দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম না মেনে ই-নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক অথবা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের সংশ্লিষ্ট সব উপজেলা পরিদর্শন করে যথাযথ কারণ বের করে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।  এ ছাড়া যেসব সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপযুক্ত কারণ ছাড়া আবেদন নামঞ্জুর করেছেন এবং দায়িত্ব অবহেলা পরিলক্ষিত হলে তা পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে ডিসিদের অনুরোধ করা হয়েছে।

সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ডিসিদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ডিজিটাল ভূমিসেবা সিস্টেমে কিংবা ভূমি অফিসে তথ্য সংরক্ষিত নেই, এমন কোনো ঘাটতি থাকলেই ই-নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করা যাবে না। এ বিষয়টি ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২০২২ সালের ১৭ জুলাইয়ের পরিপত্রে উল্লেখ আছে। সেখানে বলা আছে, নামজারি মামলায় প্রথম আদেশে কোনো দলিলের ঘাটতি থাকলে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সাত কার্যদিবস বা যুক্তিসঙ্গত সময় দিয়ে আবেদনকারীকে দাখিল করতে অনুরোধ জানাতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে তথ্যাদি দাখিল করতে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় আদেশে ই-নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করা যাবে।

চিঠিতে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ই-মিউটেশন মনিটরিং ড্যাশবোর্ডে বিভিন্ন উপজেলার ই-নামজারির আবেদন নামঞ্জুরের আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই পরিপত্রের নির্দেশনা মানা হয়নি। এ ছাড়া কী কারণে আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আদেশে সুনির্দিষ্টভাবে তা উল্লেখ করা হয়নি। ফলে আবেদন নামঞ্জুরের কারণ জানতে পারছেন না আবেদনকারী। এটি ভূমি অফিসের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অন্তরায়।

ডিসিদের দেওয়া চিঠিতে ভূমি মন্ত্রণালয় আরও বলছে, পর্যালোচনায় দেখা গেছে প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকা, ওয়ারিশান সনদ না থাকা, প্রয়োজনীয় দলিল অথবা কাগজপত্র না থাকা, খতিয়ানের মূলকপি কিংবা ফটোকপি অথবা সহি মোহর না দেওয়া, জমির দাখিলা ও হাল দাখিলা প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়া, অস্পষ্ট স্ক্যান কপি দেওয়া, মূল দলিল উপস্থাপন না করা, ডিসিআর ফি পরিশোধ না করা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করা, বণ্টননামা দলিল সংযুক্ত না করাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকক্ষেত্রেই সরাসরি ই-নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে পরিপত্র অনুযায়ী আবেদনকারীকে যুক্তিসঙ্গত সময় দিয়ে তথ্যাদি উপস্থাপনের জন্য সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল।

এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে মালিকানার পক্ষে দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ, জমা ভাগের আবেদন নামঞ্জুর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে, ইউএলএওর প্রতিবেদনমতে আবেদনকারীর আবেদন সঠিক না হওয়াকে কারণ দেখিয়ে সরাসরি ই-নামজারির আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখাতে হতো।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এমতাবস্থায়, পরিপত্রের নির্দেশনামতে কোনো দলিলের ঘাটতি থাকলে সাত কার্যদিবস বা যুক্তিসঙ্গত সময় দিয়ে আবেদনকারীকে দাখিলের জন্য কেন অনুরোধ করা হয়নি এবং ই-নামজারি নামঞ্জুরের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখসহ কেন যথাযথভাবে আদেশ প্রদান করা হয়নি।