নেই।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে কেবল তাদের পাওনা আদায় করবে। মূসক আদায়-সংক্রান্ত বিষয়ে এনবিআর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। প্রতিষ্ঠানকে মূসকের অর্থ সরাসরি এনবিআরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে রেভিনিউ শেয়ারিং ১৫২ কোটি ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩ টাকা। এআইটিসহ ১৬৯ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ৯২ টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক ২৫ কোটি ৪০ লাখ ৯২ হাজার ৫১৪ টাকা। ৯ মাসে স্পেকট্রাম চার্জ ৬৪ কোটি ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ৭৫৩ টাকা।
এআইটিসহ ৭২ কোটি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৬ টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক ১০ কোটি ৮১ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৯ টাকা। ৯ মাসে এসওএফ চার্জ ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৭৫৩ টাকা। এআইটিসহ ২৯ কোটি ৬৫ লাখ ৯৬ হাজার ৩৯২ টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক চার কোটি ৪৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৫৯ টাকা।
টুজি, থ্রিজি, ও ফোরজির ২০১৯-২০ সালের লাইসেন্স ফি ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এআইটিসহ ১৫ কোটি টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা। স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি ফোরজি ২০২০-২১ সালের চার্জ ২৩০ কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। এআইটিসহ চার্জ ২৫৫ কোটি ৮২ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক ৩৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪৪ হাজার ১০০ টাকা। মোট পরিশোধিত চার্জ ৪৮৭ কোটি ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৯ টাকা। এআইটিসহ চার্জ ৫৪১ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ২১০ টাকা। এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক ৮১ কোটি ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩২ টাকা। এর সঙ্গে বিলম্ব ফি ২৮ লাখ আট হাজার ২৭৭ টাকা।
এ বিষয়ে এলটিইউ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিটিআরসি বকেয়া মূসক আদায়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা মূসক আইন অনুযায়ী বকেয়া মূসক পরিশোধে বাংলালিংককে চিঠি দিয়েছি। ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। পরিশোধ না করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট (কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাস্টেইনিবিলিটি) আংকিত সুরেকা বলেন, ‘এনবিআর থেকে আমরা এ ধরনের কোনো চিঠি এখনও পাইনি। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ তবে বিটিআরসি মূসক আদায়ে ছয়টি তাগাদাপত্রের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও অপারেটরটির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com