শিক্ষা নামক মেরুদন্ডে কি ঘুনে ধরেছে? (পর্ব - ০১)
মাহতাবুর রহমান, আমতলী, বরগুনা ||
২০২২-১২-০২ ১০:২৬:১৪
শিক্ষা ব্যবস্থাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সরকার ও সুশীল সমাজ যখন সোচ্চার ঠিক তখনই কিছু অর্থ লোলুপ শিক্ষক শিক্ষাকে রূপ দিতে চাচ্ছে পণ্যে। শ্রেণীকক্ষে কিছু শিক্ষক যাচ্ছেন যেন কোচিংয়ে আমন্ত্রন জানাতে। শিক্ষকদের কাছ থেকে সু-শিক্ষা প্রাপ্তির কথা থাকলেও কিছু শিক্ষকদের থেকে ছাত্ররা পাচ্ছে বেয়াদবির তালিম বলে অনেকে মন্তব্য করেন। সম্প্রতি বরগুনা জেলার দুটি উপজেলায় শিক্ষক ছাত্রের মধ্যে ঘটেছে দুটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা।
★ প্রথমত
বরগুনার তালতলী উপজেলার নয়াভাইজোড়া বিএনএ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তসলিম স্কুলের শ্রেণীকক্ষে বসে প্রাইভেট পড়ান এবং গত ২৮ নভেম্বর প্রাইভেট পড়ার ফাকে রাব্বি নামক এক ছাত্র দুষ্টমি করায় বেধড়ক মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে বলে অভিযোগ করে ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র রাব্বি। বেতের আঘাত গুরুতর হওয়ায় অন্যান্য শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা রাব্বিকে নিয়ে তালতলী সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেয়। রাব্বি বলেন, আমাকে শিক্ষক তসলিম বেধড়ক ভাবে মারধর করেছে। রাব্বির ভাই শামিম বলেন, রাতে স্কুলে প্রাইভেট পরতে গিয়ে রাব্বি ও তার এক বন্ধুর সাথে কথা কাটাকাটি হয় এজন্য শিক্ষক তসলিম রাব্বিকে বেধড়ক মারধর করেছে। স্থানীয়রা জানান, শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় কোচিং এর জন্য। যদি কেউ তার কাছে কোচিং না করে তাকে শ্রেণীকক্ষে নির্যাতনের পাশাপাশি পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেয়া হয়। পরিক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার ভয়ে ছাত্রছাত্রীরা টাকার বিনিময়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হয়। শিক্ষক তসলিম বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে বসে রাতে কোচিং করায় আর দিনে ক্লাসে অমনোযোগী থাকে। এছাড়াও তার কাছে যারা কোচিং করে না তাদের প্রতি সে অমনোযোগী থাকে। স্থানীয় ইউপি সদস্য সুলতান মিয়ার ছেলে সবুজ বলেন, বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত শিক্ষক তসলিম বাধ্যতামূলক কোচিং করায়। আমরা জানি না কোন আইনে আছে কোচিং না করলে ফেল করানো হবে। আমি একজন ছাত্র অভিভাবক হিসেবে বলতে চাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসকল কোচিং বানিজ্য বন্ধ করা হোক। শিক্ষক তসলিম নির্যাতনের দায় স্বীকার করে বলেন, আমার ভুল হয়েছে। প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, রাতে আমাকে অবহিত করেছে তখন আমি বলেছি এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। পরে আমার প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আমাকে বলেছে আমি বিষয়টি দেখেছি এবং যথাযথ ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে এড়িয়ে যায়। তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেব। তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মো. কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাতে প্রাইভেটের বিষয় আমার জানা নেই। ম্যানেজিং কমিটিকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিয়ে আমায় জানাবে।
শিক্ষক হলেন মহান গুরু
শিক্ষা করেন দান,
কলি কালে শিক্ষাও পণ্য!
বিদ্যালয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান?
★ দ্বিতীয়ত
বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুহুল আমিন স্কুলে বসে প্রাইভেট পড়ান এবং টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারায় ছাত্রদের উপর চড়াও হয়ে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া সহ নানা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগ করেন ৮ম শ্রেনীর ছাত্র মাসুম। ছাত্র মাসুম বলেন, পরিক্ষা দিতে গেলে কেন্দ্রে বসেই মারধর করে হল থেকে বের করে দেন শিক্ষক রুহুল আমিন। ম্যানেজিং কমিটির সিনিয়র সদস্য মোঃ জালাল উদ্দিন মাতুব্বর বলেন , আমি এই বিষয়ে রুহুল আমিনের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আমার সাথে আপত্তিকর আচরণ করে ও আমাকে স্কুল থেকে বের হতে বলেন। শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, মাসুমের সাথে আমার ব্যাক্তিগত কোন শত্রুতা নেই। ওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে তাই স্কুল থেকে টিসি দেয়ার কথা হয়েছে তাই পরিক্ষা নেইনি। প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, ছাত্র মাসুমের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই, তার বাবাকে ফোনে যানানো হয়েছে এই স্কুল থেকে নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। ৩০ নভেম্বর ২০২২ তারিখ আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল বিচারিক আদালতে শিক্ষক রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে ছাত্র মাসুম।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357