ভোলায় প্রাপ্ত গ্যাস ভোলার বাসা বাড়িতে সংযোগ সহ ভোলায় শিল্প কারখানা স্থাপনের দাবীতে মানববন্ধন

মোঃ জহিরুল হক, ভোলা || ২০২৩-০১-২৬ ১১:৩৭:৫০

image
ভোলায় একের পর এক গ্যাসের সন্ধান পাওয়ায় নতুন করে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে এ জেলায়। এ খনিজ সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি বাসা বাড়িতে সংযোগ সহ গ্যাসের মাধ্যমে ভোলায় শিল্প কারখানা স্থাপনের দাবী ভোলাবাসীর । একই সঙ্গে গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে কর্মসংস্থান হবে জেলার বেকার যুবকদের। তাই ভোলার গ্যাস ভোলায় রাখতে চান এ জেলার মানুষ। এদিকে ভোলা নর্থ-২ নামে নতুন একটি কূপে ৬২০ বিসিএফ ঘনফুট গ্যাস রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে বাপেক্সের ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ। এ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভোলা নর্থ-২ এর কূপে প্রাপ্ত গ্যাস মাটির ৩ হাজার ৪০০ মিটার নিচে রয়েছে, যা প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এখানে ভবিষ্যতে আরও কূপ খনন হতে পারে। এরই মধ্যে ৮টি কূপ খননের পর ৮টিতেই গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। এছাড়া ইলিশা-১ নামে আরও একটি কূপ খননের অপেক্ষায় রয়েছে। বাপেক্স জানায়, জেলার শাহবাজপুর ও ভোলা নর্থ গ্যাস ক্ষেত্রের সর্বমোট ৮টি কূপে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৫ টিসিএফ ঘনফুট। ৮ম কূপ থেকে প্রতিদিন উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ২০ মিলিয়ন ঘনফুট। একের পর এক গ্যাসের সন্ধান মেলায় সম্ভাবনার দ্বার খুলছে দক্ষিণাঞ্চলের এ জেলাটিতে। গ্যাস নির্ভর কল-কারখানা প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন বিনিয়োগকারীরা। ভোলার গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানা এবং আবাসিক লাইনে ব্যবহারের দাবি ভোলাবাসীর।ভোলা বিসিক শিল্প নগরীর বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং কারখানার মালিক শিল্প উদ্যোক্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, ভোলার গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে এখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা গড়ে তুলতে হবে। যার মাধ্যমে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভোলাসহ দেশের বেকার শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। তিনি আরো বলেন, ভোলার গ্যাস দ্বারা আগে বিসিক শিল্প নগরীতে সংযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি এ ইন্ড্রাষ্টিতে গ্যাসের মাধ্যমে আরো নতুন নতুন কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে সকল মহলকে আরো উৎসাহি করতে হবে, তবেই ভোলার বিসিক আরো সমৃদ্ধ হবে। বিসিকে গ্যাস না থাকার কারণে অনেকেই এখানে শিল্প-ইন্ড্রাষ্টি স্থাপন করতে অনিহা প্রকাশ করছে। শিক্ষক ও সাংবাদিক শরীফ হোসাইন বলেন, ভোলার গ্যাস দ্বারা শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা এবং গৃহস্থালীতে ব্যবহারের জন্য ভোলার প্রতিটি ঘরে ঘরে সংগযোগ দিতে হবে। ভোলার গ্যাস জাতীয় সম্পদ এটা ঠিক আছে, কিন্তু ভোলাবাসী এর সুফল আগে ভোগ করবে, তারপর অন্য চিন্তা। সর্বোপরি ভোলার গ্যাস এর সঠিক ব্যবহারের দাবি জানাই। স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান, মিজান ও মাইনুদ্দিন বলেন, আমরা চাই, গৃহস্থালির কাজে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হোক। ভোলার গ্যাসের মাধ্যমে ভোলার উন্নয়ন সম্ভব। সচেতন মহল মনে করছে, ভোলার গ্যাসের সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হবে। একটি উন্নত সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত হবে ভোলা। বাপেক্স জানিয়েছে, ২০১৮ সালের দিকে ভূ-কম্পন জরিপের মাধ্যমে ভোলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের মাঝিরহাট এলাকায় এ জেলার মধ্যে গ্যাসের ২য় খনির সন্ধান পায় বাপেক্স। সেখানে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমের মাধ্যমে একটি কূপ খননের পর গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নতুন করে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চর পাতাগ্রামে আরেকেটি কূপ খনন করে বাপেক্স। এটি জেলার ৮ নম্বর কূপ। গত ২৩ জানুয়ারি ওই কূপে প্রাথমিক পরীক্ষামূলক উত্তোলনে প্রতিদিন ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে নিশ্চিত করে বাপেক্সের প্রতিনিধি দল। বর্তমানে এ কূপে ৬২০ বিসিএফ গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুরের গ্যাস ক্ষেত্রের পর এটি জেলার ২য় খনি। এ কূপ মাটির সাড়ে ৩ হাজার ফুট তলদেশে ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তুত। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেখানে আরও কূপ খননের পরিকল্পনার কথা জানান ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগের (বাপেক্স) মহাব্যবস্থাপক মো. আলমগীর হোসেন। এর আগে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, আগামী বছরের অক্টোবর মাসে ভোলাসহ দক্ষিণের ১০ জেলায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাপেক্স। আশা করা হচ্ছে, এ জরিপে আরও গ্যাস পাওয়া যাবে। এদিকে ঘরে ঘরে গ্যাস চাই ও গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠার দাবীতে ভোলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঘরে ঘরে গ্যাস চাই আন্দোলন কমিটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারী) বেলা ১১.০০টায় শহরের কে-জাহান মার্কেটের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন, ঘরে ঘরে গ্যাস চাই আন্দোলন কমিটির সভাপতি মুবাশ্বির উল্যাহ চৌধূরী, দৈনিক আজকের ভোলা পত্রিকার সম্পাদক মুহাম্মদ শওকাত হোসেন, ভোলা সদর ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি এইচ এম জাকির, হিউম্যান রাইটস সাধারণ সম্পাদক মোঃ হোসেন, জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি অবিনাশ নন্দি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আবিদ আলম প্রমূখ। বক্তারা বলেন, ভোলায় পর্যাপ্ত গ্যাস মজুদ রয়েছে এবং নর্থ- ২ কূপ থেকে আরও ৬২০ বিসিএফ ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। পর্যাপ্ত পরিমান গ্যাস মজুদ থাকা সত্বেও ভোলায় শতাধিক ইটভাটায়, হোটেল রেস্তোরাঁ এবং গৃহস্থালি কাজে জ্বালানী হিসাবে লাকড়ি ব্যবহার করে দিনে দিনে বনের কাঠ উজার করা হচ্ছে। ঘূর্ণীঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বন আমাদের প্রতিরক্ষা দিচ্ছে। এভাবে জ্বালানি হিসেবে বনের কাঠ ব্যবহার করলে একদিন ভোলার বন উজার হয়ে যাবে, ধ্বংস হবে পরিবেশ । তাই কূপ থেকে উত্তোলিত গ্যাস ভোলার প্রতিটি ঘরে ঘরে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে আমরা ভোলাবাসী স্বাগত জানিয়েছি। সরকার সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির মাধ্যমে ঘরে ঘরে গ্যাস দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করে ৪০ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসিয়ে ইতিমধ্যে ২৩৫০ পরিবারকে গ্যাস সংযোগ দেয়া দিয়েছে। আরও ২০ কিলোমিটার পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের আওতায় এনে ২০০ পরিবারকে সংযোগ দেয়ার নিমিত্তে রাইজার বসিয়েছে এবং আরও ৪০০০ হাজার পরিবারের কাছ থেকে আবেদন জমা নেয়া হলেও কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের কারণে ঘরে ঘরে গ্যাস দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত স্থগিত হয়ে যায়। বক্তারা আরো বলেন, বর্তমানে ভেলাবাসীকে গ্যাস না দিয়ে ভোলার গ্যাস অন্যত্র নেয়ার সিদ্ধান্তে আমরা মর্মাহত হয়েছি। তাছাড়া ভোলা থেকে গ্যাস নিতে হলে ভোলা-বরিশালের ব্রীজ করার দাবী পূরণ করার আশ্বাসের কথা জানিয়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেটাও না করে ভোলার গ্যাস সিলিন্ডারে করে অন্যত্র নেওয়ার সিদ্ধান্তের যুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা জানান বক্তারা। বক্তারা বলেন, সরকারের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগে ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ করে ভোলায় গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে। গ্যাস সমৃদ্ধ ভোলার উন্নয়নে ভোলায় ইপিজেড গড়ে তোলা, মৎস প্রক্রিয়াজাতকরন কারখানা স্থাপন, ভোলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও কলেজগুলোতে জরুরী ভিত্তিতে শুন্য পদ পুরন করা, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা সহ ভোলা-বরিশাল ব্রীজ নির্মাণ করার দাবী জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে শহরে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে। পরে ভোলা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে বোরহানউদ্দিনে প্রথম শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। পর্যায়ক্রমে সেখানে ৫টিসহ জেলার আরও ৪টি স্পটে মোট ৮টি কূপ খনন করে বাপেক্স। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট গ্যাস মজুদের পরিমাণ ১.৫ টিসিএফ ঘটফুট।

Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357

News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com