ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটের সামনে প্রতিদিন সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স। অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া, করোনায় মারা যাওয়া লাশ কিংবা অসুস্থ রোগীর স্বজনরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেটে এলেই এগিয়ে গিয়ে কোথায় যাবেন জানতে চান অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। এরপর ডেকে নিয়ে ভাড়া নির্ধারণ করে লাশ কিংবা রোগীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেন চালকরা। এতে রোগী ও মৃতের স্বজনরা উপকৃত হন।
বিশ্ব এখন করোনার ভয়াল থাবায় স্তব্ধ। বাংলাদেশও করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পায়নি। এরই মধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এ অবস্থায়ও অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগী কিংবা লাশ পৌঁছে দিচ্ছেন। এজন্য প্রশংসা পাচ্ছেন তারা।
মাঝে মধ্যে দেখা যায় উল্টো চিত্র। অনেক অসাধু অ্যাম্বুলেন্স চালক করোনাকে টার্গেট করে লাশ ও রোগীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তিনগুণ টাকা হাতিয়ে নেন। লাশ নিয়ে চোখের পানি ফেলেন অনেক স্বজন। মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে তর্কে-বিতর্কে জড়ান অনেকে। যারা গরিব ও অসহায় তারা নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার জন্য চালকদের অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধ না রেখে করোনাকে পুঁজি করে অসাধু চালকরা দু-তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করেন।
jagonews24
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহের অ্যাম্বুলেন্স চালকরা সিন্ডিকেট করে গাড়ি চালান। করোনাকে টার্গেট করে স্বজনরা রোগী নিয়ে যাওয়ার কথা বললেই মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নেন তারা। যদি কোনো চালক নির্ধারিত ভাড়ায় যেতে রাজি হন তাহলে অন্য চালকরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হন। কারণ তাদের সিন্ডিকেট থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কেউ চাইলেও নির্ধারিত ভাড়ায় যেতে পারবেন না। দু-তিনগুণ বেশি নিয়েই গন্তব্যে যাবেন তারা।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজল চক্রবর্তী (৬৯) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা কেয়ার ইউনিটে মারা যান। স্বজনরা লাশ নিয়ে শ্মশানঘাট যেতে চান। হাসপাতালের সামনে সারিবদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কাছে মৃতের স্বজনরা জানতে চান চরপাড়া থেকে কেওয়াটখালী শ্মশানঘাট যেতে ভাড়া কত। উত্তরে কেউ বলেন পাঁচ হাজার কেউ বলেন ছয় হাজার টাকা। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়া ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ সময় একজন চালক নির্ধারিত ভাড়ায় যেতে রাজি হলে পাঁচ-ছয়জন চালক বাধা দেন।
এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাফরান আহমেদ শুক্রবার (১৭ জুলাই) বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ময়মনসিংহের চরপাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী ও দালালদের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। চরপাড়া থেকে কেওয়াটখালী শ্মশানঘাট যেতে কেউ ভাড়া দাবি করেছেন পাঁচ হাজার আবার কেউ ছয় হাজার টাকা। তাও আবার সিন্ডিকেট করে। একজনকে রাজি করালে পেছন থেকে ১০ জন বাধা দেন। করোনায় মৃতের লাশ হাসপাতাল থেকে কীভাবে নেবে এ বিষয়ে প্রশাসনের আরও আন্তরিক হওয়া দরকার। এটা বাস্তব সত্য করোনা আক্রান্তরা সবদিক দিয়ে অসহায়।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, সরকার স্বাস্থ্যখাতে কোটি কোটি টাকা প্রণোদনা দিচ্ছে। এই টাকা কার পকেটে যাচ্ছে। ময়মনসিংহে করোনা রোগীদের জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলে করোনায় মারা যাওয়া লাশ কিংবা রোগীর স্বজনদের হয়রানির শিকার হতে হতো না।
jagonews24
জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির ময়মনসিংহ বিভাগের সভাপতি ও ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক ময়মনসিংহের মার্কেটিং ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম শহীদ জাগো নিউজকে বলেন, ময়মনসিংহের অধিকাংশ অ্যাম্বুলেন্স চালক সিন্ডিকেট করে গাড়ি চালান। রোগীর স্বজনরা এলে কাল্পনিক ভাড়া দাবি করেন। ফলে কাল্পনিক ভাড়া দিয়েই লাশ কিংবা রোগী নিয়ে যেতে বাধ্য হন স্বজনরা।
বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সভাপতি সেলিম মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, করোনা মহামারিতে মানুষ এমনিতেই ভালো নেই। এমন অমানবিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি এখনও জানি না। এই ক্লান্তিকালে করোনাকে পুঁজি করে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে অ্যাম্বুলেন্স চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগী কিংবা করোনায় মারা যাওয়া লাশের জন্য ময়মনসিংহে সরকারিভাবে কোন অ্যাম্বুলেন্স। তবে করোনায় মারা যাওয়ার পর স্বজনরা যদি লাশ না নেয় তাহলে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে ভাটিকাশর গোরস্থানে দাফন করা হয়। সারাদেশেই অনেক অসাধু অ্যাম্বুলেন্স চালক আছেন। যারা বর্তমানে করোনাকে পুঁজি করে মানুষকে ঠকান। অনেক অ্যাম্বুলেন্স চালককে তিনগুণ ভাড়া না দিলে লাশ পৌঁছে না- এটা বাস্তব সত্য।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357
News & Commercial Office :
Phone: 096 9612 7234 & 096 1175 5298
e-mail: financialpostbd@gmail.com
HAC & Marketing (Advertisement)
Call: 01616 521 297
e-mail: tdfpad@gmail.com