কারাবন্দি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ তিনজনের জরিমানার এক কোটি টাকা পরিশোধ
শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর ||
২০২২-১১-২২ ০৬:৩২:৩৬
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯ কোটি টাকা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে দুর্নীতির চেষ্টাকাণ্ডে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের কারাবন্দি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ তিনজনের জরিমানার এক কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় গত ১২ অক্টোবর ২০২২ থেকে কারাগারে থাকা চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খান এখনো স্বপদে বহাল সর্বত্রই বিস্ময় এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
যদিও স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী তিনি আরও আগেই বরখাস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সেলিম খান এখনো চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকায় বিস্মিত স্থানীয় লোকজন। তারা মনে করছেন, প্রভাবশালী চক্র নানামুখী তদ্বিরের মাধ্যমে সেলিম খানকে এখনো চেয়ারম্যানের পদে বহাল রেখেছে।
এদিকে সেলিম খান স্বপদে থেকে কারাগারে অবস্থান করে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগকে পরিষদের স্বার্থের পরিপন্থি এবং প্রশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে সমীচীন নয় বিধায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে সচেতন মহল।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাবিপ্রবি) স্থাপনের জমি অধিগ্রহণে অস্বাভাবিক মূল্য দেখিয়ে জালিয়াতি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছিল সেলিমসহ আরো কয়েকজন।
সরকারের প্রশাসন বিভাগের মাধ্যমে সেলিম খান উক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হাইকোর্টে দুটি রিট পিটিশন করে থাকে। উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন মামলা নং ১১৯৪৭/২১ এবং ১১৯৪৭/২১।
মামলা দুটির শুনানিতে ব্শ্বিবিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণে সুকৌশলে সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দেখানোর বিষয়টি ধরা পড়ে।
উক্ত মামলা দুটির দীর্ঘ শুনানি শেষে উচ্চ আদালত গত ৯ জুন ২০২২ চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাবিপ্রবি) স্থাপনের জমি অধিগ্রহণে সরকারের ৩৬০ কোটি লোপাটের চেষ্টার জন্য রিট আবেদনকারীরা আদালতে জাল ডকুমেন্ট দেওয়ায় এবং আদালতের সময় নষ্ট করায় রিট আবেদনকারী মো. সেলিম খানসহ তিনজনকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। এদের মধ্যে সেলিম খানকে ৫০ লাখ টাকা এবং অপর দুইজন মো: আব্দুল কাদির মিয়া ও জুয়েলকে ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রিট আবেদনকারিদের দুই মাসের মধ্যে এই অর্থ পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাবিপ্রবি) স্থাপনের জমি অধিগ্রহণের জন্য জমির মূল্যহার পরীক্ষা কমিটি গঠন এবং ১৯৪ কোটি টাকার প্রক্কলনের বৈধতা নিয়ে রিট খারিজ রুল ডিসচার্জ করে রায় দেয় হাইকোর্ট।
এদিকে সেলিম খান তার জরিমানার ৫০ লাখ টাকা গত ০৭/০৯/২০২২ তারিখে পে- অর্ডার নং ০৮৬১০৭৮ মূলে, মো: আবদুল কাদির মিয়া তার জরিমানার ২৫ লাখ টাকা গত ০৫/০৯/২০২২ তারিখে পে- অর্ডার নং ০৮৬১০৭৭ মূলে এবং জুয়েল তার জরিমানার ২৫ লাখ টাকা গত ২৪/১০/২০২২ তারিখে পে- অর্ডার নং ০৮৬১০৯৫ মূলে সোনালী ব্যাংক, চাঁদপুর পুরান বাজার শাখায় জমা প্রদান করেন।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উক্ত জরিমানার এক কোটি টাকা গত ১৪/১১/২০২২ খ্রিঃ তারিখে সরকারের জরিমানা ও দন্ড এর ১৪৩১১০১ নং অর্থনৈতিক কোডে জমা দেওয়া হয়।
এবিষয়ে চাঁদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) মোছামৎ রাশেদা আক্তার জানান, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সংক্রান্ত মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশের আলোকে জরিমানার টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
এদিকে উচ্চ আদালতের রায়ে সেলিম খানের জরিমানার টাকা পরিশোধের ফলে নৈতিক স্খলন করণে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিস্কার বা অপসারণের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ইমতিয়াজ হোসেন জানান, স্থানীয় সরকার আইনে এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। সেলিম খানের দুদকের মামলার বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।
এদিকে উচ্চ আদালত কর্তৃক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় কারাগারে থাকা বিতর্কিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
ইতোমধ্যে চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে মামলার সার্টিফাইড কপি পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে অফিসিয়ালি দু’বার চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। মামলার সার্টিফাইড কপি মন্ত্রণালয় না পাওয়ার কারণে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে গত প্রায় দেড় মাস ধরে কারাগারে থেকেও সেলিম খান এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন।
সর্বশেষ ২০ নভেম্বর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসককে দেয়া মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য দায়েরকৃত মামলার সার্টিফাইড কপি প্রেরণের জন্য গত ২ নভেম্বর ৮২৮নং স্মারকে অনুরোধ করা হয়েছিল। বিষয়টি জরুরী হওয়ায় দায়েরকৃত মামলার সার্টিফাইড কপি দ্রুত প্রয়োজন। তাই মামলার সার্টিফাইড কপি দ্রুত প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে সেলিম খানকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গত ১৬ অক্টোবর চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় গত ১২ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সেলিম খানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অপরাধে দুদক কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় এবং অপরাধ আদালত কর্তৃক আমলে নেয়ায় স্থানীয় সরকার আইনের (৩৪)১ ধারা অনুসারে উক্ত চেয়ারম্যান কর্তৃক ক্ষমতা প্রয়োগ পরিষদের স্বার্থের পরিপন্থি এবং প্রশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে সমীচীন নয় বিধায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বলে চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দিয়েছেন জেলা প্রশাসক বরাবর। আর ওই প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357