কালিয়াকৈরে ব্যবসায়ীদের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে স্কুলের পরিচালক লাপাত্তা
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি ||
২০২২-০৯-২৬ ০৮:২৭:০৭
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শিক্ষকদের বেতন, ভবন ও গাড়ী ভাড়াসহ বিভিন্ন দোকানে প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির এক পরিচালক লাপাতা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষকদের বেতনসহ প্রায় ১০/১২ জন ব্যবসায়ীর বকেয়া টাকা না দিয়ে গোপনে পারি জমিয়েছেন সূদুর মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই শহরে। এতে চরম হতাশায় ভুগছেন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী শিক্ষক ও ব্যবসায়ীরা।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী শিক্ষক-ব্যবসায়ী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬/৭ বছর আগে কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে তপন মাহমুদ কালিয়াকৈর বাইপাস সাহেববাজার এলাকায় সিরাজুল ইসলামের বহুতল ভবন ভাড়া নেন। পরে তিনি সেখানে টাঙ্গাইল থেকে পরিচালিত রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির একটি শাখা খুলেন। আবাসিক ও অনাবাসিক ভাবে মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করে আসছিলেন ওই স্কুলের পরিচালক তপন মাহমুদ। কিন্তু তিনি পরিকল্পনা মাফিক দীর্ঘদিন ধরে কৌশলে ভবনের ভাড়া প্রায় ২০ লাখ, শিক্ষকের বেতন প্রায় ৩ লাখ, মীম এন্টারপ্রাইজ এর প্রেস ও গাড়ি ভাড়া প্রায় ১২ লাখ, মাখন লাল স্টোরে প্রায় ৫৬ হাজার টাকা, আমজাদের মুরগি দোকানে ৫০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন দোকান ও টেইলার্সে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বকেয়া রাখেন। পরে ওই টাকা না দিয়ে গত মাসে গোপনে সূদুর মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই শহরে পারি জমিয়েছেন ওই স্কুলের পরিচালক তপন। তার লাপাত্তা হওয়ার খবর পেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ওই স্কুলে গেলেও তার ভাই নতুন পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন মনির ও অপর পরিচালক রাকিবুল ইসলাম পাওনাদারদের পাত্তা দিচ্ছেন না। এতে চরম হতাশায় ভুগছেন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগী শিক্ষক ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, আশপাশের বিভিন্ন স্কুলের পরিচালক ও শিক্ষকদের অভিযোগ, রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির এসব শাখার কোনো ইন নাম্বার নেই। তারপরও বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র শাখা খুলে শিক্ষা ব্যবস্থার মান ক্ষুন্ন করছে। কালিয়াকৈর শাখার সাবেক পরিচালক অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হলেও সম্প্রতি চন্দ্রা ত্রিমোড়ে সরকারী স্কুলের পাশে আবার আরেকটি শাখা খোলার পায়তারা করা হচ্ছে। এতে কালিয়াকৈরে শিক্ষা ব্যবস্থার সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মাখন লাল স্টোরের প্রোভাইটার জহর লাল জানান, আমার দোকানের স্কুলের নামে ৫৬ হাজার টাকা বাকী রয়েছে। কিন্তু স্কুলের পরিচালক তপনকে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তার বাবাকে বিষয়টি জানানো হলেও তেমন কোনো আশ্বাস দেননি। গোলাম মোস্তফা লিটন জানান, স্কুলে গাড়ি ভাড়া ও প্রেসের বিল বাবদ ১২ লাখ টাকা পাই। ওই স্কুলের পরিচালককে না পেয়ে গ্রামের বাড়ি গেলেও তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা দিবো, দিচ্ছি বলে বিভিন্ন ভাবে ঘুরাচ্ছেন।
এসব বিষয়ে ওই স্কুলের সাবেক পরিচালক তপন মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা না গেলেও তার ভাই ও ওই স্কুলের নতুন পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন ধীরে ধীরে সবার বকেয়া টাকা পরিশোধ করার কথা জানালেও অপর পরিচালক রাকিবুল ইসলাম জানান, ওই বকেয়া টাকা সাবেক পরিচালকের, এর দায় আমরা নিবো না। তবে স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালার বকেয়া টাকা ধীরে ধীরে পরিশোধের চেষ্টা করবো।
এব্যাপারে রফিকরাজু ক্যাডেট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক মুঠোফোনে জানান, চুক্তি ভিত্তিক শাখা দিয়েছে। এর বাইরে দায়-দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের। এছাড়া বিস্তারিত জানতে হলে আমার টাঙ্গাইল অফিসে আসেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির হোসেন মোল্লা জানান, রফিকরাজু যে কিল্ডার গার্ডেন স্কুল আছে, সেগুলো আমাদের অধীনে নয়। এসব স্কুলের বকেয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া এখতিয়ার আমাদের নেই। এছাড়া এতো অনিয়মের পরও নতুন করে চন্দ্রা এলাকায় কিভাবে আরেকটি শাখা দেয়া হচ্ছে, তার আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, এ ব্যপারে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিব।
Editor & Publisher: S. M. Mesbah Uddin
Published by the Editor from House-45,
Road-3, Section-12, Pallabi, Mirpur
Dhaka-1216, Bangladesh
Call: +01713180024 & 0167 538 3357